মাথাপিছু আয় দু’হাজার ৫৯১ ডলার

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মাথাপিছু আয়ে একের পর এক সুসংবাদ আসছে। গত নবেম্বরেই মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সুখবর দিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তখন সংস্থাটি বলেছিল, দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। তবে সাময়িক সেই হিসাবকে পেছনে ফেলে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা কিনা ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবিএসের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করার জন্য সম্প্রতি নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করেছে।

২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর ধরে এখন থেকে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় গণনা করা শুরু হয়েছে। এত দিন ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এসব গণনা করা হতো। মনে রাখতে হবে, মাথাপিছু আয় কোন ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিটেন্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেয়া হয়। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৩২৬ ডলার বা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকা। তার মানে পরের এক বছরে ২৬৫ ডলার বেড়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ৮৯ মার্কিন ডলার হবে। সে বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা আমার মোটামুটি হিসাব।’

মঙ্গলবার একনেক বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটা আমাদের ফিগার, যে কেউ এটা নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করেছি বলেই মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারসহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নির্দেশক প্রাক্কলন ও প্রকাশ করে আসছে। এ পর্যায়ে চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২০ অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, রফতানি বেড়েছে। এছাড়া রেমিটেন্স ২৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এসব কারণেই মূলত অর্থনীতির আকার বেড়েছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওমিক্রনের সময়ও পিছিয়ে নেই। আমাদের রফতানি আয় বেড়েছে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। আমাদের রেভিনিউ ১৪ শতাংশ বেড়েছে। কাজেই এসব কারণেই মোট জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে।

মহামারীর শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারী পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়। এখন চূড়ান্ত হিসাবে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থনীতির প্রধান তিন সূচক কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় চুড়ান্ত হিসাবে বেশি হয়েছে। সে কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় কৃষিখাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে শতকরা ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ২ দশমিক ৩৭ ভাগ। চূড়ান্ত হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে শস্য উপখাতে শতকরা ২ দশমিক ২৯ শতাংশ, পশুপালন উপখাতে শতকরা ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বন উপখাতে শতকরা ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মৎস্যখাতে শতকরা ৪ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। বছর শেষে বিদ্যুতখাতে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং নির্মাণখাতে ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী শিল্পখাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ দশমিক ২৯ ভাগ, সাময়িক হিসাব ছিল ৫ দশমিক ৯৯ ভাগ। ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাখাতে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যানবাহন খাতে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ব্যাংক ও বীমাখাতে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, শিক্ষাখাতে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ও স্বাস্থ্যখাতে ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, সেবাখাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৭৩ ভাগ, যা সাময়িক হিসাব ছিল ৫ দশমিক ৮৬ ভাগ।

এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘জাতিসংঘের মেথড অনুযায়ী আমরা জিডিপির হিসাব করি। বস্তুনিষ্ঠভাবে এই হিসাব করা হয়েছে।’ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.