সেপ্টেম্বর থেকে বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার টিকা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে বিনামূল্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু করবে সরকার। প্রথমে স্কুলের ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েরা এ টিকা পাবে। পরে পর্যায়ক্রমে এ বয়সী অন্য মেয়েদেরও টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ জরায়ুমুখ ক্যানসার। এতে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ নারী মারা যান, যার ৯০ শতাংশই ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। বাংলাদেশে প্রতি লাখ নারীর মধ্যে ১৬ জন জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত এবং বছরে এ রোগে মারা যান ৬ হাজার ৫৮২ জন। জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগী শেষপর্যায়ে শনাক্ত হন বলে মৃত্যুসংখ্যা বেশি হয়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের জাতীয় টিকাসংক্রান্ত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (নাইট্যাগ) মতে, এক ডোজ এইচপিভি টিকা দিলে এ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিনামূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সাড়ে ২৩ লাখ টিকা হাতে পেয়েছি। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রাম ও বরিশাল এবং পরবর্তীকালে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহে এ টিকা দেওয়া হবে। আগামী নভেম্বরে আরও ২০ লাখ এবং ২০২৪ সালে আরও ৪২ লাখ টিকা পাওয়া যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ টিকা দিচ্ছে।
আরও ১০ কোটি করোনার টিকা পাচ্ছে দেশ : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে করোনার টিকা দিতে পারায় গ্যাভি (টিকা ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও খুবই খুশি। তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগামী পাঁচ বছরে ১০ কোটি করোনার টিকা দেবে। পাঁচ কোটি মানুষকে সেই টিকা দিতে পারব। বিনামূল্যে আমরা এ টিকা পাব বলে আশা রাখি। যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ টিকা দিতে খরচ হবে ৬০০ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, দেশে কলেরা রোগের টিকা প্রথম পর্যায়ে ১২ লাখ ডোজ, পরবর্তী পর্যায়ে ২৪ লাখ লোককে দুই ডোজ করে ৪৮ লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে।
ওষুধ কোম্পানি থেকে স্যালাইন নিচ্ছে সরকার : ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় স্যালাইনের সরবরাহ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদাও বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে নিচ্ছি। আমাদের অনেক বড় বড় ওষুধ কোম্পানি আছে, তারা আমাদের স্যালাইন সাপ্লাই দিচ্ছে, আমরাও তাদের কাছ থেকে নিতে থাকব।
সরকারের স্যালাইন প্ল্যান্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইপিএইচ) আগে স্যালাইন-ফ্লুইড তৈরি হতো। এখন সেটি বন্ধ আছে। উপযুক্ত স্থান সংকুলানের অভাবে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন সেটাকে নতুন করে মেশিনপত্র এনে, অবকাঠামোগত কিছু মেরামত করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন পরিদর্শন করে অনুমোদন দিলে আইপিএইচে আবার মানসম্মত স্যালাইন ও ফ্লুইড তৈরির কাজ শুরু হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গোপালগঞ্জে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) প্ল্যান্টে ভ্যাকসিনের একটা ইউনিট আছে, হয়তো এ বছরের শেষ নাগাদ সেখানে উৎপাদন শুরু করতে পারব। সেটি হলে বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে হবে না।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার : সরকার বা মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের সব জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ একটি মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ। এটি কারও একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এডিস মশা নিধন কার্যক্রম শুধু ঢাকাতেই পরিচালনা করলে হবে না, সারা দেশেই এটি জোরদার করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। স্যালাইনের প্রয়োজনও বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন লাগছে। হাসপাতালগুলো হিমশিম খেলেও চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি পড়ছে না। ডেঙ্গু মৌসুমে ঝুঁকি বাড়লেও আশা করা যায় সরকার সামাল দিতে পারবে।
ডেঙ্গুর টিকা প্রক্রিয়াধীন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ডেঙ্গুর টিকা এখনো প্রক্রিয়াধীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পরপরই ডেঙ্গুর টিকা আনার চেষ্টা করা হবে। যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।
বেড়েছে চিকিৎসক ভাতা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বেসরকারি পোস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের ভাতা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। দেশে বেসরকারি পোস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক রয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার ও ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। এ দুই শ্রেণির চিকিৎসকদের বাড়তি ভাতা দিতে সরকারের ৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।