‘সবচেয়ে বড় ঋণ সহায়তা’
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি হলো বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এর পরিমাণ ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যেসব খাতে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, বাজেট সাপোর্ট ও ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন ও সবুজ বিনিয়োগে উৎসাহী করা।
বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে সংস্থাটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের সঙ্গে সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠান শেষে দুই পক্ষের মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খাতুন ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে আবাসিক প্রতিনিধি।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ কার্যক্রমের আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের প্রশংসা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গণমাধ্যমকে জানান এর আগে কখনোই একদিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি হয়নি।
যে ৫টি প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয়েছে তার একটি হলো-আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি। বিশেষ করে নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সড়কসহ অন্য যোগাযোগব্যবস্থার
উন্নয়ন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল, বুড়িমারি ও ভোমরা স্থলবন্দরের সার্বিক সক্ষমতা বাড়বে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতও ভুটানের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করবে। এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক ৭৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে। বন্যা ঝুঁকি কমাতে যে প্রকল্প নেওয়া হবে তাতে একদিকে যেমন ভাঙন থেকে নদীতীর রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর বন্যার ঝুঁকি কমানো যাবে। এ প্রকল্পের জন্য ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার। প্রকল্পটির আওতায় মূলত প্রকল্প এলাকায় মানুষ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যা ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়াও বাজেট সহায়তা হিসেবে আরেকটি প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।
সেই সঙ্গে আরও দুই-তিনটি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ডলার দেবে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে আরও গতিশীল করা, কম দূষণকারী, দক্ষ ও জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধির খাতে রূপান্তরে সহায়তা করা। বৃহত্তর ঢাকা ও এর বাইরে বসবাসকারী ২ কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।
বিশ্বব্যাংকের এ ঋণ গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ ও ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এ ছাড়াও রয়েছে প্রতিশ্রুতি ফি। অবশ্য বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরসহ অনেক দিনের জন্য কমিটমেন্ট ফি মওকুফ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের এ ঋণ চুক্তির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার আবাসিক অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটি আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। বিশেষ করে সামনে আমাদের বাজেট। এ বাজেট সহায়তা এ মুহূর্তে বিশেষ জরুরি। এ ছাড়া রিজার্ভের ওপর যে চাপ রয়েছে তা কিছুটা হলেও প্রশমন হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যেসব প্রকল্প নিয়ে চুক্তি হয়েছে এর মধ্যে জলবায়ু ও পরিবেশের বিষয় রয়েছে। এ সময়ে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলার জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। সুতারং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, আমি মনে করি তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে, সবুজ বিনিয়োগে উৎসাহী করতে বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্প সহায়তা প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দেশ। সুতরাং বন্যার ঝুঁকি কমাতে এ ঋণ অনেক সহায়ক হবে।
অন্যদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাবে, যা পরিশোধের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আর এ মুহূর্তে বাজেট সাপোর্ট সরকারের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। এ ঋণচুক্তির মধ্য দিয়ে সরকার কিছুটা হলেও বাজেট সাপোর্ট পেয়ে যাবে। তবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেন গতিশীলতা পায়, তা লক্ষ রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় প্রকল্পের টাকা যথাসময়ে ব্যবহার করা হয় না। আর বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলো যেন দ্রুত সম্পন্ন করা যায় তা মনিটরিং করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য হয়। ওই বছরেরই ৩১ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনেমারা। এরপর অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রথম ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এর পরিমাণ ছিল ৫৯ মিলিয়ন ডলার। আর তা নেওয়া হয় জরুরি অগ্রাধিকার খাতে। একই বছরের নভেম্বরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে পানি সরবরাহ খাতের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নেয় বিশ্বব্যাংক থেকে।