দ্বীপসংশ্লিষ্ট পর্যটন এলাকার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বীপসংশ্লিষ্ট পর্যটন স্থানগুলোর উন্নয়ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং নৌ-পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিক ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া এবং প্রকল্প এলাকার ক্রমবর্ধমান বাল্ক কার্গো ও পণ্য মালামাল লোডিং-আনলোডিংয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামী মঙ্গলবার এ প্রকল্পসহ আরও ৯টি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায়। শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা একনেকের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে

এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চল-২ ও ৪ এর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামোসহ অঞ্চল-২ ও ৫ এর সার্ভিস প্যাকেজ উন্নয়ন প্রকল্প, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদু্যতিক-যান্ত্রিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন (জেড-২০৩১) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, দিনাজপুর শহর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন, গোপালগঞ্জ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ও বরিশাল মেট্টোপলিটন ও খুলনা জেলা পুলিশ লাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং তেজগাঁওস্থ বাবিবা ঘাঁটি ‘বাশারস্থ কমান্ড স্টাফ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট’কে বাবিবা ঘাঁটি কক্সবাজার স্থানান্তর প্রকল্প।

পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দ্বীপসংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আগামী মঙ্গলবার বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বিআইডবিস্নউটিএ।

বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব পর্যটন স্থান রয়েছে সেগুলোকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়ে পর্যটক বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে পর্যটন খাতে সরকার যে পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে তার সঙ্গে পর্যটক বিশ্লেষকরা সম্পৃক্ত থাকলে আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে বলা হয় নদীর দেশ। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। আছে অপার সৌন্দর্যের অসংখ্য হাওড়। পানির এত সমাবেশের পরেও দেশে পানিকেন্দ্রিক পর্যটন সেভাবে বিকশিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে মালদ্বীপ এগিয়ে আছে। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা ৩১০টি। এ ছাড়া অসংখ্য হাওড়-বাঁওড়-বিল রয়েছে। আছে সুবিশাল সমুদ্রতট। এসব কারণে পানিভিত্তিক পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম বলেন, মঙ্গলবার একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন প্রকল্প এ সভায় উপস্থাপিত করা হবে। দ্বীপসংশ্লিষ্ট পর্যটন স্থানগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোর লোকজনের মালামাল পরিবহণ ও যাতায়াত খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বন্দর এলাকায় পরিবাহিত মালামাল সুষ্ঠু ও নিরাপদ ওঠানামা নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, পর্যটন খাতের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিকভাবে এ স্থানগুলো কাজে লাগানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকার উন্নয়ন করেছে। বাজেটেও এর জন্য পৃথক বরাদ্দ রয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম এলাকার মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা, কক্সবাজার এলাকা সোনাদিয়া ও টেকনাফ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়া হলে পরিবহণ মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির অবদান উলেস্নখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য ব্রম্নরো অব রির্সাচ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসুলেশন (বিআরটিসি), বুয়েট সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য নিম্নোক্ত জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সাবরাং টু্যরিজম: কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ২৭ একর এলাকা জুড়ে তৈরি প্রস্তাবিত সাবরাং টু্যরিজম পার্ক কক্সবাজার জেলার প্রথম সম্পূর্ণ পর্যটন পার্ক হবে। পার্কটি এ সৈকতের সামনে অবস্থিত এবং এটি থেকে সাগর পথে প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন যেতে মাত্র আধা ঘণ্টা সময় লাগবে। এ কারণে এখানে যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মিরসরাই: মিরসরাই চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা ৩০ হাজার একর জমির ওপর এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব দিকে অবস্থিত, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব ম্যানগ্রোভ বন ও জলাভূমি এবং দক্ষিণে ফেনী নদী অবস্থিত। এলাকাটিতে প্রবেশের জন্য সিডিএসপি ও বাউবো নির্মিত দুটি সড়ক বাঁধ ব্যবহার করা হয়। এ দুটি বাঁধ দুটি সড়ক দ্বারা সংযুক্ত, উত্তর দিকে প্রকল্প রোড এবং দক্ষিণ দিকে আবু তোরাব বেড়িবাঁধ রোড। এই এলাকাটিতে সহজে প্রবেশ করার জন্য আবু তোরাব জংশনে বিদ্যমান বাঁধ থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ৫ মিটার প্রস্থ এবং ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর একটি প্রবেশ পথ নির্মাণ করা হবে। জোয়ার এবং বর্ষাকালে পানি যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য উত্তর ছড়া প্রস্তাবিত এলাকার সীমানা বরাবর একটি বাঁধ সুপার ডাইক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। উত্তর দিকের মধ্যে বিদ্যমান সিডিএসপি বাঁধ দ্বারা সুরক্ষিত বাঁধের মোট দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার।

সন্দ্বীপ: চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ প্রায় ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর তিনটি ফেরিঘাট রয়েছে, সেগুলো হলো- মাঝিরহাট ঘাট, সন্দ্বীপ পূর্ব এবং গুপ্তছড়া ফেরিঘাট। মীরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে অনেক শ্রমিক সন্দ্বীপে বসবাস করবে ও এই দ্বীপ হতে কর্মস্থলে যাতায়াত করবে।

সোনাদিয়া: কক্সবাজার থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। সোনাদিয়া দ্বীপ শুঁটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। সম্ভাব্য পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধাদি ও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.