২০২১: লাভে ফিরেছে বিআরটিসি, বেড়েছে সক্ষমতাও

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ২০২১ সালে লাভের মুখ দেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। লোকসানে ডুবে থাকা এই সংস্থাটি এখন ধারাবাহিকভাবে লাভ করছে। ২০২১ সাল (জানুয়ারি-নভেম্বর) করোনা পরিস্থিতি সামলেও বিআরটিসি লাভ করেছে পৌনে ৩৫ কোটি টাকা।

তবে নানান কারণে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল বিআরটিসি। তার মধ্যে ‘কোটি টাকার ভলভো বাস ভাঙারিতে বেচলো বিআরটিসি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানকে।

পাশাপাশি বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘ঢাকা নগর পরিবহনে’ বিআরটিসির বাস দেওয়া, বাসের লোকেশন নির্ণয়ে ‘অ্যাপ: আমাদের বিআরটিসি’, ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুসহ নানা কার্যক্রমে প্রশংসাও কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বছরজুড়ে বিআরটিসির আলোচিত ঘটনা নিয়ে এ প্রতিবেদন।

লাভে ছুটছে বিআরটিসি : বিআরটিসি এখন লাভে ছুটছে। সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০২১ সালে আয় হয়েছে- জানুয়ারিতে ৩৩ কোটি ৪১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৩২ কোটি ৯৯ লাখ, মার্চে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ, এপ্রিলে ১৩ কোটি ৫১ লাখ, মে মাসে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ, জুনে ২৪ কোটি ২১ লাখ, জুলাইয়ে ১৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে লাভের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৩০ কোটি ৫৯ লাখ ও ৩৪ কোটি টাকা। অক্টোবর ও নভেম্বরে আয় ছিল যথাক্রমে ৪০ কোটি (৪০৭৭.৮৯ লক্ষ) ও ৪২ কোটি টাকারও বেশি (৪২৯১.৪৫ লক্ষ)।

এসময়ে তাদের ব্যয় হয়েছে জানুয়ারিতে ৩০ কোটি ৫১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২৯ কোটি ৫৮ লাখ, মার্চে ৩২ কোটি ৪৪ লাখ, এপ্রিলে ১১ কোটি এক লাখ, মে মাসে ১২ কোটি ৭২ লাখ, জুনে ২১ কোটি ৮০ লাখ, জুলাইয়ে ২৩ কোটি ২৮ লাখ, আগস্টে ২৭ কোটি ৯৩ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ৩০ কোটি ৩৪ লাখ। অক্টোবর ও নভেম্বরে ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৩৩ কোটি (৩৩৮৩.৯৮ লক্ষ) ও ৩৮ কোটি টাকারও বেশি (৩৮৭৫.৬১ লক্ষ)।

আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে দেখা যাচ্ছে, বিআরটিসি ২০২১ সালে লাভ করেছে ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে লাভ হয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে তিন কোটি ৪১ লাখ, মার্চে চার কোটি ৩৬ লাখ, এপ্রিলে আড়াই কোটি, মে মাসে পৌনে দুই কোটি এবং জুনে দুই কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে জুলাইয়ে তিন কোট ৩৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানটির।

তবে আগস্টেই ঘুরে দাঁড়ায় বিআরটিসি। আগস্টে লাভ করে দুই কোটি ৬৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে তিন কোটি ৬৫ লাখ টাকা লাভ করে সংস্থাটি। এছাড়া অক্টোবর ও নভেম্বরে লাভ করেছে ৬৯৩ কোটি ৯১ লাখ ও ৪১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সংস্থাটির আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

কোটি টাকার ভলভো বাস ভাঙারিতে বিক্রি । ২০২১ আলোচনায় ছিল বিআরটিসির বাস বিক্রির বিষয়টিও। প্রায় ২০ বছর আগে সুইডেন থেকে চড়া দামে ৫০টি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভলভো বাস কেনে বিআরটিসি। দৃষ্টিনন্দন বাসগুলো প্রথম সাত-আট বছর সড়কে দাপটের সঙ্গে চলাচল করে। ধীরে ধীরে সেগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হতে শুরু করে। এসব যন্ত্রাংশ মেরামতে দফায় দফায় প্রকল্প হাতে নেয় বিআরটিসি। কিন্তু যন্ত্রাংশগুলো দেশে দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংস্থাটি।

