নতুন মিশনে বিমান
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা দেনায় থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যবসায় গতি আনতে ২০৩১ সালের মধ্যে উড়োজাহাজের বহর দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আর ভাড়ায় নয়, এবার সব উড়োজাহাজ কিনে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। তবে উড়োজাহাজ ক্রয়ের অর্থ কোথা থেকে আসবে, কোন কোন রুটে পরিচালনা হবে এসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাভজনক রুটে ফ্লাইট না বাড়ালে লোকসান আরও বাড়বে।
জানা গেছে, বিমান বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি নিজস্ব ও ৩টি ভাড়ায় আনা। চারটি দূরপাল্লার বোয়িং ৭৭৭-৩০০, চারটি মধ্যম পাল্লার বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, ছয়টি মধ্যম-স্বল্প পাল্লার ৭৩৭-৮০০ ও পাঁচটি স্বল্পপাল্লার ড্যাস ৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে বহরে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে উড়োজাহাজ বহরের আকার হবে ৪৫টি। একইসঙ্গে বর্তমান বহরের ৬টি পুরনো উড়োজাহাজ পরিবর্তন করা হবে। এগুলোর মধ্যে থাকবে বোয়িং ৭৭৭, ৭৮৭-৮, ৭৮৭-৯, ৭৩৭-৮০০ ও ড্যাস ৮-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ। সম্প্রতি বিমানের বোর্ড অব ডিরেক্টরের ২৪৭তম সভায় এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী মাসে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো রকম আর্থিক মূল্যায়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনা ছাড়া নতুন উড়োজাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ হবে আত্মঘাতী। উড়োজাহাজ ক্রয়ের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে যে সব দেশের মধ্যে যাত্রী আসা-যাওয়া বেশি, ভাড়া বেশি, সেই সব রুট চিহ্নিত করে ফ্লাইট বাড়াতে হবে। আগে থেকে না থাকলে ফ্লাইট চালু করতে হবে। রুট বুঝে উড়োজাহাজ ক্রয় করতে হবে। তাদের মতে, ঢাকা থেকে দিল্লি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মাস্কাট, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাত্রী আসা-যাওয়া বেশি। এসব রুটে ফ্লাইট বাড়ানো দরকার। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে অন্তত ছয়টি ফ্লাইট দরকার।
এ ছাড়া লন্ডনে প্রচুর বাংলাদেশি থাকায় ফ্লাইট বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর পক্ষেও মত দিয়েছেন অনেকে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিমানের বহর বড় হোক এটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু, বহরে যে ২১টি উড়োজাহাজ আছে সেগুলোই তো ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। ২০০৮ সালে ১০টি এয়ারক্রাফট অর্ডার করা ছিল। সেগুলো এসেছে কিন্তু রুট বাড়েনি। তাহলে কিনে লাভ কী। আরও ঋণ বাড়বে। আয়ের উৎস বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বিমানকে লাভজনক করতে আগামী ১০ বছরে আমি কী করতে চাই তার একটা কৌশলগত পরিকল্পনা আগে থাকতে হবে। সম্প্রতি সরাসরি টরন্টো ফ্লাইট চালুর কথা বলা হলো। আমি তখন বলেছিলাম, একটানা ১৮ ঘণ্টা ফ্লাইট চালিয়ে যে খরচ, তা ওখানকার যাত্রী পরিবহন করে উঠবে না। তারপরও ২৬ মার্চ পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চালুর কথা বলল। এরপর বলল জুনে চালু করবে। এখন বলছে, সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব নয়। সবাই উড়োজাহাজ ব্যবসায় লাভ করছে। বিমান পারছে না। কারণ, সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। ওয়াহিদুল আলম বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অনেক লাভজনক রুট আছে। লন্ডনে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা দরকার। এমিরেটস ঢাকা থেকে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমান বহরে উড়োজাহাজ থাকলেও সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ কাজে লাগাতে পারছে না। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একটি মাত্র ডিসি-৩ উড়োজাহাজ নিয়ে বিমানের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। ৫০ বছরে অধিকাংশ সময়ই লোকসান করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে সংস্থাটির দেনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। নতুন উড়োজাহাজের জন্য বছরে ২৫০ কোটি টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
১৯৯০ সালে বিমান ২৬টি আন্তর্জাতিক এবং ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুট কমে ১৮টিতে নেমেছে। ২০০৬ সাল থেকে বিমান ধীরে ধীরে নিউইয়র্ক, ফ্র্যাঙ্কফুট, রোম, টোকিও, ব্রাসেলস, আমস্টারডাম ও লিবিয়াসহ ১০টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেয়। অথচ, ২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার পর বিমান তার বহর সম্প্রসারণে ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ১৯ হাজার ২০ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, টানা ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম দূরপাল্লার গন্তব্যের জন্য উপযোগী বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজকে স্বল্পপাল্লার গন্তব্যে ব্যবহার করছে বিমান। যে উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক, টরন্টো বা টোকিওর মতো দূরের গন্তব্যে ফ্লাইট চালানো সম্ভব, সেগুলো দিয়ে ঢাকা-সিঙ্গাপুর, ঢাকা-মালয়েশিয়া ফ্লাইট চালানো হচ্ছে। এটা লাভজনক নয়। দুর্বল পরিকল্পনার কারণেই বিমান লোকসানের ঘানি টানছে।