রোজিনাকাণ্ড: টার্গেট কী চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিন ?
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন সংকট দেখা দিয়েছে। হাতে গোণা কয়েকটি দেশ এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের ছাড়পত্র পাওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের কূটনীতি ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এটি। ক্ষমতাবান বিশেষ একটি দেশ এই ভ্যাকসিন অন্য রাষ্ট্রগুলোকে না দিয়ে স্টক করতে শুরু করেছে। ফলে বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অভস্থাও এখন নাগালের বাইরে। এমন একটা সময়েও বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে করোনার প্রথম দুটি ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। এমনকি করোনার আসন্ন তৃতীয় আঘাত থেকে দেশবাসীতে রক্ষার জন্য. সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগে ব্যাপক পরিসরে টিকা আমদানির প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন সংকটের এই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের এই ভ্যাকসিন-কূটনীতির সাফল্য মেনে নিতে পারছে না উন্নত বিশ্বের ক্ষমতাধর একটি রাষ্ট্র। তাই তারা বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়ার নিশ্চয়তাকে ভণ্ডুল করে দিতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
ফলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ক চুক্তি হওয়ার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বিশেষ ওই দেশটির এদেশীয় এজেন্টরা। তারা চাচ্ছে, ভ্যাকসিন আমদানির প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে বাংলাদেশকে করোনার ভয়াল গ্রাসের মুখে ঠেলে দিতে। এ কারণেই রাশিয়া ও চীন থেকে ভ্যাকসিন আমদানির সব সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। এমনকি জনগণের জন্য ভ্যাকসিন আনার সম্ভাবনা নষ্ট করে, বাংলাদেশে লাশের মিছিল সৃষ্টি করে, দেশের সরকার ও সার্বভৌমত্বের ওপরেও আঘাত হানার অপচেষ্টায় আছে এই কুচক্রী মহলটি।
এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্প্রতি মাঠে নেমেছে বিশেষ ওই দেশের ঘনিষ্ঠ মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলো। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন-প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য গোপনীয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ফাঁস করে দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্র বিপদে ফেলতে চেয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গোপনে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ক চুক্তির নথি চুরি করেছিলেন তিনি। হাতেনাতে ধরা পড়ার পর নিজের ভুল স্বীকার করে সটকে পড়ার চেষ্টাও করেন রোজিনা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্যক্তিগতভাবে সমঝোতার সুযোগ না থাকায় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। এরপর এটাকে ইস্যু বানিয়ে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী উস্কানি সৃষ্টি করে প্রথম আলো গং।
কেন এই চুক্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপনীয় এবং কেন তা ফাঁস করার ষড়যন্ত্র
শুরুতে তুমুল জনসচেতনতা সৃষ্টি করে করোনার প্রথম থাবা রুখে দেয় বাংলাদেশ। এরপর ভ্যাকসিন আবিস্কারের পরপরই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে টেক্কা দিয়ে জনগণকে ভ্যাকসিন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতায় প্রথমেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে এক কোটির বেশি ভ্যাকসিন আনা সম্ভব হয়। দেশজুড়ে করোনা মোকাবিলার জন্য এই ভ্যাকসিনগুলো দিয়ে ফ্রন্টলাইনারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর দেশের সর্বস্তরের নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু এমন একটা সময়ে ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াল আকার ধারণ করে। ফলে নিজের দেশের নাগরিকদের প্রাণ বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে, সাময়িকভাবে ভ্যাকসিন রফতানি করা বন্ধ করে দেয় ভারত।
এদিকে বিশেষ একটি দেশের কাছে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন থাকার পরেও, দেশটি অন্য দেশগুলোর পাশে না দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ভ্যাকসিন স্টক করছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কূটনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে রাশিয়া ও চীন থেকে ভ্যাকসিন আমদানির চুক্তি করে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্কের কারণে অন্য অনেক দেশকে ডিঙিয়ে বাংলাদেশকে এই ভ্যাকসিন দিতে রাজি হয় দেশ দুটি। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন বাণিজ্যের চুক্তিটিকে তারা গোপনীয় হিসেবে অভিহিত করে। রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশকে কী পরিমাণ ভ্যাকসিন দেবে, কবে নাগাদ কতোটি চালানের মাধ্যমে দেবে, কীভাবে পাঠাবে, দরদাম, এমনকি দ্রুততার সঙ্গে করোনার ভয়ানক তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় তারা কীভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে; এসব বিষয়ে দেশ দুটির সঙ্গে পৃথকভাবে দুটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয় বাংলাদেশের। এটি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের জায়গা থেকে একটি বন্ধুত্বমূলক বাণিজ্যিক চুক্তি হওয়ায় তারা এসব বিষয় শুধু দুই পক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার শর্ত দেয়। তা জানার পর, এই গোপনীয়তা নষ্টের মিশনে নামে প্রথম আলো এবং রোজিনা ইসলাম।
যে কারণে অ্যাসাইন করা হয়েছিল রোজিনাকে কারণ অন্য একটি বিশেষ দেশ থেকে আরো চড়া দামে ভ্যাকসিন আমদানির পথ প্রস্তুত করছিল এই মহলটি। এমনকি তাদের সমর্থনপুষ্টদের মাধ্যমে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে, দীর্ঘ কালক্ষেপণের অজুহাতে, দেশের সাধারণ মানুষকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ফেলার পরিকল্পনাও করছিল তারা। তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন ছিল রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মৈত্রী ও বিশ্বাসের সম্পর্কে ফাঁটল ধরানো। এজন্য দেশদুটির দেওয়া গোপনীয়তার শর্ত ভঙ্গ করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিপদে ফেলার জাল বুনছিল তারা। বিশেষ ওই রাষ্ট্রের হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম আলো নিয়োগ করে রোজিনা ইসলামকে।
রোজিনা ইসলামকে সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে নথি ফাঁস করার দায়িত্ব দেওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। অন্যতম একটি কারণ হরো- রোজিনার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইমেজ। এর আগে, এই ইমেজ ব্যবহার করে করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা আদায় করেছেন রোজিনা। সিএমএসডি থেকে কার্যাদেশ নিয়ে তার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাস্ক, পিপিই এবং জরুরি সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে এই টাকা নেন তিনি। বিষয়টি প্রথম আলো অফিসের জানা ছিল। যেহেতু রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, সেজন্য তাকে দিয়েই এই গুরুত্বপূর্ণ মিশন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় প্রথম আলো চক্র। ফলে নিজের পরিবারের দুর্নীতি ঢাকতে রোজিনাও স্বেচ্ছায় এই মিশন বাস্তবায়নে রাজি হয়ে যান। এছাড়াও ওই বিশেষ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নির্দেশনায় ইতোপূর্বে রোজিনাও একাধিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। ফলে রাশিয়া-চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি বাতিল হলে, নতুন করে নিজেদের মতো করে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ ছিল রোজিনার সামনেও।