পাবনা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমে সভাপতি-সম্পাদকের দ্বন্দ্ব উভয়পক্ষের সভা বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা সদরের হিমাইতপুর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের বিবাদমান দু’গ্রুপের আহবান করা সভা বন্ধ করে দিয়েছেন পাবনার জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন এক মৌখিক নির্দেশনায় তিনি এই আদেশ দেন।
এদিকে আশ্রম সভাপতি ডক্টর শ্রী রবীন্দ্রনাথ সরকারের ডাকা সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সভায় যোগ দিতে বহস্পতিবার রাত থেকেই যশোর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বাস যোগে বিপুল সংখ্যক ভক্ত অনুসারীরা আশ্রমে এসে অবস্থান করছেন।
আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, নির্বাহী কমিটির পূর্বনির্ধারিত সভা প- করতে পরিকল্পিতভাবে সভাপতি তার অনুসারীসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের আশ্রমে ঢুকিয়েছেন। ঠাকুরের শান্তিময় আশ্রমকে অশান্ত করে তুলেছে সভাপতি ডক্টর রবীন্দ্রনাথ সরকারসহ তার অনুসারীরা।
এদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আশ্রমের সম্পাদক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আবেদন করেন এবং সন্ধেহভাজনদের বিরুদ্ধে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রম ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সভাপতি ও সম্পাদক গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বেলা ১১ টার দিকে সভাপতি অসুস্থতায় সুস্থতা কামনা করে মন্দিরের ভেতরে অনুসারী ও ভক্তরা প্রার্থণা করতে গিয়ে কৌশলে সভা করার অপচেষ্টাকালে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতিহত করেন। পরে সভাপতির অনুসারীরা জোরপূর্বক সভা বা সম্মেলন করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্দির থেকে বের হয়ে আসেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, আশ্রম থেকে থানায় অভিযোগ দেয়ার পর থেকে সর্বাত্মক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোন ধরণের নাশকতা প্রতিহত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে। উভয়গ্রুপ আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে আশ্রমের সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন মহোদয়ের নির্দেশে আমাদের নির্ধারিত নির্বাহী কমিটির সভা স্থগিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে প্রধান ফটকে। সেই সাথে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে নোটিশের কপি।
তিনি বলেন, নির্ধারিত এই সভায় সভাপতির নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আলোচনা ছিল। সেটা পরিকল্পিত ভাবে পন্ড করতে এবং নিজের অপরাধ ঢাকতে তিনি এই পাল্টা সভা দিয়ে আশ্রমের পরিবেশ অশান্ত করে নানা আশ্রমের নানা উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনার এজেন্ডাভিত্তিক সভা প- করে দিয়ে ঠাকুরের শৃংখলার প্রতি অবমাননা করলেন।
আশ্রম সম্পাদক রঞ্জন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমরা ঠাকুরের সেবক, অনুসারী, ভক্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে পরিবেশ উত্তপ্ত করায় ভীত ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি।
আশ্রমের সভাপতি ডক্টর রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, নির্বাহী কমিটির মিটিং সম্পর্কে আমি জ্ঞাত ছিলাম না। ঠাকুরের শান্তি ও কল্যাণে প্রশাসন যেটা করেছে তাতেই আমি কৃতজ্ঞ। নানা অনিয়ম, দূর্নীতি আর অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, যথাযথ প্রমাণ এনে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
যশোরের মনিরামপুর, ঝিকড়গাছা, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামের একাধিক ঠাকুর অনুসারী ও ভক্তের সাথে পূজাপার্বন বা কোন অনুষ্ঠান না থাকলেও কেন এসেছেন আশ্রমে এমনটি জানতে চাইলে তারা বলেন, শুনেছি এখানে কমিটি নিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের ঝামেলা চলছে। নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। একে অপরের মধ্যে কোন সমঝোতা নেই। সভাপতি সাহেব আমাদের আসতে বলেছেন জন্যই সারাদেশের নেতৃস্থানীয় ঋত্মিকগণ এসেছি। কেন আসতে বলেছেন তা আমরা সঠিক জানিনা। তবে এসে দেখছি ও জানছি গ্রুপিংয়ের কারণে ঠাকুরের শান্তির জায়গায় অশান্তি বিরাজ করছে।