আগস্টে উড়ালপথে চলবে বৈদ্যুতিক ট্রেন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পরীক্ষামূলক প্রদর্শনের জন্য দেশে প্রথম চালানো হলো স্বপ্নের মেট্রোট্রেন। এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপো এলাকায় মঙ্গলবার ছয়টি বগির সেট নিয়ে ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পথ পাড়ি দেয়। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ- ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেলের ট্রেনটি আগামী আগস্টে ডিপোর বাইরে উড়াল রেলপথে ধাপে ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। এ সময় রাজধানীবাসী উঁচু দালানের ছাদ থেকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের চলাচল দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেল। দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড কোম্পানি- ডিএমটিসিএল মেট্রোরেল প্রকল্পটি হাতে নেয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। এ পথে চলবে ২৪ জোড়া ট্রেন। ট্রেনগুলো যাত্রী তুলবে ও নামাবে ১৭টি স্টেশনে। ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য মতিঝিল ও দিয়াবাড়িতে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। ৪৫ সেকেন্ড পরপর ট্রেন থামবে স্টেশনে স্টেশনে।
তিনি আরও বলেন, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে প্রতিটি ট্রেনের চলার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হবে না। স্টেশনে থামা, বিভিন্ন বাঁকে কম গতিতে চলাসহ সবমিলিয়ে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেনটির যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছাকাছি পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন- ৬ বা প্রথম মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬৪ শতাংশ। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পুরোপুরি এটি চালুর লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে দেশের ইতিহাসে প্রথম মেট্রোরেলের ছয়টি বগির পরীক্ষামূলক চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এ উপলক্ষে ডিপোতে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈদ্যুতিক ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে চালিয়ে কোচ আনলোডিং জোনে আনা হয়। এ সময় এর গতি ছিল ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ট্রেনটি আবার ওয়ার্কশপে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে, ডিপোর একটি স্থানে ট্রেনটি থামানো হলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেনটির ভেতরে ঘুরে দেখেন। ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুতের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো আজ ট্রেন চালানো হলো। আমি শিহরিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সড়কমন্ত্রীর সাহসী উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত ও পুলকিত।
ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে বের হলে উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। জাপানের কাওয়াসাকি কোম্পানি ট্রেনগুলোর নির্মাতা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া একজন চালক ট্রেনটি পরিচালনা করেন। ডিএমটিসিএল জানায়, আগামী আগস্টে ডিপোর বাইরে উড়াল রেলপথে ধাপে ধাপে পারফরম্যান্স টেস্ট করবে ট্রেনটি। প্রথমে সমন্বিত পরীক্ষামূলক চলাচল এবং সর্বশেষে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করা হবে। পরীক্ষামূলক যাত্রার সময় মানুষ উঁচু দালানের ছাদ থেকে কার্যক্রমটি দেখতে পাবেন।
গত ২১ এপ্রিল বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রথম সেটটি জাপান থেকে ঢাকার প্রকল্প এলাকায় আনা হয়। ট্রেনচালক থাকবেন ৫২ জন মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য ট্রেন অপারেটর অর্থাৎ ট্রেনচালক হিসেবে থাকবেন ৫২ জন। এর মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ৩০ জনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ২৫ মার্চ সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১৭টি রেলস্টেশনের জন্য নেওয়া হবে স্টেশন নিয়ন্ত্রক বা ট্রেন কন্ট্রোলার। ৩৫ জনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, আমাদের এ বৈদ্যুতিক ট্রেনের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু সর্বোচ্চ গতিতে এটি চালানো সম্ভব হবে না। স্টেশনে থামা, বিভিন্ন বাঁকে কম গতিতে এটি চলবে। ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ চালক। এ কারণে ধাপে ধাপে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে চালক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। উত্তীর্ণ ৩০ প্রার্থীর মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও নেওয়া হচ্ছে।
মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব : ওবায়দুল কাদের দিয়াবাড়ি ডিপো এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন প্রদর্শন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি জানান, আগামী আগস্ট মাসে ভায়াডাক্টের (উড়াল সেতুর রেলপথ) ওপরের মেইন লাইনে মেট্রোরেলের পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু হবে। পারফরম্যান্স টেস্টের পর ইন্ট্রিগ্রেটেড টেস্ট শেষে ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে।
তিনি আরও জানান, মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আজকের এই প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একই সঙ্গে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল। সেতুমন্ত্রী জানান, ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজ নির্ধারিত সময়ের নয় মাস আগে শেষ হয়েছে। এতে সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ডিপোর পূর্তকাজের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৮ ভাগ। ২০.১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৪.৪১ কিলোমিটারের ইরেকশন (নির্মাণ) সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ট্রেনের সেটও গত ৯ মে মোংলা সমুদ্র বন্দরে পৌঁছেছে।
মন্ত্রী আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৫ ভাগ, দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি শতকরা ৬০ ভাগ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি শতকরা ৫৫ ভাগ। দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগ— জানান ওবায়দুল কাদের।