নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ভবিষ্যতে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছে সরকার। আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেই ঝুঁকছে। বাংলাদেশও এদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

জানা গেছে, উন্নত দেশগুলো এখন কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করছে। অনেক দেশই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা এখন জলবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য গ্রিন এনার্জির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া অবস্থা এবং অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দেশই এখন বায়ুবিদ্যুৎ, ওশান রিনিউবল এনার্জি, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এগুলো সবই পরিবেশবান্ধব ‘পাওয়ার সিস্টেম’। দেরিতে হলেও এখন বাংলাদেশ টেকসই পাওয়ার সিস্টেমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ লক্ষ্যে কিছু দিন আগে চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় ১৬ মেগাওয়াট রুফটপ সোলার পাওয়ারের উদ্বোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই টেকনাফ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে ৭৩০ দশমিক ৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অনেক জমি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব স্থানে অব্যবহৃত পতিত জমি রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে সৌর প্রকল্প স্থাপনের ব্যাপারে কাজ চলছে। এছাড়া অনেক পতিত জলাশয় ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পতিত জলাশয়ে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কাজও চলছে। অন্যদিকে জমি কম লাগে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল এবং জ্বালানি দক্ষতা অর্জন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়েছে। তারা ক্লিন ও গ্রিন জ্বালানির উৎপাদন উত্তরোত্তর বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বল্প জমিতে বেশি পরিমাণ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার ওপরেও গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানিই হবে আগামী দিনের মূল জ্বালানি। তিনি বলেন, আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দেশে ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ গ্রামীণ জনগণকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু জমির স্বল্পতার কারণে বড় ধরনের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও আমরা পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন গোলটেবিল বৈঠকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনে রুফটপ সোলার পাওয়ার উৎপাদনে সবাইকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউটেড জেনারেশনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য ‘নেট মিটারিং’ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে একজন বিদ্যুৎ গ্রাহক তার নিজ স্থাপনায় স্থাপিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক সিস্টেমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজে ব্যবহারের পর উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিতরণ গ্রিডে সরবরাহ করতে পারছে। এভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরবর্তী মাসের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচ বহুগুণ সাশ্রয়ী হয়। এতে সরকার ও গ্রাহক উভয়েই লাভবান হয়।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.