ফলে অকেজো বিলাসবহুল বাসগুলো বিআরটিসির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ৫০টি ভলভো বাসের মধ্যে ৪৯টি বিক্রি করে দিয়েছে বিআরটিসি। রাজধানীর বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে থাকা এসব বাস ভাঙারি হিসেবে কেজিদরের মতো বিক্রি করা হয়েছে। সচল আছে কেবল একটি। সেটি রাজধানীর মিরপুর ডিপোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। বাসটি এখন সুপ্রিম কোর্টের স্টাফদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কোটি টাকায় কেনা ভলভো বাস ভাঙারিতে বিক্রি করা হয়। ঢাকা নগর পরিবহনে বিআরটিসি । রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দীর্ঘদিনের উদ্যোগ ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত এক রুটে ১০০ গাড়ি চলাচল করবে। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটের বাস কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর ডিপো থেকে ছেড়ে বসিলা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শংকর, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, নটর ডেম কলেজ, ইত্তেফাক মোড়, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড হয়ে কাচপুর ব্রিজ পর্যন্ত যাবে। ইতোমধ্যে ৫০টি বাসের মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হয়েছে, সেখানে ৩০টি বাসই বিআরটিসির। আরও বাস যুক্ত হবে। প্রয়োজনে বিআরটিসি আরও বাস দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

অ্যাপ: আমাদের বিআরটিসি । ২০২১ সালে বিআরটিসির আরেক সংযোজন নতুন অ্যাপ- ‘আমাদের বিআরটিসি।’ এর মাধ্যমে বিআরটিসি বাসের রুট, সময়সূচি ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন নাগরিকরা। এতে প্রতিটি রুট ভিন্ন ভিন্ন রঙের মাধ্যমে গুগল ম্যাপে প্রদর্শন করা হবে। রুটের রং অনুযায়ী বাসের রং নির্ধারিত থাকবে। যে কোনো ব্যবহারকারী মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে সব রুট ও বাসের রিয়েল টাইম লোকেশন জানতে পারবে।

ই-টিকিটিং পদ্ধতি
বিআরটিসি বাসে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতে টিকিট ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গৌরীপুর, কুড়িল-ইটাখোলা, গাবতলী-বাবুবাজার, কুড়িল-গাউছিয়া, কুড়িল বিশ্বরোড-মোহাম্মদপুরসহ ১০টি রুটে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এছাড়াও করোনার মধ্যে বিআরটিসি কর্মীদের দুটি বোনাস ও বৈশাখী ভাতা দিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও নিয়মিত। বছর শেষে নেই কোনো বকেয়াও।

বিআরটিসির এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনগণের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা নগর পরিবহনে ৩০টি বাস দিয়েছে বিআরটিসি। একুশে বিআরটিসির অর্জন নিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা লাভে চলে আসছি। ধারাবাহিকভাবে লাভ হচ্ছে। এটাই এই বছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এছাড়া ই-টিকিটিং শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ১০টা রাস্তায় এটা চলছে। ঢাকা নগর পরিবহনে আমরা গাড়ি দিয়েছি, আরও লাগলে দিতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যমেলা প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে হচ্ছে, আমরা সেখানেও বাস সার্ভিস দিচ্ছি। যেখানে যে সাপোর্ট দরকার, আমরা দিচ্ছি। বিআরটিসির যে কোনো যায়গায় সাপোর্ট দেওয়ার মতো সক্ষমতা এখন হয়েছে।’

বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ট্রাক ধর্মঘট ও বাস ধর্মঘটের সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চালিয়েছি। বিশেষ করে, ট্রাক ধর্মঘটে সার পরিবহন করেছি। সংকটকালে ৫০০ ট্রাকের মাধ্যমে সার পরিবহন অব্যাহত রেখেছি, যার কারণে কৃষিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। ডিজেলের মূল্য বাড়লেও আমরা বর্ধিত ভাড়া নেয়নি।’

‘বিআরটিসিকে উচ্চমাত্রায় নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি ’ বলে উল্লেখ করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. তাজুল ইসলাম।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.