প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভের সাক্ষাৎ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রুশ রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ আজ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে রসাটম ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। লিখাচোভ গতকাল ১০ অক্টোবর এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসেন।
মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে রিয়্যরক্টর প্রেসার ভেসেল (আরপিভি) স্থাপনের কার্যক্রম উপলক্ষ্যে রসাটম মহাপরিচালক বাংলাদেশ সফর করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আলেক্সি লিখাচোভ গতকাল সকালে যৌথভাবে রিয়্যাক্টর প্রেসাল ভেসেলের চুড়ান্ত পর্বের কাজের উদ্বোধন করেন। ৩৩৪টণ ওজনের এই কাঠামোটি, যেটি মূলত রিয়্যাক্টর কোর ধারণ করবে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে তার স্থাপনের কাজ শুরু হয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের জন্য গর্বের ও আনন্দের। যেহেতু রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের স্থান নিশ্চিত করতে পেরেছি”।
তিনি আরো বলেন, “২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠককালে নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোতে আশ্বস্ত হবার পরই আমি পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি”। রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রদত্ত সহযোগিতার জন্য তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি মত প্রকাশ করেন যে, “পরমাণু প্রযুক্তির মতো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞানার্জন আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিশেষ যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে”। শেখ হাসিনা আরও বলেন, “যেহেতু এই প্রযুক্তিতে (পরমাণু) কার্বন নিঃসরণ হয় না, তাই এটি পরিবেশ বান্ধব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব রোধে সহায়ক হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়তা করবে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে উত্তরণে ভূমিকা রাখবে”।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আলেক্সি লিখাচোভ রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং এই ব্যাপারে রুশ এবং বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের সুসমন্বিত কাজের বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন, যার ফলে বাংলাদেশ পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে আরো অনেক খানি এগিয়ে গেল।
লিখাচোভ বলেন, “আজকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মানের কার্যক্রমে ২০২১ সালের জন্য একটি মাইল ফলক ঘটনার স্বাক্ষী হলাম আমরা- ইউনিট ১ এ ডিজাইন পজিশনে স্থাপিত হলো রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল। বিশেষজ্ঞদের উচ্চদক্ষতা এবং যথাযত প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে অত্যন্ত নির্ভূলভাবে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া কর্তৃক অনুসৃত শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো, বহু দশক ধরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক ভাবনারগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। সক্রিয় (একটিভ) এবং স্বয়ংক্রিয় (প্যাসিভ) নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ব্যবহারের ফলে রূপপুরের বিদ্যুৎ ইউনিটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্ধাতিত লক্ষ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত হবে”।
তার মতে, “পারমাণবিক শক্তি শিল্পের উন্নয়ন শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদাই পূরন করবে না, একই সঙ্গে এতদ্ব অঞ্চলের সামগ্রিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে”। রসাটম মহাপরিচালক জানান, “বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার ধরণ অনেকটা কৌশলগত। আমার বিশ্বাস যে রুশ এবং বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে বাংলাদেশে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে”।
ইউনিট ১ এ ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে লিভের-১১৩৫০ হেভি ক্যাটারপিলার ক্রেনের সাহায্যে আরপিভিটিকে পাওয়ার ইউনিটের ট্রান্সপোর্টেশন পোর্টালে উত্তোলন করা হয়। পরবর্তী ধাপে বিশেষ পরিবহন ট্রলিতে এটিকে রিয়্যাক্টর ভবনের মূল হলে নিয়ে আসা হয়। পোলার ক্রেনের সাহায্যে আরপিভিটি ভার্টিক্যাল পজিশনে এনে রিয়্যাক্টর পিটের সাপোর্টিং রিং-এ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি প্রস্তুত করে রাশিয়ার এইএম-টেকনোলজি এবং এটির দৈর্ধ্য ১২মিটার এবং ওজন ৩৩৪.২টন। প্রস্তুতের পর রেগুলেটরি চাহিদা অনুযায়ী আরপিভিটির ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিজাইন এবং নির্মান করছে রাশিয়ার রসাটম রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা। প্রকল্পে ২টি ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর পাওয়ার ইউনিট থাকবে যেগুলোর লাইফ সাইকেল ৬০বছর তবে ইচ্ছা করলে আরো ২০বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর সকল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরন করতে সক্ষম।