সিলেটে প্রথম চালু হচ্ছে মূক ও বধির শিশুদের চিকিৎসা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সম্পূর্ণ শ্রবণপ্রতিবন্ধী বা জন্মগত মূক ও বধির শিশুদের ভালো চিকিৎসার জন্য সিলেটের অভিভাবকদের এত দিন যেতে হতো রাজধানী ঢাকায়। এবার ঢাকার বদলে সিলেটেই এ চিকিৎসা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিরা এই চিকিৎসা সুবিধা পাবেন সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এটি চালুর প্রস্তুতি চলছে।
জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ৬০০ শিশু বধির হয়ে জন্ম নেয়। ফলে সিলেটে এই চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হওয়ায় জন্ম থেকে কানে না শোনা এবং কথা বলতে না পারা শিশুদের চিকিৎসায় একটা নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে।
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মসূচির চেয়ারম্যান হচ্ছেন হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান মনিলাল আইচ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক দশক আগেও কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রচলিত ছিল না। আগে ২৫–৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদেশে এ চিকিৎসা অনেকে করাতেন। অথচ এখন দেশেই সরকারিভাবে তা সম্ভব হচ্ছে। এটি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় বর্তমান সরকারের একটি বড় ধরনের সাফল্য। দেশে এখন এ চিকিৎসা বাবদ বেসরকারিভাবে ১০–১৫ লাখ টাকা খরচ পড়ে। অথচ সরকার বিনা মূল্যে এ ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছে। সিলেটবাসীর জন্য সুখবর হচ্ছে, ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা এখন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় করা হবে।
যেসব শিশুর বধিরতা আছে, তাদের অভিভাবকদের এখনই হাসপাতালে নাম নিবন্ধনের জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। গরিব ও নির্বাচিত শিশুদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ চিকিৎসা দেওয়া হবে।
মনিলাল আইচ আরও বলেন, ‘হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের অধীনে আলাদা একটা ইউনিট স্থাপন করে অস্ত্রোপচার কক্ষের নির্মাণকাজ এখন শেষ মুহূর্তে আছে। সব প্রস্তুতি শেষ করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনিট চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব শিশুর বধিরতা আছে, তাদের অভিভাবকদের এখনই হাসপাতালে নাম নিবন্ধনের জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। গরিব ও নির্বাচিত শিশুদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়সী যেসব শিশু বধিরতায় ভোগে, এমন শিশুদের চিকিৎসায় কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে কেবল ঢাকাতেই এ চিকিৎসা হয়। ঢাকার বাইরে এই প্রথম সিলেট ও চট্টগ্রামে সরকারিভাবে এমন চিকিৎসা চালুর জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরে সিলেট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে প্রথম দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন ইউনিট স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছেপ্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মসূচি পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ওসমানী হাসপাতালে নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুল হুদা নাঈম। তিনি বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট হচ্ছে একটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি। দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর কানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়ে এ চিকিৎসা করে থাকেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন–সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুদানে ২০১০ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডেভেলপমেন্ট অব কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ কর্মসূচি চলছে। এরপর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজেও একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। এরপর চট্টগ্রাম সিএমএইচ এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য মেডিকেলেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন ইউনিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শুরুর দিকে প্রতিদিন দুজনকে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত আছে। অস্ত্রোপচারের জন্য একটি নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে শিশুর অভিভাবকের বার্ষিক আয় উল্লেখ করতে হবে। কারণ, শুধু আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিরাই তাঁদের শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এ চিকিৎসা করাতে পারবেন। এদিকে বার্ষিক আয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করে যাঁরা সামর্থ্যবান থাকবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আংশিক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা রাখতে হবে। এরপরই তাঁরা নিজেদের শিশুর চিকিৎসা করাতে পারবেন।
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার প্রথম আলোকে বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। এর মাধ্যমে সিলেটের চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে।