৪০ হাজার কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকান্ডের পর সরকারের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ৪০ হাজারের বেশি কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরিদর্শন শুরু হবে। তবে এ পরিদর্শন কার্যক্রমে পুরান ঢাকার কোনো কারখানা টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব।

আবু মোতালেব বলেন, ‘পুরান ঢাকার কারখানাগুলোর কমপস্নায়েন্স নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। কারণ, ঘিঞ্জি এলাকা। আমরা চৌবাচ্চায় পানি আর বালতিতে বালু দিয়ে সেমি কমপস্নায়েন্স করার চেষ্টা করছি।’ কারখানা পরিদর্শনের চেক লিস্টের দিকে ইঙ্গিত করে পুরান ঢাকার এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এভাবে পরিদর্শন হলে কেউ টিকবে না। করোনায় সরকারের দেওয়া প্রণোদনা আমরা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা পাইনি। দোকান ভাড়া ও শ্রমিকদের বেতন দিতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে বিডার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে সম্মিলিত টিম কর্তৃক শিল্পকারখানা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের পদ্ধতি এবং চেক লিস্ট নিয়ে ব্রিফিংয়ে বুধবার এসব কথা বলেন সংগঠনটির পরিচালক আবু মোতালেব। এতে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এম এ মোমেন।

পরিদর্শনের পরিবর্তে পুরান ঢাকার পস্নাস্টিক ও কেমিক্যাল কারখানা পরিকল্পিত পলস্নীতে নিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আবু মোতালেব। তিনি বলেন, ৩০ বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি মামলার কারণে পুরান ঢাকার কারখানাগুলো এ দপ্তরের ছাড়পত্র পায় না। নিমতলীর ঘটনার পর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল। গত ১৪-১৫ বছরে সেটি হয়নি। আবার চকবাজারের ঘটনার পর পস্নাস্টিক, কেমিক্যাল ও প্যাকেজিং কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

পস্নাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ জানান, বিডার এ পরিদর্শনে বেসরকারি খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি আগে মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ, পরিদর্শন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তিনি বলেন, পরিদর্শন কার্যক্রম ধাপে ধাপে করা দরকার। আগে বড় কারখানা পরিদর্শনের পর ছোট কারখানা ধরতে হবে। সবার আগে পরীক্ষামূলক পরিদর্শন করার পর সেটি মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

অবশ্য বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী ব্যবসায়ীদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যারা কমপস্নায়েন্স কারখানা করেছেন, তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে যারা করেননি, তাদের মানতে পরামর্শ দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটিকে পরিদর্শন না বলে জরিপ বা নিরীক্ষা ভাবতে পারেন। বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা সব ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। পুরো কাজটি করার জন্য ১০৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাভিত্তিক এ কমিটির প্রতিটিতে এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি থাকবেন।’

বিডার নেতৃত্বে পরিদর্শন কার্যক্রমকে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এটি পুলিশিং নয়। ভয়ভীতির কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকান্ডের পর রপ্তানিমুখী নয়, এমন শিল্পকারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্বলতা কাটিতে উঠতে কারখানাগুলোকে সময় দেওয়া হবে। এ জন্য যাদের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হবে, সেই পরিকল্পনাও হচ্ছে।

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সারা দেশে যেসব খাতের কারখানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোই পরিদর্শন করা হবে। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকে বাদ দিয়ে সারাদেশে ৩২ খাতের ৪১ হাজার ৬০৪টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার কারখানা পরিদর্শন করা হবে। পরবর্তী সময়ে ধাপে অন্য কারখানাগুলোও পরিদর্শন করা হবে। এসব কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে কি না, থাকলে সেটি কার্যকর কি না, ফায়ার অ্যালার্ম ঠিক আছে কি না, নিরাপদে কারখানা থেকে বের হওয়ার পথ আছে কি না এসব বিষয় দেখা হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.