বিশেষ নজর মধ্যপ্রাচ্যে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার ‘মধ্যপ্রাচ্যে’র দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা এবং মহামারী করোনার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরব বিশ্ব বা মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ দশটি দেশের কাছ থেকে অন্তত ১২ খাতে সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ খাতে সহজ শর্তের বিনিয়োগ ও জ্বালানি আমদানির বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস রেমিটেন্স আহরণে নতুন জনশক্তি রফতানি এবং পণ্য রফতানির মতো বিষয়ে আগ্রহী সরকার। চলতি মাসের শেষ নাগাদ সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের (জেসি) বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ওই বৈঠক সামনে রেখে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কি ধরনের সহযোগিতা চায় তা জানতে চেয়েছে সৌদি আরব। জেসি বৈঠকেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি রূপরেখা তুলে ধরবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কট দূর করতে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে।
ঘন ঘন লোডশেডিং এবং সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে লক্ষণীয়। এর পাশাপাশি সিংহভাগ রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোহিতা ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি হয়ে থাকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে।
একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অদক্ষ-দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আহরণ করা হচ্ছে। কৃষি উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় যে সার, তার সিংহভাগ আমদানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক সঙ্কট ও ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
এ অবস্থায় ডলার সঙ্কট এবং সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা বেশি কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে লোডশেডিং এবং এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
আগামী ৩০-৩১ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য ১৪তম জেসি বৈঠকে যোগদানের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে যোগদানের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সংক্রান্ত কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ইআরডি।
এসব সভায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কাছে ১২ খাতে সহযোগিতা চাওয়া হবে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও কনস্যুলার, বেসরকারি বিমান চলাচল, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক, বিনিয়োগ, আবুধাবি উন্নয়ন ফান্ড, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত, সামুদ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা খাত এবং মানবিক ও দাতব্য সহায়তা সংক্রান্ত সহযোগিতা অন্যতম।
সৌদি আরব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ-সৌদি আরব। এছাড়া সৌদি আরবের মতো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো হবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, মিসর এবং তুরস্কের সঙ্গে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও জনশক্তি রফতানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে এসব দেশকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যপ্রাচ্য শাখা-১ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সৌদি আরবের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য জেসি বৈঠকেও এ সংক্রান্ত একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আলাদা কর্মসূচি রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে।
ইতোমধ্যে বিডার পক্ষ থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার কথা সৌদি আরবকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আরব বিশ্বের শীর্ষদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে বলে মনে করছে ইআরডি।
আর এ কারণেই ১৪তম জেসি বৈঠক সামনে রেখে এবার জোরেশোরে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে বড় অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, চিকিৎসা খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের উদ্যোক্তারা ইচ্ছা করলে ওই সব খাতে বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। আরব বিশ্বে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং অদক্ষ জনশক্তির এখনো প্রচুর চাহিদা আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চাইলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল জনশক্তি নিতে পারে। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের সহযোগিতা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। তার মধ্যে বছরে ৪০ লাখ টন শুধু ডিজেল আমদানি হয়ে থাকে। দেশে পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি যানবাহন জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৩৪ শতাংশ নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।
এসব জ্বালানি তেলের জন্য আবার নির্ভর করতে হয় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ওপর। বাংলাদেশ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। তেল সরবরাহকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সৌদি আরবের সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো), আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (অ্যাডনক), কুয়েতের কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (কেপিসি), মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড (পিটিএলসিএল), আরব আমিরাতের এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইনক), চীনের পেট্রোচায়না (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড ও ইউনিপেক (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড, ইন্দোনেশিয়ার পিটি বুমি সিয়াক পুসাকু (বিএসপি), থাইল্যান্ডের পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড, ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল)।
এর বাইরেও উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেও জ্বালানি তেল কেনে বিপিসি। অর্থাৎ জ্বালানি তেলের প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানি হয়ে থাকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এর আগে ২০১৯ সালে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছিল।
এসব চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুই দেশই লাভবান হতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চলমান সঙ্কট দূর হবে। এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেরও বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকো ইতোমধ্যে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর জন্য খরচ হবে দেড় থেকে ২ বিলিয়ন ডলার। সৌদি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন এলএলসি বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে অনেক বেশি উৎসাহী।
প্রতিষ্ঠানটি ৭টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং গত বছরের নবেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের সময় প্রায় ১ দশমিক ৬৮৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ দ্রুত প্রয়োজন। দেশটির সঙ্গে যেকোনো ফোরামে আলোচনায় এ বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
তিনি জানান, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে যেসব প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন অন্যতম। কিছু সৌদি বিনিয়োগ ইতোমধ্যে পাইপলাইনে রয়েছে। তার মধ্যে আছে পাবলিক প্র্ইাভেট অংশীদারিত্বে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল দিয়ে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের উন্নয়ন। কতটা সফলভাবে পাইপলাইনে থাকা কাজগুলো পরিচালনা করতে পারা যাবে তার ওপর আরও সৌদি বিনিয়োগ অনেকাংশে নির্ভর করবে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য জ্বালানি সংস্থা এসিডব্লিউএ পাওয়ার চট্টগ্রামে একটি ৭৩০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যৌথ উদ্যোগে ১০০ মেগাওয়াট আইপিপি সৌর প্রকল্প নির্মাণে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় আল-ফানার। আল-বাওয়ানি নির্মাণ ও প্রকৌশল প্রকল্পের জন্য দক্ষ মানব সম্পদের কর্মসংস্থানে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী।
বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতি ॥
বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের ১৪তম বৈঠকের প্রস্তুতি জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে কার্যপত্র তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী ৩০-৩১ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য ওই বৈঠকে বিদ্যুৎ জ্বালানি, জনশক্তি রফতানি, উৎপাদন পণ্যের রফতানি বাড়ানো, হালাল পণ্য বিশেষ করে মাছ-মাংস রফতানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য রফতানি এবং সার উৎপাদনে সৌদি আরবের সহযোগিতা চাওয়া হবে।
এছাড়া সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির সুযোগ রয়েছে। দেশের গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তারা এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে করা এ পর্যন্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সৌদি আরবকে অনুরোধ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশন বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ।
সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এসব চুক্তি এখন বাস্তবায়ন হতে হবে। জানা গেছে, পেট্রোবাংলা এবং আরামকোর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সংক্রান্ত একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এতে দেশের এলএনজি সঙ্কট দূর হবে। এছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রতিদিন ৩ মিলিয়ন টন ক্রুড পামঅয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণে সৌদি আরবের সহযোগিতা চেয়েছে।
এটি বাস্তবায়ন হলে ৬৮ হাজার ব্যারেল রিফাইনড পেট্রোলিয়াম পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং বিশ্ববিখ্যাত এসিডব্লিউও পাওয়ারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এতে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট (আইপিপি) নির্মাণ এবং ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ উৎপাদনের একটি চুক্তি রয়েছে।
এসব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে সৌদি আরবের আরও ২০ কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। সম্প্রতি সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি আরও বলেন, যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, আমরা তাদের দেব। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের আরও অনেক কিছু করার আছে।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপির ভিত্তিতেও দেশটি বিনিয়োগে আগ্রহী। মূলত বাংলাদেশের অবকাঠামো, চিকিৎসা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কয়েক মাস আগে এ ধরনের একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন।