বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশন’র “গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড ২০২১” পেলেন বাংলাদেশের ফাইরুজ ফাইজা বিথার

একই সঙ্গে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন আরও তিনজনকে গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল অ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রদান করেছে ফাউন্ডেশনটি

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশন (বিএমজিএফ) আজ ‘মনের স্কুল’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের ফাইরুজ ফাইজা বিথার’কে “গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১” এর বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ‘২০২১ চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত বাংলাদেশের ফাইরুজ ফাইজা বিথার পরিবর্তন আনার অনুপ্রেরণায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং নেতৃত্বের জায়গায় থেকে ‘সুস্বাস্থ্য এবং মানুষের ভালো থাকা’র জন্য নিরলস কাজ (যা এসডিজি এর ৩ নং গোল অর্জনে সহায়ক) করে যাচ্ছেন। আর তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে “গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১” সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

বিথার ‘মনের স্কুল’ নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছে। দেশব্যাপী মানসিক চিকিৎসার সমানাধিকার সুনিশ্চিত করাও তাদের কাজের উল্লেখযোগ্য বিষয়। একই সঙ্গে বিএমজিএফ ফাউন্ডেশনের বার্ষিক গোলকিপার্স ক্যাইম্পেনের অংশ হিসেবে “গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল অ্যাওয়ার্ড” এর জন্য আরও তিনজন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

‘২০২১ গ্লোবাল গোলকিপার্স অ্যাওয়ার্ড’র বিজয়ী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের নারী শাখার প্রাক্তন আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফুমজিলে মলাম্বো নকুকা’কে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণ, বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান এবং নারীদের উপর অতিমারির প্রভাব নিয়ে ক্রমাগত সচেষ্ট হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে এবছর মলাম্বো নকুকা’কে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ডেপুটি প্রেসিডেন্ট মলাম্বো নকুকা সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি আজীবন বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন। জাতিসংঘের নারী শাখায় এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর থাকাকালীন তিনি সরকার, পুরুষ সহযোগী এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও জোরালো করেছেন। এর ফলে এসডিজি -৫ (লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন) কে পূর্ণতা দেওয়ার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও জেনারেশন ইকুয়ালিটি ফোরাম-২০২১ সফল করতে মলাম্বো নকুকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে মহিলাদের অবস্থার উন্নতির জন্য সদস্য দেশ, বেসরকারি উদ্যোগ, জনসেবামূলক সংস্থা এবং সামাজিক সমিতি থেকে ৪০০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেট্স বলেন, “অতিমারির জেরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এই বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন জাতিসংঘের প্রাক্তন আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ফুমজিলে মলাম্বো নকুকা। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় স্তরের সমস্ত উদ্যোগে নারীদের প্রতি হওয়া বৈষম্য দূর করার প্রসঙ্গও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমনটা সম্ভব হয়েছে ফুমজিলে মলাম্বো নকুকার সৌজন্যেই। সারা বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এমন নেতৃত্বেরই প্রয়োজন।”

এ বছর অন্য দুটি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে কলম্বিয়ার জেনিফার কলপাস এবং লাইবেরিয়ার সাট্টা শেরিফকে। গ্লোবাল গোলস’কে পূর্ণতা দিতে তারা প্রত্যেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই সম্মান তাদের সেই কাজের স্বীকৃতি।

এরমধ্যে কলম্বিয়ার জেনিফার কলপাসকে দেয়া হয়েছে “২০২১ প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড”। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ডিজিটাল অথবা কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে যারা কাজ করছেন এই পুরস্কার মূলত তাদের জন্য। জেনিফার কলপাস মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার কাজ (এসডিজি-৬) করছেন। টিয়েরা গ্রাটা নামক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেনিফার কলপাস। এই সংস্থার কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে রয়েছে কলম্বিয়ার নানা গ্রামাঞ্চলে। সংস্থাটি কম খরচের এবং ইজি-টু-ইনস্টল সামগ্রী তৈরি করে যার মাধ্যমে দূষণহীন জ্বালানি, নিরাপদ পানি এবং মানসম্মত স্যানিটেশন সেবা অনায়াসে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে কাজের (এসজিডি -৫) জন্য “২০২১ ক্যাম্পেইন অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয়েছে লাইবেরিয়ার সাট্টা শেরিফ’কে। এ স্বীকৃতি দেওয়া হয় এমন কোনো প্রচারাভিযানের জন্য যা, সচেতনতা বাড়িয়েছে অথবা কোনো গোষ্ঠীকে নতুন কিছু করার, পরিবর্তন আনার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সাট্টা শেরিফ অ্যাকশন ফর জাস্টিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট্স (এজেএইচআর) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। যুবকদের নিয়ে তৈরি এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লাইবেরিয়ায় মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে কাজ করে। এই সংস্থাটির কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মহিলাদের সাহায্য করা।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেট্স বলেন, “বিশ্বের সর্বত্র চলমান বৈষম্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। তবে এই প্রতিকূলতার মধ্যেও যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, এই চার মহিয়সী নারী তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।”

