মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি
পর্বঃ ০৩
কুমু-র খুব ইচ্ছে করছে ডায়েরি টা নিয়ে পড়তে, কি লেখা আছে ভেতরে সেটা দেখতে কিন্তু এখন তো কোনোভাবেই সেটা করা যাবেনা, কেউ যদি দেখে নেয় বিশেষ করে মা তাহলে আর রক্ষে থাকবেনা। খুব সাবধানে ডায়েরি টা যথাস্থানে রেখে কুমু দরকারী কাগজপত্র গুলো গুছিয়ে নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দিলো।
সবগুলো কাগজ ঠিক করে দিয়েছিস তো মা?
হ্যা মা সবগুলোই দিয়েছি।
আচ্ছা বেশ.. আমরা বেড়োচ্ছি, দুপুরের রান্নার যোগাড়যন্ত্র করে রেখেছি কিছুটা, তুই আর ঝিলি হাতেহাতে একটু ছোট কাকি কে সাহায্য করে দিস।
আচ্ছা মা সে করে দেবো, তুমি অতো চিন্তা করোনা, সাবধানে যেও তোমরা।
বড় ফুপু আর মা ছোট ফুপু কে নিয়ে ডক্টর এর কাছে চলে গেলো, বাড়ির বাকি রা আরো অনেক আগেই অফিসে চলে গিয়েছে, এখন শুধু ছোট কাকি আর ঝিলি রয়েছে।
কুমু-র মনে খুব কৌতুহল কাজ করছে, কি করবে সে, ডায়েরি টার কথা কি ঝিলি কে বলবে? নাকি নিজেই একা একা পড়বে? এখন না পড়তে পারলে তো পরেও আর পড়া হয়ে উঠবেনা, সবাই চলে আসবে।
বেশ খানিকক্ষণ সময় ভেবেচিন্তে কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা কুমু..
আচ্ছা ঝিলি…
ছোট ফুপু-র কি হয়েছে তুই জানিস? এর আগেও তো এমন হয়েছে কিন্তু কেনো এমন হয়েছে কেউ তোকে কিছু বলেছে কখনো?
কিছু তো জানিনা তবে কালকে রাতে ড্রয়িং রুমে তোর মা আর ছোট মামির কথা গুলো শুনেছিস তো? আমার মনেহয় কিছু একটা ঘটনা তো ঘটেছিলো যার জন্য খালা-র এরকম মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শোন না তোকে একটা সিক্রেট বলবো কাওকে বলবিনা বল?
কি সিক্রেট?
আগে বল না কাওকে জানাবিনা?
আচ্ছা বেশ কাওকে জানাবোনা এখন বলতো।
আমি না ছোট ফুপু-র ওয়ারড্রবে একটা ডায়েরি দেখেছি আর তাতে লেখা ছিলো “অপ্সরার বিচ্ছেদ”
কি বলছিস এসব? খালার নাম দিয়ে এটা কেনো লেখা থাকবে বলতো? আর কি লেখা ছিলো?
আর তো কিছু পড়তে পারিনি।
কি ভাবছিস এখন ওটা আমরা দুজনে পড়বো?
হুম…
যদি তোর মা একবার জানতে পারে খুব বকবে আমাকেও আর তোকেও।
মা বাড়ি আসার আগ দিয়েই তবে ডায়েরি টা পড়তে শুরু করি চল?
কিন্তু ছোট মামি?
কাকি তো রান্না ঘরে কাজ করছে কিছু বুঝতে পারবেনা।
ঠিক আছে চল।
খুব সাবধানে ছোট কাকির চোখ ফাকি দিয়ে কুমু আর ঝিলি অপ্সরার ওয়ারড্রব থেকে ডায়েরি টা বের করে আনলো। এবার শুধু পড়বার পালা।
তারা দুজনেই জানে এভাবে ছোট ফুপু-র ডায়েরি টা পড়া ঠিক হবেনা কিন্তু কৌতুহল সামলাতে না পেরে তারা এটা করছে, খুব সাবধানে বই এর মাঝে ডায়েরি রেখে বই পড়ার ভঙ্গিতে তারা ডায়েরি পড়তে শুরু করলো;
(সাল ২০১৬)
ডিসেম্বর এর ২ তারিখ
শীতের হাওয়ায় চারপাশ টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে,চারপাশের কোলাহল গুলো যেনো থমকে রয়েছে এই থমথমে পরিবেশ এর কাছে। আমারও আজ মনটা বড্ড খারাপ। ভালোবাসা যেখানে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেখানে মন ভালো থাকাটাই যেনো অসম্ভব এর শামিল।
এই ঝিলি…
কিসব লিখেছে বলতো? কেই বা লিখেছে এসব?এটা কি তবে ছোট ফুপু-র হাতের লেখা?
বুঝতে পারছিনা কিছু । পরের লেখা টা পড় তো..
