বিশ্বমানের বিষয় যুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ভার্সিটিতে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটদের বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে সরকার থেকেও নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ও চাকরির বাজার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোলা হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। গাজীপুরে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতেও নতুন নতুন বিষয় খোলা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ডেটা সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও আইওটির মতো বিশ্বমানের বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের তরুণরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারবেন। একই সঙ্গে বিশ্ব চাকরির বাজারে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিলেই দেশের বাইরে থেকে মানুষ আনতে হয়। এর জন্য গুণতে হয় অনেক অর্থ। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা গেলে এই ধরনের সংকট দূর হত। নলেজ গ্লোবাল ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১৩৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৯তম। সার্বিক ইনডেক্সে ১১৪তম। শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চেয়েও পিছিয়ে উচ্চ শিক্ষা।
বাংলাদেশে শুধুমাত্র কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে আছে যা, ১১৪তম ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। শিক্ষায় কারিগরির সংমিশ্রণ করে দেশের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়টি এসব সংকট থেকে বেরিয়ে আসতেই আইটি সেক্টরে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে । শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তির সংশ্লেষ সংযুক্ত করে বেস্ট এডুকেশন সিস্টেম দাঁড় করাতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। যাতে বিশ্বের মধ্যে সেরা একটি শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থায় টেকনোলজি ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এর জন্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে ভাল প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সারাবিশ্বেই বর্তমানে আইসিটি এডুকেশন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একারণে আমাদের এই বি্বেবিদ্যালয়েও নতুন চার বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। এরমধ্যে আইওটি, সাইবার সিকিউরিটি ও ডেটাসায়েন্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও নেটওয়ার্ক ডিজাইনের মতো বিষয় রয়েছে।

যে চার নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে একটি অনার্স কোর্স চালু হতে যাচ্ছে যার নাম আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংকস)। এর সঙ্গে রোবোটিক্সও যোগ করা হবে। এ বিষয়ে উপাচার্য মাহফুজুল বলেন, বিষয়টি কিভাবে কাজ করবে যেমন- একজন কৃষক মাটিতে ধানের চারা রোপণ করেছে। কখন পানি লাগবে, কখন সার লাগবে তার জন্য সিগন্যাল দেবে। শুধু তাই নয় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ও সার ছিটানোর ব্যবস্থাও থাকবে। এর সঙ্গে আবহাওয়ার তারতম্যও দেখা যাবে। এর ফলে যেমন খরচ কমবে এর সঙ্গে বাড়বে উৎপাদন। এভাবেই দেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পাবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যেতে এখন থেকেই এ বিষয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। এটি না হলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নও সম্ভব হবে না। প্রযুক্তিতে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। সেকেলে বিষয়গুলোর পরিবর্তে আধুনিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রয়োজন। এখন মানুষের শরীরেও ব্যান আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংক্স) ডিভাইস ঢোকানো হচ্ছে। এর বড় অ্যাপ্লিকেশন চলছে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। এটি ঘড়ির ছোট্ট একটি ডিভাইস। যা মানুষের শরীরে দেওয়া হয়। শরীরের যাবতীয় তথ্য এই ডিভাইসটি বিশ্লেষণ করে হাসপাতালের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।

কোনো অঙ্গে ত্রুটি থাকলে বা শুরু হলে সিগন্যাল বা মুঠোফোনে মেসেজও আসে সাইবার সিকিউরিটি ও ডেটা সায়েন্স ॥ সারা পৃথিবীতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মূলত বড় বড় তথ্য এটি বিশ্লেষণ করা সম্ভব এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। যে প্রতিষ্ঠান যত বেশি তথ্যকে বেশি বিশ্লেষণ করতে পারে সেই প্রতিষ্ঠান তত বেশি এগিয়ে যাবে। ফেসবুক ও গুগল শুধু মাত্র ডেটার ব্যবসা করেই হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে। যেহেতু ব্যবসা এখন আরও আধুনিক হয়েছে তাই সব কিছু মিলিয়ে এই ডেটা সায়েন্সের গুরুত্ব সারা পৃথিবীতেই অন্যতম। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডেটা সায়েন্সের সঙ্গে রোবোটিক্স যুক্ত করে একটি বিভাগ খোলা হচ্ছে।

উদাহরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, অস্ট্রেলিয়ার একটি রাজ্যের আবহাওয়া খুবই অনুমেয়। ওই রাজ্যে ঠা-ার সময় বৃষ্টিও হয়। দেখা যাচ্ছে ওই রাজ্যে এখন মাইনাস ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ১০ মিনিট পর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র ডেটা সায়েন্স ব্যবহার করেই সেখানে ৭২ ঘণ্টা পারফেক্ট আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। যা কোনো অনুমান নির্ভর নয়। শুধুমাত্র তথ্য বিশ্লেষণ করেই কাজটি করা হয়ে থাকে। ওখানকার নাগরিকরাও এই রিপোর্ট দেখেই তাদের কাজকর্ম-চলাফেরা করে থাকেন।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন হবে যেখানে একজন মানুষের জন্ম থেকে কোন দিন কোন রোগে ভুগেছেন কি শারীরিক সমস্যা তার ছিল তা সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে তিনি কোনো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে তার সব তথ্য একটি ক্লিকেই দেখা যাবে। এর নামই হলো ডেটা সায়েন্স। এর ফলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়ে যাবে। এমনকি চিকিৎসকও লাগবে না। একটি কম্পিউটার শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করে যে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ দিবে যা একজন চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের থেকেও হাজারগুণ নির্ভুল হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই ডেটা সায়েন্সের প্রয়োগ অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যখন বাংলাদেশেও এই ধরনের বিষয় চালু হবে। এর প্রস্তুতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করা হচ্ছে ডেটা সায়েন্স। এই বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের দেশের বাইরের চাকরির বাজারেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ॥ আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করছি সেটা মোবাইল হোক বা বাসার মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সব জায়গায় এর উপস্থিতি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ভবিষ্যতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এখনো আমাদের আংশিকভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করে। দেখা যাচ্ছে আমরা ফেসবুকে কি দেখতে ভালোবাসি তা আমাদের ফিডে অটোমেটিক চলে আসছে। আবার আমরা একটি পণ্য কিনতে চাচ্ছি বারবার সেই পণ্যের বিজ্ঞাপনও বারবার আমাদের দেখানো হচ্ছে। এটি হচ্ছে মূলত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.