ভোক্তা আইনে যুক্ত হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি
ভোক্তা অধিকার কোনো মজুতদারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মাত্র ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিতে পারে। এ আইন দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে পণ্য মজুত, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি, ওজনে কম দেয়াসহ অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় মানছে না কোনো আইন। তাই বাধ্য হয়ে ১৯৭৪ সালের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিশেষ ক্ষমতা আইনটি ভোক্তা আইনে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এজন্য বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে আজ বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, খাদ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। আলোচনার সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপরই সংসদে অনুমোদন পেলে তা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইনে পরিণত হবে। এছাড়া জরিমানার পরিমাণও বাড়িয়ে দেড় গুণ থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ এবং দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশে ভোজ্যতেলের মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল ৩০ টন ৩০ দিন, খুচরা পর্যায়ে ৫ টন ২০ দিন এবং আমদানি পর্যায়ে ২৫ ভাগ ৫০ দিন মজুত রাখার নিয়ম করা হয়েছে। এ আইন এখনো কার্যকর বলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে। তবে অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মজুত করার ব্যাপারে আইনে কী আছে, তা তারা জানেন না।
এদিকে তেলের পাশাপাশি ধান, চাল মজুতের ব্যাপারেও আইনে বলা হয়েছে- পাইকারি পর্যায়ে ধান ও চাল ৩০০ টন ৩০ দিন এবং খুচরা পর্যায়ে ১৫ টন মজুত রাখা যাবে ১৫ দিন। আর আমদানিকৃত হলে ৩০ দিন রাখা যাবে। একে ভিত্তি করেই বাজারে প্রতিনিয়ত মজুতদারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও অবৈধ মজুত ঠেকানো যাচ্ছে না।
ফলে ২০০৯ সালের ২৬নং ভোক্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সাল থেকে এ আইন সংশোধনের জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন-২০২১ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তাতে ই-কমার্সকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
ভেজাল ও নকল ওষুধ বা খাদ্য বিক্রি করলে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। একই অপরাধে ভোক্তা আইন-২০০৯ এ তিন বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা আছে। তা সংশোধন করে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের বিধান অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভোক্তা আইনের ৩৭ থেকে ৫৬নং পর্যন্ত যে ধারা রয়েছে, সেখানেও সংশোধন করে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। যেমন- ৫০নং ধারায় নকল পণ্য প্রস্তুত বা উৎপাদন করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা থেকে তিন লাখ করার বিধান করা হচ্ছে।
৫১নং ধারাতেও মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া ৫৩নং ধারায় অবহেলার কারণে সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য ও জীবনহানি ঘটলে দুই লাখ টাকার যে জরিমানার বিধান আছে, তা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধিত আইনে। একই সঙ্গে ৪৫নং ধারায় প্রতিশ্রæত পণ্য বা সেবা বিক্রি বা সরবরাহ না করলে ৫০ হাজার থেকে এখন লাখ টাকা জরিমানা এবং ৪১ ধারায় কেউ ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করলে দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, ভোক্তাদের স্বার্থে এ আইন সংশোধন করার জন্য অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। বুধবারের সভায় সব কিছু চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। কোনো আপত্তি না থাকলে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হবে এবং ভোক্তাদের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। ভোক্তা আইন ও কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি ভোক্তা আইন এবার আলোর মুখ দেখবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মজুতদারি নিষিদ্ধ করে মজুতদার বা কালোবাজারির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তির বিধান আছে। অপরাধের মাত্রা ভেদে অন্যান্য মেয়াদের কারাদণ্ড ও জরিমানা করার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
অন্যদিকে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ৪ মে ১৩নং আইনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং চালকল মালিকরা কী পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুত করতে পারবেন। এতে বলা হয়েছে- সরকারের লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যসামগ্রী মজুত রাখতে পারবেন না।