নতুন জাত উদ্ভাবনে উৎপাদন বাড়ছে গম ও ভুট্টার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গমের নতুন বীজ উদ্ভাবনে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট। দিনাজপুরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালে গমের হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ৩.১৩ মেট্রিক টন, সেখানে নতুন তিনটি জাত ফলন দিচ্ছে হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫.৫০ মেট্রিক টন। গমের পাশাপাশি ভুট্টারও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে বেড়েছে উৎপাদন। এখন ভুট্টার হেক্টরপ্রতি ফলন হয় ১৪ মেট্রিক টন পর্যন্ত, যা আগে ছিল ১০ মেট্রিক টনের নিচে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত গমের ৩৬টি জাত উদ্ভাবন করেছে। নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত বেশি ফলন দেওয়ার পাশাপাশি ব্লাস্ট প্রতিরোধী, স্বল্পমেয়াদি, তাপ-সহিষ্ণু, মরিচা ও পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধী। গমের এসব জাত আবাদ করলে ব্লাস্ট নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না। গমের পরে ভুট্টার অবস্থান। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভুট্টার নতুন তিনটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এসব জাত তাপসহিষ্ণু, দুর্যোগ ও রোগ সহনশীল। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ভুট্টার নতুন নতুন রোগ আসছে। এ পর্যন্ত ভুট্টার ২৮টি রোগ নির্ণয় করা হয়েছে। নতুন জাতগুলোতে এই ২৮টি রোগের আক্রমণের শঙ্কা নেই বললেই চলে। এসব নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। ভালো মানের ভুট্টা ও গমের বীজ উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ইনস্টিটিউট আরও জানায়, ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাইয়ের আক্রমণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তা থেকে উত্তরণের উপায়গুলো খুঁজে বের করা হচ্ছে। গম ও ভুট্টাজাতীয় শস্য সংগ্রহ করতে ময়েশ্চার লেভেল ১২ শতাংশের নিচে আনতে হবে। ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে। জাত সম্প্রসারণ করতে হবে। কৃষকদের উৎপাদিত গমের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। নীতি-নির্ধারণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। মূল্য সমন্বয় করে গম ও ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে এক বছরের মধ্যেই ১০-১৫ শতাংশ আবাদ বাড়বে। সবাইকে নিয়ে উন্নত জাতের গম ও ভুট্টার আবাদ সম্প্রসারণে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, ‘গম দেশের দ্বিতীয় প্রধান দানাদার খাদ্য। প্রতি বছর গমের ১৩ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়ছে। দেশে গমের চাহিদা বছরে ৭০ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন মাত্র ১২.৪৬ লাখ মেট্রিক টন! বাকি গম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গমের এই আমদানি-নির্ভরতা কমাতে হবে। এ লক্ষ্যেই বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। সেগুলো সম্প্রসারণ করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। গম আবাদে পানি কম লাগে এবং এই ফসলের দুর্যোগে ক্ষতি কম। চর এলাকা, রাজশাহীর খরাপ্রবণ এলাকা, সিলেটের পতিত জমি, উত্তরাঞ্চলের উঁচু ও বেলে মাটিতে গম আবাদের লক্ষ্য নিয়ে বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু গমই নয়, প্রতিষ্ঠানটি ভুট্টা নিয়েও কাজ করছে। বর্তমানে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন শুধু গোখাদ্যই নয়– পোল্ট্রি ও ফিসফিড, তেল উৎপাদন, বেবি কর্ন, সুইট কর্নসহ নানাভাবে উপকারে আসছে ভুট্টা। দেশে প্রধান খাদ্য চাল, এরপরেই গম ও ভুট্টার অবস্থান। গম ও ভুট্টার কোনও বিকল্প নেই। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, খাদ্য চাহিদা বাড়ছে। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বীজ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
নতুন উদ্ভাবিত জাত দ্রুত কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহফুজ বাজ্জাজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেসব জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে সেগুলো সম্প্রসারণের কাজ চলছে। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোতে ফলন বা উৎপাদন বেশি, সেজন্য কৃষকদের কাছে এর বীজের বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে এখনও আমরা কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করতে পারছি না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে। নতুন জাতের মধ্যে “বারি গম ৩৩” ব্যাপক জনপ্রিয়। ব্লাস্ট প্রতিরোধীসহ বিশেষ কিছু গুণাগুণ থাকায় জাতটির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেশি। ওই জাতটি বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে তবে এখনও শতভাগ না। তা ছাড়া গম ও ভুট্টার গত দু-তিন বছরের মধ্যে উদ্ভাবিত অন্যান্য জাতগুলোও সম্প্রসারিত করার কার্যক্রম চলছে। কৃষকদের মাঝে পুরোপুরি সম্প্রসারিত হলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে তা পূরণ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতগুলো সম্প্রসারণে প্রধান সমস্যা জমি সংকট। বীজ তৈরির জন্য আমাদের মাত্র ৫০ একর জায়গা রয়েছে। এই সামান্য জায়গাতেই গম ও ভুট্টার বীজ তৈরি করা হয় আবার গবেষণা কার্যক্রম চালাতে হয়। এখানে বীজ তৈরি করে আবার সেগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আরও জায়গা থাকলে দ্রুত নতুন উদ্ভাবিত এসব বীজ তৈরি করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যেত। জায়গা সংকটের বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়েও জানিয়েছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার।’
নতুন জাত ছড়িয়ে দিতে বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।