নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী রাসেল হায়দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাসেল হায়দারের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জিম্মি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। রাসেল হায়দারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও মিলছেনা কোন প্রতিকার। শিক্ষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও চাপা ক্ষোপ বিরাজ করছে। ২০১৩ সালে রাসেল হায়দার বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে যোগদান করে কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন দুর্নীতির সিন্ডিকেড। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আটপাড়া উপজেলায় বদলী করলেও অদৃশ্য কারণে এখনো তিনি বারহাট্টা উপজেলায় বহাল তবীয়তে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের হাত করে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করছে বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাসেল হায়দার। তার একচ্ছত্র আধিপত্যের কাছে জিম্মি সাধারণ শিক্ষকগণ। অফিসের বিভিন্ন কাজে জিম্মি করে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের ঘুষ। এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট শিক্ষকরা বার বার মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত ২৮নভেম্বর রাসেল হায়দারের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক। উপজেলার লাউফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অভিযোগকারী সাবিনা আক্তার জানান, ডিপিএড স্কেল ধরতে এবং সার্ভিসবুকে এন্টি করতে তিনি রাসেল হায়দারকে ১হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। স্বল্প দশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন জাহান ডিপিএড সার্টিফিকেট সার্ভিসবুকে এন্টি করতে বাধ্য হয়ে রাসেল হায়দারকে ১হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। হরিয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিমন চক্রবর্ত্তী ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বিল করতে বাধ্য হয়ে রাসেল হায়দারকে ২হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
চাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তারের স্বামী আব্দুল হান্নান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্ট স্থানান্তরের জন্য রাসেল হায়দারকে ৮হাজার টাকা ঘুষ দিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা তিনি একটি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন। সিন্ডিকেডের মাধ্যমে তিনি শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, ডিপিএড এবং উচ্চতর সার্টিফিকেট সার্ভিসবুকে এন্টি করা, উচ্চতর স্কেল ধরানো, ইএফটিসহ অফিসের সকল কাজে গড়ে তুলেছেন রমরমা ঘুষ ব্যাণিজ্য। এছাড়াও গাভারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পুষ্পিতা সরকার দীপাসহ একাধিক শিক্ষককে অনিয়মের মাধ্যমে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাসেল হায়দারের বিরুদ্ধে। ময়মনসিংহ ধোবাহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিকুন্নাহার ৮বছর ধরে চাকরী করলেও তার কপালে জোটেনাই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা।
ভুক্তভোগী সাবিকুন্নাহার জানান, শ্রান্তি বিনোদন ভাতার জন্য প্রতিবছর অফিসে যোগাযোগ করলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাসেল হায়দার বলেন, বাজেট নাই, বাজেট আসলে দেওয়া হবে। এভাবেই বছরের পর বছর যায়, সবাই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেলেও তিনি এখন পর্যন্ত শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাননি। অভিযোগে প্রত্যেকেই উল্লেখ করেছেন টাকা না দিলে অফিসের কোন কাজই করে দেন না রাসেল হায়দার। অফিসের ইউডি ইদ্রিস আলী নিয়মিত কর্মস্থলে থাকলেও রাসেল হায়দারের দাপটের কারণে তাকে কর্মহীন বসে থাকতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউডি ইদ্রিস আলী অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ইউডি হিসাবে তাকে কোন কাজ করতে দেয়া হয়না। অফিসের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রাসেল হায়দার করেন।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাসেল হায়দারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিনয় চন্দ্র শর্মা বলেন, ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, রাসেল হায়দারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ইতোপূর্বে আটপাড়া উপজেলায় বদলী করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু শিক্ষক এসে বলে তাকে ছাড়া নাকি অফিস অচল তাই তাকে সংযুক্তিতে বারহাট্টায় রাখা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার ডিসেম্বরের ১ তারিখে রাসেল হায়দারকে বদলী করে মদন উপজেলায় পাঠানোর হবে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন আশ্বাস দিলেও রাসেল হায়দার স্বদর্পে বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা অফিসে নিয়মিত অফিস করায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।