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশনের সিইও মার্ক স্যুজম্যান বলেন, “নারীরা কীভাবে উদ্ভাবনী উপায়ে আমাদের সমাজ এবং দেশগুলির পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এই পুরস্কারের বিজয়ীরা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আরও সুন্দর ও বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়তে, বিশ্বব্যাপী মানসিক সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবারের বিজয়ীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তাদের কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।”

গত সপ্তাহে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশনের ‘পঞ্চম বার্ষিক গোলকিপার্স প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ গোলকিপার্স গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডস-এর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হল। বিল গেট্স এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেট্স যৌথভাবে এ বছরের প্রতিবেদনটি লেখেন। কোভিড-১৯ সমাজে যে অসম প্রভাব ফেলেছে তা উঠে এসেছে বার্ষিক গোলকিপার্স রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই অতিমারিতে যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেও সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে। তবে আশার কথা হল বিশ্বের মানুষ এই ধ্বংসলীলার মোকাবিলা করেছেন বলেই আরও খারাপ কিছু হওয়া আটকানো গেছে। এই রিপোর্টের প্রণেতারা “যুগান্তকারী উদ্ভাবনের” কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বহু দশক ধরে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা, প্রতিশ্রুতিপূরণ এবং বিনিয়োগের ফলেই যা সম্ভব হয়েছে বলে তাঁদের মত। যদিও তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে খুব খারাপ কিছু হওয়া আটকানো গেলেও তা যথেষ্ট নয়। সার্বিকভাবে অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে তাঁরা স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ডাক দিয়েছেন। ঠিক যেভাবে খুব দ্রুততার সঙ্গে কোভিড-১৯ এর টিকা তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। একমাত্র এভাবেই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের পথে বিশ্বকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

গোলকিপার্স গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডস-এর বিজয়ীদের জীবনী, ছবি এবং ফিল্ম ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে: www.gatesfoundation.org/goalkeepers/about-event/awards

প্রোজেক্ট এভরিওয়ান, গোলকিপার্স-এর সহ নির্মাতা এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লেখক, পরিচালক এবং এসডিজি সমর্থক রিচার্ড কার্টিস। তাঁর লক্ষ্য ছিল সচেতনতা বৃদ্ধি, নেতাদের দায়বদ্ধতা এবং কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে গ্লোবাল গোলস পূরণ করা।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: www.project-everyone.org।

বিল ও মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশন সম্পর্কে: প্রতিটি জীবনের সমান মূল্য রয়েছে, এই বিশ্বাসকে মূলমন্ত্র করেই বিল ও মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশন সমস্ত মানুষকে স্বাস্থ্যকর, কার্যকর জীবনধারণে সহায়তা করতে কাজ করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠান উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মানুষের স্বাস্থ্যোন্নতি এবং তাদের ক্ষুধা ও অতি-দারিদ্র দূরীকরণের সুযোগ করে দেওয়ার কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাঁদের কাছে সম্পদ এবং সুযোগ অপ্রতুল তাঁরাও যাতে স্কুল এবং জীবনে সফল হওয়ার সুযোগ পান, সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতেও উদ্যোগী এই প্রতিষ্ঠান। ওয়াশিংটনের সিয়াট্লে অবস্থিত এই ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে আছেন সিইও সিউ মার্ক সুজম্যান। তাঁর পথপ্রদর্শক হিসেবে রয়েছেন বিল গেট্স এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেট্স।

গোলকিপার্স সম্পর্কে: গোলকিপার্স হল টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে (গ্লোবাল গোল্স) এই প্রতিষ্ঠানের প্রচারাভিযান। বার্ষিক এক রিপোর্টের মধ্যে দিয়ে সমগ্র বিশ্বে লক্ষ্যপূরণের নেপথ্যের বিভিন্ন গল্প এবং পরিসংখ্যান আমরা তুলে ধরি। আমাদের আশা যে এর মাধ্যমে আমরা নেতৃস্থানীয় মানুষদের একটা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারব – সেই সমস্ত গোলকিপার্স যাঁরা অগ্রগতি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলবেন, যাঁরা দায়িত্বশীল হবেন এবং বিশ্বজুড়ে লক্ষ্য পূরণের কাজকে চালনা করবেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য সম্পর্কে: ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে ১৯৩ জন রাষ্ট্রনেতা টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৭টি লক্ষ্যের (গ্লোবাল গোল্স) অঙ্গীকার করেছিলেন। দারিদ্র দূরীকরণ, অসাম্য এবং অবিচারের সঙ্গে লড়াই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধান – ২০৩০ সালের মধ্যে এই তিনটি অসাধ্য সাধনের লক্ষ্যে এগুলি একটি ধারাবাহিক এবং উচ্চাকাঙ্খী প্রচেষ্টা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.