কাঁচা বাদাম গানের তালে তালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন, সমালোচনার ঝড়

0

স্টাফ রিপোর্টার: পাবনার ঈশ্বরদীতে কাঁচা বাদাম ও ডিজে গানের তালে তালে নেচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নেচে-গেয়ে দিবসটি উদযাপন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় বিদ্যালয়ের ফেসবুক আইডি থেকে কুরুচিপসম্পন্ন এমন অনুষ্ঠানের লাইভ দেওয়া হয়। তারপরই ভিডিও টি ভাইরাল হয়। ডিবিসি, আমার নিউজ, ক্যাম্পাস টাইমস সহ বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে ভিডিও টি প্রকাশ করা হয়। এসময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন সকলে। পরে তোপের মুখে বিদ্যালয় আইডি থেকে ভিডিওটি তাৎক্ষনিক ডিলিট করা হয়। তবে তার আগেই মিলিয়ন ভিউয়ারসের মাইল ফলক ছুয়ে ফেলে ভিডিওটি।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কয়েক মিনিটের ঐ ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, স্টেজের পেছনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবসের আলোচনাসভার ব্যানার টাঙানো রয়েছে। সেখানে একক, দ্বৈত ও দলগতভাবে নাচছে ছাত্রীরা। সামনেও নাচছে ছাত্রীরা। কাঁচা বাদাম ডিজে গানের তালে তালে এসময় স্টেজের ওপরে ও আশপাশে একাধিক শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নাচতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান আনিসুর রহমান বলেন, আমরা অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে ভাগ করেছিলাম। শিশু দিবস উপলক্ষে নাচ-গানের আয়োজন ছিল দ্বিতীয় পর্বে। প্রথম অংশে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও দোয়া মাহফিল ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা নাচ-গান করে। শিক্ষার্থীদের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমি নিজেও লজ্জিত।

তবে বিদ্যালয়ের এমন কর্মকান্ডের ভুল স্বীকার না করে উল্টো পরিচালনা পরিষদের এক সদস্য জানান, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন। কারা বিষয়টিকে প্রচার করছেন, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করছেন তা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তাছাড়া ভিডিওগুলো সব ডিলিট ও করে ফেলা হয়েছে। আমরা মেয়েদের শিখিয়ে দিয়েছি, তারা বলবে এসময় স্যাররা কেউ ছিলো না, আমরা নিজেরাই মোবাইলে গান দিয়ে একটু মজা করেছিলাম।

সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ঐ ভিডিওতে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের ঝড় উঠলে সেখানে সুমন চৌধুরী মন্তব্য লিখেছেন, এখানে শিক্ষনীয় কিছুই তো দেখি না। আর একজন মৃত মানুষের জন্য দোয়ার নাম করে যা করতেছে এগুলো তার জন্য আজাব ছাড়া আর কিছুই না ৷ Abusaid Riad মন্তব্য লিখেছেন, স্কুল কলেজে এখন পড়াশোনা নাই, শুধু দিবস পালন আর জন্ম দিন পালনের নামে চলছে নোংরামি। ধিক্কার জানাই ওই সমস্ত স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকা কে। সনিয়া আফ্রজ মন্তব্য লিখেছেন, খুব লজ্জাজনক এসব। এটা আমাদের সংস্কৃতি না। দিন দিন সোনার বাংলাকে কোথায় নামাচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান..? শারিয়ার আল শাহীন লিখেছেন, এখন স্কুল গুলো আর স্কুল নেয় সব নাচ-গান আর অশ্লিলতার মেলা হয়ে গেছে। আল্লাহ তুমি সবাইকে হেদায়েত দান করো।

শৈবাল সিদ্দিক লিখেছেন, এই শিক্ষক না অন্য কিছূ, আসলে পরিবার থেকে আসল শিক্ষা না পেলে তারা অন্যদের কে শিক্ষা দিবে কি ভাবে। বই পড়ে শিক্ষা অর্জন করা কে প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। নৈতিক শিক্ষা, ফ্যামিলীগত শিক্ষা ও স্কুলে যেয়ে শিক্ষা, এই সব শিক্ষা নিয়ে প্রকৃত শিক্ষা বলা যায়। জুয়েল আহমেদের লিখেছেন,, যে সকল ব্যক্তিরা একজন মৃত মানুষের স্মরনে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এস এ সুমন লিখেছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা নতুন প্রজন্ম কে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস জানাবে তা নয় বরং সেখানে হিন্দি গান দিয়ে নাচ করছে। শিক্ষক ও তার শিক্ষার ঘাটতি আছে। এবং এসব বিষয় গুলো অপমানজনক কাজ বলে ধরে নিচ্ছি। ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হাসি তামাশা বন্ধ করুন।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এ ধরনের ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। বাহিরা বিশ্বের সংস্কৃতিকে যারা দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। এরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম মোসলেম উদ্দীন বলেন, মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলাম। প্রধান শিক্ষক এবং এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে থাকতে বলেন তবে সময় স্বল্পতার কারণে কেক কেটে চলে আসি৷ পরে বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমে জানতে পারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে মানিক নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে হিন্দি গানের মহোৎসব হয়েছে৷ এটি নিন্দনীয় কাজ প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাচ-গানের বিষয়টি মোটেও ঠিক করেন নি৷

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি. এম ইমরুল কায়েস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে, পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পুষ্প অর্পণ র্যালি, আলোচনা সভা, চিত্রাকংন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, কেক কাটা ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে৷ কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেটি করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হিন্দি গানের উৎসব, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.