সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু আওয়ামী লীগের
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সর্বাত্মক ‘ভোটযুদ্ধে’ নামছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে নির্বাচনী জোয়ার তুলতে প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। কেউ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেদিকে তাকিয়ে না থেকে এখন থেকেই সারাদেশের মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিলেও রাজপথও ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আগামী দিনের সব কর্মসূচিই হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনী জোট গঠন, দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত, সারাদেশে দলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব-বিভেদ দ্রুততার সঙ্গে নিরসনসহ নির্বাচনের সব প্রস্তুতির আগাম সব কাজ শেষ করতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে নামার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৩০ জুলাই গণভবনে আওয়ামী লীগের সারাদেশের সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিশেষ বর্ধিত সভায় ডেকেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই বর্ধিত সভা থেকেই জাতীয় নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি, সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ নিরসন করে দলকে সুদৃঢ় ঐক্যের ওপর দাঁড় করানো, বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচনকে ঘিরে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগদানসংক্রান্ত একটি সাংগঠনিক পত্র ইতোমধ্যে সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে দেশের সব জনপ্রতিনিধি, সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর কমিটির সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকদের এ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা দলের সভাপতির ধানম-ির কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ এই বর্ধিত সভার কারণে রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম নির্বাচনী সফরের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ জুলাইয়ের পরিবর্তে নির্বাচনী জনসভাটি হবে আগামী ২ আগস্ট। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রংপুরের এই জনসভার মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী জনসভা শুরু করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সারাদেশেই পর্যায়ক্রমে জনসভা, মহাসমাবেশের নামে সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজপথও নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সে জন্য বিএনপির আন্দোলনের বিপরীতে নানা কর্মসূচি নিয়ে তারাও মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর বৈঠকেও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তারা এক দফার কর্মসূচির নামে সারাদেশেই অতীতের মতো সহিংসতা-নৈরাজ্য ও অগ্নি-সন্ত্রাসের মতো কর্মকা- ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাই আমাদেরও রাজপথে থেকেই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, সারাদেশেই দলের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।
আগামী ৩০ জুলাই গণভবনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানিয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচন হবে আমাদের নিয়মে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে। এর বাইরে কারও চক্রান্তমূলক অভিলাষ বাস্তবায়ন হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির দাবি একটাইÑ শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ মানে সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, আগামী ৩০ জুলাই আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠেয় এই বিশেষ বর্ধিত সভায় সারাদেশ থেকে দলের তৃণমূল নেতা, জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসার দাবিতে এখনো অনড় রয়েছে দলটি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, এসব কর্মকা-ের মাধ্যমে বিএনপি সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে তারা। বিএনপি নিজ থেকে নির্বাচনে না এলে তাদের নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ নেবে না সরকার। বিএনপি নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলেও নির্বাচন হবে। কারও জন্য নির্বাচনী ট্রেন আর থেমে থাকবে না।
শুধু দলীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি নয়, পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটকেও আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে গত তিনটি নির্বাচনের মতো আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সারাদেশে নির্বাচনী আবহ গড়ে তুলতে মাঠে নামবেন শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলাদা নির্বাচনী ফ্রন্ট গঠিত হলে, সেটিকে ইতিবাচক হিসেবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন জোটের নেতারা। তারা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলেও সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। সেখানে অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেবে।
১৪ জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরেকটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করতে পারে। নতুন এই জোট উগ্র সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ১৪ দলীয় জোটের সহায়ক শক্তি হিসেবে তাদের ভূমিকা রাখবে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে নতুন জোটটির নির্বাচনবিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে নতুন কৌশল নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর জাতীয় পার্টি থাকবে মহাজোটে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টির বিষয়ে ভিন্ন কৌশলে এগোবে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সরাসরি দলের নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা কম।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনমুখী তৎপরতার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরে সমন্বিত গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু হবে। সারাদেশে বিভাগ, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বড় সমাবেশের আয়োজন করা হবে। কোথাও কোথাও মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এসব সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীকে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকেও আলাদা কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে মানুষের সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টাও চলবে। রাজনীতির মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস-সহিংসতা মোকাবিলায় চলমান শান্তি সমাবেশ ও রাজপথে সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপট এবং বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন শুরুর ঘোষণায় শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত করে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে আওয়ামী লীগের।
এর আগে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী ও নির্বাচনমুখী করার তৎপরতা চলবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩০ জুন বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দু’মাস আগেও বেশ কিছু মহানগর ও জেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে কয়েক দফা মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে আর কোনো সম্মেলন না করার হাইকমান্ডের নির্দেশনা থাকলেও সম্মেলন হওয়া সব জেলা-মহানগরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।