সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য, তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংম্লিষ্ট ঠিকাদার
রিজাউল করিম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিরকর তথ্য। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে হাসপাতালটিতে খাদ্য সরবরাহের সরকারি ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন নজরুল ইসলাম। সম্প্রতি প্রতিপক্ষের নিকট থেকে কিছু আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনৈতিক সাংবাদ প্রকাশ করছে ওই চক্রটি। অথচ একটিপাক্ষিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য নেওয়া হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী তরুণ জানান, আমি চার দিন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। সকালে পাউরুটি, একটি পাকাকলা, একটি ডিম ও চিনি দেওয়া হয়। দুপুরে কোন দিন মাছ-তরকারি আবার কোনদিন মাংস ও ভাত দেওয়া হয়। খাদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম আমার চোঁখে পড়েনি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বাবুর্চি মিঠু জানান, পত্রিকাটিতে পাউরুটি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে মাত্র ৫০ গ্রাম অথচ তা দেওয়া হয় ৮৫ গ্রাম। আর ডায়টেবিস রোগীদের আটার রুটি দেওয়া হয় না বলা হয়েছে অথচ প্রতিদিনই আটার রুটি দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। এছাড়া বলা হয়েছে পাঙাস মাছ দেওয়া হয়, অথচ কখনোই পাঙ্গাস মাছ দেওয়া হয় না। গরুর দুধ সিডিউলে উল্লেখ না থাকলেও দেয়া হয় প্যাকেটজাত ডানো দুধ। তিনি আরো জানান, ডায়বেটিস রোগীদের সকালে চারপিস আটার রুটি, দুইটা করে ডিম ও একটি পাকা কলা দেওয়া হয়। সপ্তাহে তিন দিন মাংস ও চারদিন মাছ খাওয়ানো হয়। মাছ দেওয়া হয় রুই, মৃগেল ও কাতলা। মাছের তরকারির সঙ্গে থাকে আলু। মাংসের সঙ্গেও থাকে আলু। মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট করছে এই চক্রটি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন শাফায়াত জানান, স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি আমরা দেখেছি। সেখানে কোন সঠিক তথ্য উপাত্ত নেই। মনগড়া ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে ঠিকাদার। টেন্ডারের বিষয়টি আদালতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে পূর্বের ঠিকাদারই খাদ্য সরবরাহ করছেন যথানিয়মে। টেন্ডার কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত দর অনুযায়ী তাকে বিল প্রদান করা হচ্ছে। যা তৎকালীন বাজারদর। দরপত্রের শর্তাবলীতে উল্লেখ রয়েছে, নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত একই দরে মালামাল সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে পূর্বের ঠিকাদর। সেই আলোকে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালামাল সরবরাহ করছেন ঠিকাদার নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, হাসপাতালটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সকল সময় বিশিষ্টজনসহ সাংবাদিকরাও যাতায়াত করেন। কখনো কোন মানুষ বা রোগীরা খাদ্য সরবরাহ খারাপ হচ্ছে এমন কোন অভিযোগ দেয়নি। প্রকাশিত সংবাদটি দেখে হাসপাতালে অনেক সাংবাদিকও এসে সরেজমিন দেখেছেন। দেখে তারাও খাবারের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রোগীদের সরবরাহকৃত খাবারের মান যথেষ্ট ভালো রয়েছে। সিভিল সার্জন আরো জানান, কেউ যদি প্রপাগান্ডা ছড়ায় তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম জানান, একটি রোগীকে তিন বেলা খাবার বাবদ সরকার ১২৫ টাকা বরাদ্দ দেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী খুবই নগন্য। ১২৫ টাকার মধ্যে ১৪.৫% ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করেন সরকার এবং ঠিকাদারের প্রফিট থাকে ১০%। সর্বমাট ২৪.৫% এ ৩০.৬০ টাকা বাদ দিয়ে একজন রোগী ৯৪.৪০ টাকার তিনবেলা খাবার পান। তিনি আরো জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি থাকলেও রোগীদের স্বার্থ বিবেচনা করে যথানিয়মেই খাদ্য সরবরাহ করা হয়। কখনো কোন অনিয়মের অভিযোগ নেই আমার বিরুদ্ধে। খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সিভিল সার্জনগণ আমাকে গুড উইল সনদ প্রদান করে গেছেন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের তৎকালীন বাজারদর অনুযায়ী অদ্যবধি খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে যার দাম বাজারে দ্বিগুণ। অথচ একটি চক্র বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছেন। আমি সরকারের সকল সেক্টরের গোপন ও প্রকাশ্য তদন্তের মাধ্যমে এর প্রতিকারের দাবি জানাচ্ছি।