করোনা চিকিৎসায় জরুরী প্রয়োজন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন : সিভিল সার্জন পাবনা
নিজস্ব প্রতিনিধি : মহাপ্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস, টিকা প্রদান, প্রতিরোধ ও জেলার সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সোমবার দৈনিক যায়যায়দিনের মুখোমুখি হয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বললেন, আমি কয়েকদিন হলো এ জেলার সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পেয়েছি। কাগজপত্রের আলোকে এ জেলায় দুই দফায় সোয়া লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বরাদ্দ এসেছিল। বরাদ্দকৃত টিকার মধ্যে গত ২০ মে পর্যন্ত ৮০ হাজার ২৪৪ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। একই সময়ে ৪৫ হাজার ৮৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়। আকস্মিকভাবে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ৩৫ হাজার ১৫৮ জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি।
সিভিল সার্জন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পাবনায় করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ২৮৪ জন করোনার টিকা নেয়ার জন্য সরকারি ভাবে রেজিষ্ট্রেশন করেন। এর মধ্যে ৮০ হাজার ২৪৪ জন প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করে। বরাদ্দকৃত টিকার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ২১ মে থেকে করোনার টিকা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন টিকা আসার পর আবার টিকার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
সিভিল সার্জন বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য ৭৬ হাজার ১৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফল পাওয়া যায় প্রায় ৭৬ হাজার ১১২ জনের। পজিটিভ এসেছে ৩ হাজার ৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৫২ জন। হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি রয়েছে ৬২ জন। করোনায় এ পর্যন্ত পাবনায় মারা গেছে ২২ জন। সংক্রমণের হার ৪.০৭ শতাংশ। সুস্থ্য ৯৮.৪৮ শতাংশ আর মৃত্যুর হার দশমিক ৭১ শতাংশ।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার চেয়ে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সার্ভিস জরুরী হয়ে গেছে। পরীক্ষা যখন তখনই করা সম্ভব, কিন্তু যারা আক্রান্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কার্যক্রম চালু জরুরী হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যারা প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন, তারা সবাই ভারতীয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। ভারতীয় টিকা পাওয়া এখন অনিশ্চিত। নতুন করে যে টিকা বরাদ্দ হবে সেগুলো চীনের টিকা। ফলে যারা ভারতীয় টিকা প্রথম ডোজ হিসেবে প্রহণ করেছেন, তাদের চীনের টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় বঞ্চিতদের ভারতীয় টিকা আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, নতুন টিকার বরাদ্দ পাওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধিত প্রথম ডোজ বাদ পড়াদের টিকা দেয়া হবে। টিকা কার্যক্রম শুরুর পর প্রথমদিকে টিকা নেয়ার ব্যাপারে অনেকেই অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় পরে অনেকেই টিকা নিতে কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভীড় শুরু করেন।
সিভিল সার্জন করোনা মহাামারী নিয়ে বলেন, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও রাজশাহীতে সংক্রমণের হার বেশি। সে তুলনায় পাবনাতে এখনও করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো দাবী করেন তিনি। পাবনার এই সন্তোষজনক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তবেই পরিস্থিতি ভাল রাখা সম্ভব। যারা এখনও টিকা নেয়ার সুযোগ পায়নি তাদেরকে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। সেই সাথে যারা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের আতংকিত না হয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
সিভিল সার্জন ডা. মনিসর বলেন, পিসিআর ল্যাব স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার। ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত সকল কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার ইতোমধ্যে কাজ হস্তান্তরও করেছেন। দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই মেশিন চলে আসবে। স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে তিনি বলেন, হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের দুটি আবাসনের মধ্যে একটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটা প্রক্রিয়াধীন। আগামি এক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্লান্টের কাজ সম্পন্ন হবে বলে দাবী করেন সিভিল সার্জন।
তিনি আরও বলেন, পাবনার ৯ উপজেলায় যে পরিমান রোগী প্রতিদিন ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আসছেন। সে তুলনায় রোগী ভর্তির আবাসন দেওয়া বা চিকিৎসা সেবা দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ৫০০ শয্যার পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কার্যক্রম চালুর দাবী জানান।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে করোনা প্রতিরোধে জরুরী বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে করোনা প্রতিরোধে প্রচার প্রচারণা চলছে।
তিনি বলেন, শহরের মানুষগুলোর মধ্যে মাস্ক পড়ার প্রবণতা থাকলেও গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে মাস্ক পড়া নিয়ে অনিহা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবুও মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তিনি জরুরী নিজ নিজ নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দাবী করে করোনা সংক্রমণ রোধে উদ্যোগী হতে হবে।