সাতক্ষীরায় শত বছরের মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে

0

রিজাউল করিম সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় শত বছরের মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। একটা সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটা ঘরের রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া আর অতিথি আপ্যায়ন সহ প্রায় সব কাজেই মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো। স্বাস্থ্যকর আর সহজলভ্য ছিলো বলে সব পরিবারেই ছিলো এ গুলোর ব্যবহার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের এই মৃৎশিল্প।
খেঁজুর ও তালের রস সংগ্রহের জন্য মাটির তৈরি পাত্রের ব্যবহার করা হয় সর্বত্র। মাটির তৈরি খোলা (পাত্র),ফুল গাছের টপ, দধির পাত্র, টালি, ঘট, মুচি, মুটকি থালা-বাসনসহ বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা হতো বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এ সব তৈরির মূল উপকরণ হচ্ছে পরিস্কার এঁটেল মাটি। এ সকল জিনিসপত্র তৈরির কারিগর কুমার নামে সকলের কাছে পরিচিত। এবং যেখানে এ সকল জিনিসপাত্র তৈরি করা হয় সে স্থানকে কুমারশালা বলা হয়।

তৈরি করা মাটির পাত্র গুলোকে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে সেগুলো সাইকেল, ভ্যান বা মাথায় করে দূর থেকে দূরান্তরে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতো। তাতেই চলতো তাদের সংসার।তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধাতব, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পণ্য সহজে বহনযোগ্য আর সস্তা হওয়ায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ সব কারনে মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজ বিলীন হতে চলেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প।

মৃৎশিল্পকারী গরদের দাবী তৈরিকৃত মাটি, উপকরণ ও পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে অনেক পরিবার।
বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার বাবুলিয়া, সুলতানপুর পালপাড়া, গড়েরকান্দা, ইটাগাছা পালপাড়া, নগরঘাটা পালপাড়া, ধুলিহর পালপাড়া, কলারোয়া, তালা শিবপুর ও ঘোনা ঝাউডাঙ্গাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৪শত পরিবার এ শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শহরের বাবুলিয়া এলাকার দিলীপ মৃৎকারীগর কুমার পাল বলেন, আগে আমরা এখানে ২০-২৫টি পরিবার বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ধাতব, ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসায় মাটির হাড়ি পাতিল এর চলন ওঠে গেছে আগের মতন বেচাকেনা না থাকয় এ পেশা ছেড়ে অন্যের ক্ষেত-খামারে দিনমজুর, ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকে।
মৃৎকারীগর অঞ্জনা রানী পাল বলেন, আমাদের মাটি দিয়ে এ সব তৈরি করার জন্য মাটিকে চটকিয়ে নরম করতে হয় বিভিন্ন সময় মাটিতে থাকা ঝিনুক, সামুক, ও কাঁচে অনেক সময় আমাদের হাত পা কেটে যায়। সরকার যদি আমদের কাঁদা মাটি চটকানোর জন্য মেশিন দেয় তাহলে আমাদের খুব উপকার হবে।

মৃৎকারীগর স্বপন পাল বলেন, যদি জাত পেশা না হতো তাহলে অন্য কাজ করতাম। আমাদের এখানে প্রায় ২৫টি পরিবার এই কাজ করতো কিন্তু এখন ৬-৭টি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে বাকিরা অন্য কাজ করছে। এসব জিনিসপত্র তৈরি জন্য আমাদের বিভিন্ন স্থান থেকে এঁটেল মাটি, ও পোড়ানো জন্য জ্বালানী কাঁট কিনে আনতে হয়। দিন দিন এ সবের দাম বৃদ্ধির কারনে আমাদের তেমন লাভ হয়না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপ ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৪০০ পরিবার এ মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা একটি এনজিওর মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবো। এর ফলে তারা উন্নত মানের বিভিন্ন ধরনের মাটির হাড়ি পাতিল শোপিচ তৈরি করে বিদেশ রপ্তানি জন্য উপযোগী করতে পারবে। আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সল্পসুদে ঋনের ব্যবস্থা করবো।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.