এইট ব্যান্ডের কপাট উন্মুক্ত : কেশবপুর-মনিরামপুরসহ ২৭ বিলে বোরো আবাদের নিশ্চয়তা
যশোর প্রতিনিধি : বিল খুকশিয়ার এইট ব্যান্ডের কপাট উন্মুক্তর মধ্য দিয়ে জলাবদ্ধ ২৭ বিলের কৃষকরা চলতি ইরি বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে ধান চাষের নিশ্চয়তা ফিরে পেয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিলের ৬৮ গ্রামের কৃষকদের উপস্থিতিতে প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মনজুর রহমান এইট ব্যান্ডের কপাট উন্মুক্ত করে দিয়ে ২৭ বিলের কেশবপুর-মনিরামপুরের কৃষকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
এইট ব্যান্ডে উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, আব্দুল জলিল ও শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জলাবন্ধতার কারনে কয়েক বছর ধরে ২৭ বিলে ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি, ফলে এই অঞ্চলের কৃষকরা চরম দূর্বিসহ জীবন যাপন করে আসছিল। গত বছর ৮নং সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস,এম মনজুর রহমানের সার্বিক প্রচেষ্টার ফলে স্বেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২৭ বিলের দুই তৃতীয়াংশ জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু চলতি বছর ২৭ বিলের অধিকাংশ কৃষকদের মতামত বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সামাদ সরদার অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিস্বার্থ হাচিলে ডায়ের খালে ক্রস বাঁধ দিয়ে আগুরী প্রথা চালু করেন। এবং তিনি ২৭ বিলের কৃষকদের আশ্বস্ত করেছিলেন মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বাড়ী ঘরের পানি সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার কথার সাথে কাজের কোন মিল পাইনি ২৭ বিলের কৃষকরা। তাই আগামী ইরি বোরে ধান চাষ নিয়ে ২৭ বিলের কৃষকদের মাঝে পুনরায় হতাশা দেখা দেয়। চেয়ারম্যান সামাদের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়ে এই এলাকার সাধারন কৃষকরা।
কোন উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে চেয়ারম্যান সামাদ ২৭ বিলের জলাবদ্ধতা নিরাসনের দায়িত্ব থেকে সরে আসেন। তিনি দায়িত্ব থেকে সরে আসার পর উক্ত ২৭ বিলের জলাবদ্ধতা নিরাসন ও আগামীতে এই বিলের জমি ধান চাষে উপযোগী করে তুলতে করনীয় পদ্ধতি ঠিক করতে সাবেক চেয়ারম্যান এস.এম মনজুর রহমান ছুটে যান ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের মুল কেন্দ্র ডায়ের খালের এইট ব্যান্ড, ক্রস বাঁধ ও হরিহন নদের পাড়ে।এই
পাড়ে দাড়িয়ে তিনি ২৭ বিলের কৃষকদেরকে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে ধান চাষের আশার বানি শুনান। এরপর তিনি নিজস্ব অর্থয়নে একদিকে শ্রমিক দিয়ে রাতদিন ২৪ ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া এইট ব্যান্ডের ৮টির মধ্যে ৭টি কপাটের ভিতরে-বাইরের পলি অপসারন ও সংষ্কার, অন্যদিকে ড্রেজার ম্যাশিন দিয়ে এইট ব্যান্ডের সামনে থেকে ডায়ের খালের ক্রসবাঁধ পর্যন্ত প্রায় ৩শ হাত ভরাট হয়ে যাওয়া পলি অপসারনের কাজ দ্রুত শেষ করে শনিবার সন্ধায় ২৭ বিলের কৃষকদের উপস্থিতিতে কপাট উন্মুক্ত করে কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পুরুন করেন। কপাট তুলে দেওয়ার পর স্রোত গতি দেখে উপস্থিত ২৭ বিলের কৃষকরা আনন্দ মেতে ওঠে।
২৭ বিল স্বেচ প্রকল্প কমিটির কোষাধক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান এস.এম মনজুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টি ও অপরিকল্পিত ডায়ের খালের ক্রস বাঁধ, আঙ্গুরী প্রথা চালু ও বিল খুকশিয়ার এইট ব্যান্ডের দায়িত্ব প্রাপ্তদের গাফিলাতির ফলে প্রায় দু’মাস ধরে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছিল ২৭ বিলের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ৬৮ গ্রামের মানুষ। বসতবাড়ী ও রাস্তার পানি সামান্য কমলেও চলতি মৌসুমে এই বিলে ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে সাধারন কৃষকরা।
২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র উপায় হল বিল খুকশিয়ার এইট ব্যান্ড। তাই ২৭ বিলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নযনে গত এক সপ্তাহ ধরে দিন রাত কাজ চলানো হয়েছে এই গেটে। গেটের সামনে ও হরিহর নদীতে পলি অপসারনে চলমান রয়েছে স্কেবেটর ম্যাশিন। এইট ব্যান্ডের ৮টির মধ্যে ৭টি কপাট সংস্থার করা শেষ হয়েছে। শনিবার উপস্থিত ২৭ বিলের কৃষকদের নিয়ে একটি কপাট উন্মুক্ত করা হয়েছে।
বাকী কপাটগুলে উন্মুক্ত করা হবে। পানির যে ¯্রােত, আশা করি আগামী এক সপ্তার মধ্যে ২৭ বিলের কৃষকরা তাদের উচু জমিতে বীজ ধান ফেলাতে পারবে এবং যথা সময়ে ২৭ বিলের কৃষকরা তাদের জমিতে সোনালী ধান চাষ করতে পারবে।