সম্পদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্পদের প্রতি মোহ । গৌতম কুমার বিশ্বাস
ভালোবাসা সর্বদা পবিত্র ।তারমধ্যে একটা শুদ্ধ শুদ্ধ ভাব আছে। ভালোবেসে মানুষ ঘর ছাড়ে, ভিখারি হয় এমনকি পাগলও হয়। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে ক্ষতি করার কথা চিন্তাও করেনা। কিন্তু মোহ ক্ষণিকের , সর্বগ্রাসী। আকাঙ্খার তীব্র রূপ মোহ। আমাকে পেতেই হবে, যেভাবেই হোক, যে রূপেই হোক। ছিনেয়ে নিতে হবে, হনন করে হলেও।
পুলিশি ভাষায় যতগুলো অপরাধ আছে তার নিরানব্বই ভাগই তিন কারনে- সম্পদ, মদ আর নারী। কোননা কোন ভাবে প্রতিটি অপরাধের কারণ খুঁজতে গেলে এই তিনটির এক বা একাধিক উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়। সম্পদের প্রতি ভালোবাসা থাকলে মানুষ কৃপণ হতে পারে বা জীবনের প্রয়োজন বুঝে খরচ করতে পারে। সম্পদের প্রতি ভালোবাসায় মানুষ নিজের যা আছে তাই নিয়েই সুখে থাকতে চায়, তাতেই তার সুখ, তাতেই তার তৃপ্তি। তার কাছে তার প্রয়োজনের মূল্য অনেক বেশী , চাওয়া বা বিলাসীতার নয়।
অপরের কি আছে তা নিয়ে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অপরের বিলাসিতা দেখেও তার কোন বিকার নেই। অপরের দামি গাড়ি তাকে টানে না, নিজের বাই-সাইকেলটাকে সে সজতনে রাখে। কিন্তু মোহ কৃষ্ণ গহ্বরের মত। আরো চাই, আরো চাই। পাওয়াতে সাময়িক তৃপ্তি। প্রতিবার ভাত খাওয়ার মত। তৃপ্তির ঢেকুর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না। একটু পরেই আবার নতুন ক্ষুধা। মোহগ্রস্থ হলে নিজের সবকিছুকেই তুচ্ছ মনে হয়। দৃষ্টি ঊর্ধ্মুখি হয়। পদতলের মাটিকে ভুলে যায়। ভালোবাসা, মানবিকতা, বিবেককে হত্যা করে শুধু পাওয়ার আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। হৃদয় পাষাণ হয়। ষড় রিপুর রাজত্ব প্রবলতর হয়।
মোহ অন্তঃমুখি স্রোত। কিন্তু ভালোবাসা শান্ত। দখিণা হাওয়ায় উপরিভাগ ঢেউ খেলে বটে, কিন্তু দৃঢ় স্থিতিস্থাপকতার জন্য আবার শান্ত হয়ে যায়। মোহের কুলকুল ধ্বনি পাখীর কুহুতানকে শুনতে দেয়না , একফোটা শিশির বিন্দুর টুপ শব্দকে বিলীন করে দেয়। কিন্তু ভালোবাসার দিঘীতে পিঁপড়ার পদ সঞ্চালনও উপলব্ধি করা যায়, তা উপভোগও করা যায়।
———ময়মনসিংহ, ২৮/০৮/২০২১।
লেখক : পুলিশ সুপার – পিবিআই, ময়মনসিংহ ।