বাড়ছে শৌখিন মাছ শিকারী । মোসতাফা সতেজ

0

পাবনার অসংখ্য শৌখিন মানুষ ছিপে মাছ শিকারে প্রবল উৎসাহী। তাদের কাছে ছুটির দিন অবসর বিনোদনের মাধ্যমও বটে। বসন্তকাল থেকেই মাছ শিকারের ধুম পড়ে যায়। বর্ষকাল ভরা মৌসুম। স্থানীয় আগ্রহীরা এ জেলার বাইরেও ছুটে যান। তারা সব সময় মাছ ধরতে পারেন না। তারপরেও তারা খুশি থাকেন শিকারের রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার শিহরণ উপভোগ করে। তাদের মধ্যে রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী উপস্থিত। তবে ব্যবসায়ীয় সংখ্যই বেশি। পুরোনো শিকারীরা অবসর নিয়েছেন। কেউ কেউ গত হয়েছেন। জেলা শহরে ক্রীড়া সরঞ্জামের পাশাপাশি মাছ শিকারের সরঞ্জামও দেদার বেচা-কেনা হচ্ছে। এখানে ছিপে মাছ ধরার সরঞ্জাম তৈরি করার শিল্প গড়ে ওঠেনি। তারপরেও শিকারী বাড়ছে। বড় মাছ ধরার ঋতু হেমন্ত। কার্তিক-অঘ্রাণে বড় মাছ টোপ খায়। বর্ষাকালে বোয়াল শিকার চলে নদীতে।

মেঘলা দিনে ও ভ্যাপসা গরমে মাছ শিকার দূরূহ। শিকারীদের কাছ থেকে আরও জানা গেছে, শিকারের জন্য চরম ধৈর্য দরকার। ফাতনার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। যারা পারেন না তারা সহযোগী নিয়ে যান। পাবনা জেলা মৎস্য শিকারী সমিতিতে ১৩০ জন সদস্য আছেন। এরা বেশির ভাগই নবীন। তৈজসপত্রের দোকানে অত্যাধুনিক বাক্স ও টিফিন কৌটো বিক্রি হচ্ছে। নদী বা পুকুর পাড়ে বসবার জন্যে বিশেষ ধরণের চেয়ার না থাকলেও শতরঞ্চি বা পাটি বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়। পুকুরের পানি পর্যবেক্ষণ এবং তাপমাত্রা জানার জন্যে এক ধরণের থার্মোমিটার ব্যবহার করেন ডিজিটাল শিকারীরা। মৌসুম শুরু হয়ে গেছে বলে চলছে ৪ থেকে ৬ ফুট দৈর্ঘের ছিপ সংগ্রহ। নিজস্ব কায়দায় নিজেদের ফাতনা তৈরি করে নিচ্ছেন। মান সম্পন্ন সুতাও আমদানি হচ্ছে বেশ। অনেকেরই আয়ত্তে আছে মাছ শিকারের কায়দা কানুন। টোপ বানাবার প্রক্রিয়া ও চার বানাবার রীতি-নীতি। তাদের কাছে থেকেই জানা গেছে, টোপ তৈরি করা এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। যা কেউ কাউকে জানাতে চান না। পাউরুটি ছাতু, হাড়িয়া এবং মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে মদও ব্যবহার করা হয়। এটা দু একজন করেন। ঘি এর গাদ, মিষ্টির গাদ, আতপ চালের পোলাও, বড় পিপড়ের ডিম প্রভৃতি।

মাছ শিকারের জন্যে এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ছড়াছড়ি নেই। টেলিস্কোপিক ফোল্ডিং ছিপ, স্লিপিং ক্লাচ, রেফিনিজন অটোকস্ট সিস্টেম হুইলও দুর্লভ। তবে আধুনিক হুইল, ছিপ, বড়শি কিছুটা গতানুগতিক। পোকামাকড়ের টোপ তো সেই আদিকালের। শিকারীর বড়শি থেকে দু একটি মাছ ছুটে গেল বেশ আপশোস উগড়ান। আশ-পাশে আলোচিত হয় ‘দুটা মাছ বড়ই হয়।’ স্তব্ধ নিরিবিলি পুকুর পাড়ে দু একজন মোবাইলে গান বাজায়। শিকারীদের চোখ ফাতনার দিকে। কেউ কেউ নিষ্পলক। পুকুর জুড়ে আকাশ। চারপাশে বাহারি ছাতার ছায়া। সে এক অপরূপ দৃশ্য। যেন সমুদ্র সৈকত। মাছ শিকার নিয়ে নিয়মিত প্রতিযোগিতা আছে। পাশাপাশি দুই একটি পুকুর মালিক খানিকটা প্রতারণা করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। তারা দুদিন আগেই পুকুরে পর্যাপ্ত মৎস্য খাদ্য ঢালেন। এ কারণে মাছ টোপ খেতে চায় না। সারাদিন ফাতনার দিকে তাকিয়ে থেকে সন্ধ্যায় হতাশা হয়ে শিকারীরা ঘরে ফেরেন।

এ জেলায় মাছ ধরা প্রতিযোগিতা লীগ পর্যায়ে হয়েছে বলে শোনা যায় নি। মাছ শিকার প্রশিক্ষণেরও কোন ব্যবস্থা নাই। এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রেও দিক নির্দেশনামূলক নিবন্ধ বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। শিকার উপযোগী আবহাওয়ার কথাও লেখা হয় না। এ সকল সমস্যার কথা শিকারীদের মুখ থেকেই ঝরে পড়ে। জেলা প্রায় ১৭ হাজার পুকুর ছিল। দীঘিও ছিল অর্ধ শতাধিক। এসব এখন স্মৃতি। অনেক-পুকুর দীঘি ভরাট করা হয়েছে। হচ্ছে। এ কারণে মাছ শিকারের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে। শিকারীরা দুটছেন অন্যান্য জেলায়।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.