(০৫ ডিসেম্বর)
আচ্ছা কেউ যদি কাওকে ভালোবেসে বিশ্বাস করে তার খুশির জন্য স্বর্বস্ব দিয়ে তার মন রাখবার চেষ্টা করে আর বিপরীত দিকের মানুষ টা সেই ভালোবাসা-র সুযোগ নিয়ে তাকে সবসময় অপমান নামক আসনে বসিয়ে রাখে তাহলেও কি তাকে ভালোবাসা বলা চলে? আমার জানা নেই কি বলে তাকে…
উহহহহ… ঝিলি;কাকে নিয়ে কে লিখেছে এসব বলতো? আমি তো আগাগোড়া কিছুই ঠাওড় করতে পারছিনা..
আহ্ কথা বাদ দিয়ে পরের পাতা টা পড় না কি লেখা আছে?
(৯ই ডিসেম্বর)
আমি তাকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই কিন্তু ভালো থাকা টা আর হয়ে ওঠেনা, আমি বুঝতে পারিনা আমার ভুল টা কোথায়? কেনো সবসময় ভুল এর বোঝা টা আমার ওপরই আসে? আচ্ছা ভালোবাসা টা কি তবে এমনই?
(১১ডিসেম্বর?
ভালোবাসা-র মানে কি শুধু এটা?
বিপরীত দিক থেকে যতটা সম্ভব স্বাধীনতা নামক বস্তুটাকে কেড়ে নিয়ে, একটা সীমাবদ্ধ জীবনে জিম্মি করে রাখা? ভালোবাসা কি তবে ভীন্ন স্বাদ দিতে পারেনা?
(১৬ডিসেম্বর)
আজ লাল পার সাদা শাড়ি পরে বিজয় দিবস উপলক্ষে ভার্সিটি থেকে শোভাযাত্রায় গিয়েছিলাম,খুব প্রিয় বন্ধুদের সাথে অনেক গুলো গ্রুপ ফটো ও তুলেছিলাম।আজ এই সাদা শাড়ি তে বেশ খানিকটা কলঙ্কের দাগ লেগে গিয়েছে কারো কথার বাহারে!
কি যেনো দোষে দোষি হয়ে গিয়েছি আমি তার কাছে। সম্পর্ক নামক গন্ডির মধ্যে শান্তির বদলে অশান্তি নামক জাহান্নামের বাসা বাঁধছে দিনদিন।
ধুর ছাই.. ডায়েরি তে সব লেখা আছে কিন্তু কারো নাম ঠিকানা কিছু লেখা নেই, কিছু তো বুঝতেই পারছিনা!
উফফফ কুমু বড্ড বেশি কথা বলিস তুই, পড়ে যা না পরের পাতা গুলো চুপচাপ।
(একলা সময়)
আজকাল কেমন পাগল পাগল মনেহয় নিজেকে,একা সময় গুলোতে একটু বেশিই ভরসা হারাই নিজের ওপর থেকে। ওপরের সিলিং ফ্যান টাও যেনো বলে ওঠে জীবনের স্বাদ শেষ এখানেই।ভবিষ্যত নামক ভাগ্য পাতায় কি লেখা আছে আমার? যদি জানতে পারতাম আগেই তবে হয়তো কেটেকুটে সবটা পরিবর্তন করে দিতাম।
ভালো থাকার জন্য রচনা করতাম অন্য রকম একটা ভাগ্য পাতা!!
(সাল ২০১৭)
সময় টা ভালো ছিলো নাকি আমার অনুভূতি সেটা বুঝতে পারছিনা। আজ বড্ড ভালো সময় কাটিয়েছি। ইমাদ কে আজ বড্ড বেশি সুন্দর লাগছিলো। সবগুলো সময় কেনো এমনটা সুন্দর হয়না? কেনো আমাদের মাঝে বারবার অশান্তির দেয়াল চলে আসে?
ইমাদ নাম টা দেখেই কুমু আর ঝিলি দুজনেই চমকে উঠেছে! ইমাদ তো কুমু-র ছোট ফুপু অপ্সরা-র হাসবেন্ড এর নাম।তার সাথেই তো বিয়ে হয়েছে।তাহলে কেনো এখানে বিচ্ছেদ এর কথা লেখা?
তারমানে এসব লেখা গুলো ইমাদ কে নিয়েই লেখা হয়েছিল। তাহলে কি ছোট ফুপু ওই সম্পর্কে ভালো ছিলোনা বলে এসব লিখেছিলো? আচ্ছা এই কারনেই কি তবে ছোট ফুপু চায়নি ইমাদকে বিয়ে করতে?
কিন্তু তারপরও কেনো তার সাথেই বিয়েটা হয়েছিলো শেষ অব্দি?
তাহলে কেনই বা এই ডায়েরির পাতায় লেখা অপ্সরার বিচ্ছেদ?
তবে কি অন্য কারো আগমন হয়েছিল তার জীবনে?যাকে না পাওয়ার কষ্টে সংযোজিত হয়েছে বিচ্ছেদ নামক শব্দখানা, যাকে না পাওয়ার কষ্ট সামলাতে না পেরে পরিনতি আজ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে?
কি লেখা আছে ডায়েরির পরের পাতায়?
চলবে…♥️