শিকল দিয়ে বেঁধে যেভাবে নির্যাতন করা হলো শিশুকে

0

ঈশ্বরদী(পাবান) প্রতিনিধি: বাজারে দোকানের সামনে গিয়ে কাঁদছিল শিশুটি। পা ও কোমড়ে লোহার শিকলের এক প্রান্ত বাধা। আরেক প্রান্ত খোলা। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, সে এমন কোথা থেকে পালিয়ে এসেছে, যেখানে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। শিশুটির সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পায় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলায়। উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম মোবারক (১১)। সে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের কদিমপাড়া বুড়া দেওয়ান নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে পড়ে। বাড়ি আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বাঁচামরা গ্রাম। বাবার নাম নজরুল ইসলাম। অবাধ্য হওয়ার কারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো বলে স্বীকার করেছেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল করিম। পুলিশ পরে ওই অধ্যক্ষসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

উদ্ধার হওয়া শিশুটির বরাতে ঈশ্বরদী থানার পুলিশ জানায়, বুড়া দেওয়ান নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল করিম শিশুশিক্ষার্থী মোবারকে গেল বুধবার থেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন। মাদ্রাসার নির্দিষ্ট একটি কক্ষ থেকে বের হতে দিতেন না। তিনদিন এভাবে থাকার পর শুক্রবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে দেড়টার দিকে পালিয়ে এসে কদিমপাড়া এলাকার একটি দোকানের বারান্দায় এসে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় লোকজন সেখানে তাকে কাঁদতে দেখে পরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। শিশুটির কাছে সবকিছু শোনার পর ওই রাতেই অধ্যক্ষসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

খবর পেয়ে মোবারকের মা মূর্শিদা খাতুন থানায় এসে ছেলেকে বাসায় নিয়ে যান। তিনি জানান, ছেলেকে আরবি শেখানোর জন্য মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন। সে মাদ্রাসায় থাকতে চাইত না। তাই বলে শিক্ষকেরা তাঁর ছেলেকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন, এটা তিনি জানতেন না।
নির্যাতিত শিশুর বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর ছেলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছেলের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাকে তিনদিন ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে। মোবারকের সাথে যখন কথা হল তখনো তার কোমড়ের চোখের নিচে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন।

এদিকে অধ্যক্ষ আব্দুল করিম জানান, তিনি ছুটিতে গিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের দেখভালের দায়িত্ব ছিলো শিক্ষক পিয়ারুল ইসলামের উপর।
শিক্ষক পিয়ারুল জানান, শিশুটি অবাধ্য ছিল। সে পড়ালেখা ফাঁকি দিতে প্রায়ই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যেত। তাই তার দাদির নির্দেশে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ কবির জানান, আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে ওই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈশ্বরদী উপজেলা মানবাধিকার সমিতি এবং ইপিডি প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেনে বিডি২৪ ভিউজ কে বলেন, নির্যাতনের এই ঘটনা নির্মম। শিশুরা ভুল করতে পারে। তাদের নির্যাতন নয়, শোধরানোর জন্য স্নেহ ও ভালোবাসা দিতে হবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.