সর্বজনীন পেনশন ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে নিবন্ধন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডিজিটাল মাধ্যম অনলাইনে নাম নিবন্ধন করার সুযোগে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে গ্রাহক। মাত্র দুইদিনে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত পেনশন কর্মসূচিতে চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২৯৫০ জন গ্রাহক। আর এসব গ্রাহকের কাছ থেকে পেনশন ফান্ডে জমা হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি। অনলাইন মাধ্যমে ৩০ হাজার ব্যক্তি নাম নিবন্ধন করেছেন। তবে যারা অনলাইনের মাধ্যমে টাকা জমা দিচ্ছেন কেবল তারাই ইউনিক আইডি নম্বর পেয়ে পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ টাকা জমা হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো গ্রাহকের পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। শনিবার রাত অবধি পেনশন কর্মসূচিতে গ্রাহকের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন। ১৮ বছর বয়সে একজন গ্রাহক পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। আর তিনি ৬০ বছর বয়সে পাবেন পেনশন সুবিধা। অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সে এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে যে কেউ ৪২ পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়সে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করলে তিনি সর্বোচ্চ সুবিধা ও বেশি মুনাফা ভোগ করতে পারবেন।
এর বাইরে ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫ এবং ৪০ বছর চাঁদা দিয়েও ৬০ বছর বয়সে পেনশন সুবিধা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাঁদা প্রদান করে বেশি মুনাফা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে প্রবাস স্কিমে। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার ৫০০০, ৭,৫০০ এবং ১০,০০০ টাকা। অন্যদিকে প্রগতি স্কিমে মাসিক ২০০০, ৩০০০ এবং ৫০০০ এবং সুরক্ষা স্কিমে মাসিক ১০০০, ২০০০, ৩০০০ এবং ৫০০০ টাকা চাঁদা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া সমতা স্কিমে মাসিক ১০০০ টাকা চাঁদা ধার্য্য করা হয়েছে, তবে এর মধ্যে গ্রাহক ৫০০ টাকা দিলে বাকি ৫০০ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে। অর্থাৎ পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে টাকা প্রদান করলে যে কেউ মেয়াদ শেষে জমাকৃত টাকার প্রায় আড়াই থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ গুণ বেশি মুনাফা পাবেন। পেনশন কর্মসূচি চালু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছেন।
সাধারণ গ্রাহকরা তাদের পরিচিত জন, আত্মীয়-স্বজন এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। কেউ কেউ দ্রুত নাম নিবন্ধন করে টাকা জমা দিচ্ছেন। আর এ কারণে ঘণ্টায় ঘণ্টায় গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেনশন স্কিমে টাকার পরিমাণ বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বশেষ শুক্রবার রাত পর্যন্ত এক কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি পেনশন ফান্ডে জমা হয়েছে। এছাড়া টাকা দিয়ে চূড়ান্তভাবে ইউনিক আইডি নম্বর পেয়েছেন ২৯৫০ জন গ্রাহক। তিনি বলেন, ঘরে বসে মোবাইল ফোনে নাম নিবন্ধন করে ইউনিক আইডি নম্বর নেওয়ার সুযোগ থাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। আমরা পেনশন স্কিমে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
আশা করছি, সরকারের এই কর্মসূচিটি খুব ভালোভাবে সফল হবে এবং এ থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন। জানা গেছে, পেনশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধ সবকিছুই ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে করা যাচ্ছে। তাই মানুষ তাদের সুবিধাজনক সময়ে নিবন্ধন করছেন। এতে আবেদনকারীর সংখ্যাও প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। এছাড়া কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায়ও তা করা যাবে। প্রাথমিকভাবে চার ধরনের নাগরিকের জন্য প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা, ও প্রবাসী এ চার প্রকারের প্যাকেজ রাখা হয়েছে। পরবর্তীকালে শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও দুই ধরনের প্যাকেজ চালু করা হবে।
সরকারি পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করার পর একজন পেনশনভোগী কেবল তার ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যদি চাঁদাদাতা মারা যান, তবে তার নমিনি পেনশন পাবেন। এক্ষেত্রে, নমিনি চাঁদাদাতার বয়স যে বছর ৭৫ হতো, ওই বছর পর্যন্ত পেনশন ভোগ করবেন। এদিকে, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে ১৮ বছর বয়সে যুক্ত হয়ে যিনি ৪২ বছর পর্যন্ত চাঁদা দিবেন তিনিই সর্বোচ্চ সুবিধা পাবেন। মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে ৪২ বছর পর মাসে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে।
এর বাইরে দশ বছর নিয়মিত চাঁদা দিয়ে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে একজন পেনশনার মুনাফা কম পাবেন। চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং তফসিলি ব্যাংকের যে কোনো শাখার মাধ্যমে।
কিভাবে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে ॥ সরকার ঘোষিত চার ধরনের পেনশন কর্মসূচির মধ্যে প্রবাস কর্মসূচিতে ১৮ বছর বয়সী একজন প্রবাসী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন, তবে ৪২ বছর পর তিনি মাসে পাবেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে। আবার ১৮ বছর বয়সী বেসরকারি কোনো চাকরিজীবী যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে তিনি ৪২ বছর পর মাসে পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়ও ১৮ বছর বয়সীরা কেউ যদি ৫ হাজার টাকা করে মাসে জমা দিয়ে পেনশনে যুক্ত হন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনিও মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন।
তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত সমতা পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে সরকার। সমতা কর্মসূচিতে একজন অংশগ্রহণকারীকে মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা, এর বিপরীতে সরকার দেবে আরও ৫০০ টাকা। এভাবে কেউ যদি ৪২ বছর ১ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে। এছাড়া প্রবাস কর্মসূচিতে মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে দশ বছরে পেনশন সুবিধা নিলে তিনি মাসে পাবেন ১৫ হাজার ৩০২ টাকা, প্রগতি স্কিমে মাসে ৫ হাজার করে চাঁদা দিয়ে দশ বছর পর মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে।
সুরক্ষা স্কিমে মাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে দশ বছর পেনশন পাওয়া যাবে প্রতিমাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা, একইভাবে সমতা স্কিমে মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে দশ বছরে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে এক হাজার ৫৩০ টাকা। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫ এবং ৪০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে পেনশন নিলে বেশি হারে পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে। জানা গেছে, ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন। পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হলে নিবন্ধনের কাজটি করতে হবে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে।
পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সেখানে দেওয়া আছে। অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা অনলাইনের মাধ্যমে টাকা জমা দিচ্ছেন কেবল তারাই আপাতত ইউনিক আইডি নম্বর পাচ্ছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে অনলাইন সিস্টেমটি আরও আপগ্রেড করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।