বেআইনি ধর্মঘটে জেল-জরিমানা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কোনো পরিষেবাকে ‘অত্যাবশ্যক’ ঘোষণার পর কর্মীরা সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করতে পারবেন না। কাজও বন্ধ করা যাবে না। মালিকরাও লে-অফ ঘোষণা করতে পারবেন না। শ্রমিক পর্যায়ে কেউ আইন ভাঙলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদন্ড হতে পারে। আর মালিক পর্যায়ে ভাঙলে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও এক বছরের কারাদন্ড হবে। এমন বিধান রেখে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (২০২৩-২০৫০) খসড়া, ২০২৩ সালের সরকারি ছুটির তালিকা, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন এবং জাতীয় সংবিধান দিবস ঘোষণা-সংক্রান্ত প্রস্তাব বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘এসেনসিয়াল সার্ভিসেস মেইনটেনেন্স অ্যাক্ট, ১৯৫২’ ও ‘দি এসেনসিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮’ এই দুটোকে একসঙ্গে করে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২২’ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এই আইন পাস হলে সরকার কোনো সময় যদি প্রয়োজন হয় বিভিন্ন সার্ভিসকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। এটা ঘোষণা করলে সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করা যাবে না, কাজও বন্ধ করা যাবে না। মালিকরা লে-অফও করতে পারবেন না। এই আইন ভাঙলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে ধর্মঘট করলে তাকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। কেউ যদি আইন ভাঙতে প্ররোচিত করে তাকে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে- অত্যাবশ্যক করতে বোঝায় যেমন- ডাক, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজ। জল, স্থল ও আকাশপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিমানবন্দর পরিচালনা, স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা, কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করার কাজ, সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম, প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম। সরকার যদি মনে করে কোনো কারণে কখনো এগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, তবে ঘোষণা করতে পারবে। সেই ঘোষণা সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য কার্যকর থাকবে। এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু বা মাটি উত্তোলনের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে আইনটিকে যুগোপযোগী ও সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধনের জন্য আনীত আইনটি ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ নামে অভিহিত হবে। ইজারাদারদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে প্রস্তাবিত আইনে কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বালু বা মাটি তোলায় কোনো ইজারাদার দুর্নীতির আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আজীবন নিষিদ্ধ হবে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি অপরাধের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার (খননযন্ত্র), বালু বা মাটিবাহী যানবাহন বা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবনায় বলেছে, বালু ও মাটি উত্তোলনে কোনো অপরাধ করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হবে। অপরাধী বালুমহালের ইজারাদার হলে তার ইজারা বাতিল বা ইজারামূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে এবং আগামীতে যাতে কোনো বালুমহাল ইজারায় অংশ নিতে না পারে সেজন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে বা এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী ব্যক্তিরা (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনূর্ধ্ব ২ বছর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।