যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশের মানবাধিকার রক্ষা করা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজ দেশের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজ দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত। আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়েছে?

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন ২০০১-এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল, তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কথা ছিল না কেন?

দেশি-বিদেশি আমি সবার বেলায় বলব। অনেকে আছেন, আমাদের ছবক দেন। মানবাধিকার শেখান। শেখ হাসিনা বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক।

সেটাই তাদের করা উচিত। ইউক্রেনে যুদ্ধটা বাধিয়ে দিয়ে আজকে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ রিফিউজি (শরণার্থী) কষ্ট পাচ্ছে। সিরিয়ায় কীভাবে গোলাগুলি, ফিলিস্তিনেও একের পর এক বোমা হামলা। এয়ার (বিমান) হামলাও করছে। সেটা নিয়ে কারও কোনো কথা নেই কেন? সেখানে কি মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?

তিনি বলেন, মানবাধিকারবঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ মানবাধিকারের কথা ওঠায়। আমরাই তো মানবাধিকারবঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে বাবা-মায়ের হত্যার বিচার করতে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তারা ২০০১ দেখেননি? ১৫ আগস্ট দেখেননি? ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এ দেশে কী ছিল দেখেননি? তখন তারা চোখেও দেখেননি, কানেও শোনেননি কী কারণে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে। আজ রোহিঙ্গারা যখন নির্যাতিত হচ্ছিল, ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মানবিক কারণে যখন এত মানুষের দায়িত্ব নিতে পারি। এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কী হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন?

বারবার বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনের প্রহসন শুরু হয়। জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। শুরু হয় ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের প্রহসন। ‘হ্যাঁ’ বাক্স পেয়ে জিতত। ‘না’ বাক্স নেই। ভোট দেওয়া লাগত না। এমনিতেই বাক্স ভরে যেত। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান মিলিটারি রুল ও সংবিধান লঙ্ঘন করে। জিয়াউর রহমান নির্বাচনের নামে প্রহসন করে রাষ্ট্রপতি পদটি কলুষিত করে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। আওয়ামী লীগকে শেষ করা ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা পার্টি ভাঙার খেলা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর শুরু হয় নির্যাতন। একদিকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয় জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি সেটা ভুলে গেছে। তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচনই ছিল-একেকটা গ্রুপ ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে। তারপর রেজাল্ট পাল্টাবে। ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। আওয়ামী লীগ সবসময় সংগ্রাম করে গেছে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে।

২০০১ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার জন্য কোনো কোনো মহল তৎপর ছিল। কারণ আমাদের গ্যাস বিক্রির একটা প্রস্তাব ছিল। আমি গ্যাস বিক্রি করব না সেই সিদ্ধান্ত দিলাম। খালেদা জিয়া লিখে দিয়েছিল-সে গ্যাস বিক্রি করবে। নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। নির্বাচনের দিনে কেউ ঘরে থাকতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সব উপনির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। মানুষের ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। সেটাই করে যাব।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এটা করে দিয়েছি। আমরা না থাকলে কেউ এটা দেখতও না। মানুষের দিকে তাকাত না। কিছু কিছু লোক হোল্ডিং করে দাম বাড়ায়।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, যে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে? এ কথা বলে কীভাবে? সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায়, বহু মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি করে শিশুদের হত্যা করছে। স্কুলে, শপিংমলে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। এমনকি বাঙালি মেয়েকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যা করছে। প্রতিদিনই তো তাদের প্রতিটি স্টেটে গুলি করে করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করছে। নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা তাদের আগে করা উচিত।

সরকার গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চায় : এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধনকালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চায় বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্র ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা চাই বাংলাদেশে যেন গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকে। বারবারই আমাদের দেশে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু সেই ২০০৯-এ সরকার গঠনের পর থেকে আমরা যে একটানা সরকারে থাকতে পেরেছি, পাশাপাশি আমাদের গণতান্ত্রিক ধারাটা মজবুত করতে পেরেছি সে কারণেই কিন্তু আজকে পার্লামেন্ট শুধু ভবন নয়, সারা দেশটাই কিন্তু বদলে গেছে।

একটানা আমরা সরকারে থাকার ফলে, একটা দীর্ঘ সময় পেয়ে পার্লামেন্টটাকে সুন্দর করে গোছানো গেছে, সাজানো গেছে। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে।

জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজার নিচতলা সংস্কার করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের নতুন কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে ফিতা কেটে নতুন এই কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি অফিসের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ এবং সংসদ-সদস্যরা।

সংসদের নতুন অফিস বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা ঘোষণা দিয়েছি, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট অফিস দরকার। সংসদের এই অফিসটা স্মার্ট অফিস হিসাবে তৈরি হয়েছে।

শেষ হলো বাজেট অধিবেশন : চলতি একাদশ সংসদের সর্বশেষ বাজেট (২৩তম) অধিবেশন শেষ হয়েছে। ৩১ মে শুরু হওয়া এই অধিবেশন বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর আগে সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি দেওয়া একটি রেকর্ড করা ভাষণ বাজানো হয়।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.