অনলাইন বিক্রির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ই-কমার্স খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বিক্রয়ের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বিনিয়োগস্বল্পতা ও লোকসানি পর্যায়ে রয়েছে। তাই এ খাতের বিকাশে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার আগামী বাজেটে অনলাইন মার্কটপ্লেস এবং খুচরা ব্যবসার ‘শ্রেণিবিন্যাস’ করার একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এর ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো ডিজিটাল বাণিজ্যের ওপর ভ্যাট দেওয়া থেকে মুক্ত থাকবে। এর আগে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার বিকাশে ১০ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা এবং পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়। ই-ক্যাব বলেছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ই-কমার্সভিত্তিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ খরচ অনেক বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে অনলাইন কেনাকাটায়। তাই সরবরাহ পর্যায়ে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানায় ই-ক্যাব। পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামসহ বিভিন্ন সহায়ক কার্যালয় ভাড়ার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির দাবিও জানায়।
জানা গেছে, বর্তমানে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোকে তাদের সাইট ব্যবহার করে প্রতিটি ডিজিটাল বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট দিতে হয়। যদিও তারা নিজস্ব পণ্য এবং পরিসেবা বিক্রি করছে না। এনবিআর কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে কখনো কখনো তাদের আগের দুই-তিন বছরের প্রতিটি বিক্রয়ের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভ্যাট চালান দেখাতে চেয়ে ভোগান্তিতে ফেলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান বিধান ডিজিটাল ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করে। ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিক্রি কমায় বিনিয়োগ সংকুচিত হচ্ছে, যা ই-কমার্স সেক্টরকে উৎসাহিত করতে এবং বাংলাদেশকে ডিজিটাল এবং স্মার্ট হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ই-কমার্স খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছরে এই বাজারের প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ২৫ শতাংশ। ২০২১ সালের শেষে বাজারের আকার ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। ই-ক্যাবের ধারণা, ২০৩০ সালের শেষে এ খাতের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।
ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রচলিত ব্যবসা এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ব্যবসার মধ্যে ভ্যাট বিধানের কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রকৃতপক্ষে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ই-কমার্স কোম্পানিগুলো মূলত তাদের মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। অথচ তারা ভ্যাট দায় নিতে বাধ্য। সরকার যদি বাজেটে এটা সংশোধন করে, তবে এ খাতকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।
ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ডেলিভারি চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, যা ডেলিভারিকে ব্যয়বহুল করে তোলে এবং গ্রাহকদের আরও চাপের মধ্যে ফেলে। কারণ ঢাকার বাইরে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা বসবাস করছেন, যাদের এক হাজার টাকার পণ্য ক্রয়ের জন্য প্রায় ১৫০-২০০ টাকা অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ দিতে হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভোক্তাদের বোঝা কমাতে, অনলাইন বিক্রিকে জনপ্রিয় করতে এবং ডিজিটালাইজেশনে সহায়তা করতে এই ভ্যাট প্রত্যাহার বা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে আমদানিনির্ভর জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেলে প্রযোজ্য কর কমাতে যাচ্ছে সরকার। আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৩৪ শতাংশ শুল্ককর থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৯ শতাংশ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, আগাম কর ২ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশসহ মোট শতকরা ৩৪ শতাংশ শুল্ককর বিদ্যমান রয়েছে। এসব শুল্ক-করসহ বর্তমান বাজারে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ১০৯ টাকা এবং অকটেন ১৩০ ও পেট্রোল ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভবিষ্যতে দাম কমানো কিংবা আন্তর্জাতিক ঊর্ধ্বমুখী বাজারের বাড়তি চাপ সামলাতে পেট্রোলিয়াম তেল, ক্রুড তেল, এইচবিওসি টাইপের মোটর স্পিরিট, এভিয়েশন স্পিরিটসহ অন্যান্য স্পিরিট, স্পিরিটের মতো জেট ফুয়েল, সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, জে.পি-১ কেরোসিন টাইপ জেট ফুয়েল, জে.পি-৪ কেরোসিন টাইপের জেট ফুয়েল, অন্য কেরোসিনের মতো জেট ফুয়েল, কেরোসিন, হালকা ডিজেল তেল, হাইস্পিড ডিজেল অয়েল ও ফার্নেস তেলসহ ১৩ ধরনের জ্বালানি তেলের ওপর অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ পুরোপুরি উঠিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।