লোকবল সংকটে চরম ভোগান্তিতে নেত্রকোণার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস

0

মেহেদী হাসান আকন্দ: প্রাথমিক শিক্ষার মনোন্নয়নে সরকার নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে নতুন বই। শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কুলগামী করতে উপবৃত্তি, স্কুল ড্রেস, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য নগদ টাকা সরাসরি বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করছে। শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে রয়েছে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নেয়া হয়েছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিত অফিসারগণ অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

নেত্রকোণার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস গুলোতে লোকবল সংকটের কারণে তীরে এসে তরী ডুবির অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা শিক্ষা অফিসে একজন উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক (ইউডি), ২জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন অফিস হিসাব সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক পদ থাকলেও অধিকাংশ পদই রয়েছে শুন্য। ফলে দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃস্টি হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক ২০১২সালের ১৭সেপ্টেম্বর প্রাশিঅ/সা:প্র:/৭এ-৬৩/২০১১/১১৫৬/১০ নং স্বারকে সংযুক্তিতে গাজীপুর জেলাধীন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত। ২টি অফিস সহকারী পদের মধ্যে একটি শুন্য। হিসাব সহকারীর পদ শুন্য। অফিস সহায়কের পদও শুন্য। মাত্র একজন অফিস সহকারী দিয়েই চলছে বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা অফিস। মদন উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী ২টি পদ, হিসাব সহকারী পদ ও অফিস সহায়কের পদ শুন্য। শুধুমাত্র উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক দিয়েই চলছে মদন উপজেলা শিক্ষা অফিস।

খালিয়াজুড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস হিসাব সহকারী পদ শুন্য। মোহনগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী ২টি পদ ও অফিস হিসাব সহকারী পদ শুন্য। কলমাকান্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক পদ শুন্য। পূর্বধলা উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস হিসাব সহকারী ও অফিস সহায়ক পদ শুন্য। দূর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসে উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ২জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন অফিস হিসাব রক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক পদ শুন্য। অফিসটি রয়েছে কর্মচারী শুন্য।
বারহাট্টা অফিসে একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে উপজেলায় ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ৫১২জন শিক্ষকের বেতন ভাতাসহ সকল অফিসিয়াল কাজ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে, অন্যদিকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক জানান, একজন উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস হিসাব রক্ষক এবং অফিস সহায়ক না থাকায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রাণহীন লাগে।

অফিসে মাত্র একজন লোক হওয়ায় অফিসিয়াল কাজে কোনো গতি নাই। একটি কাজের জন্য একাধিকবার ঘুরতে হয়। অফিসে লোকবল না থাকায় শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণের কাজ, উচ্চতর স্কেলের কাজ, ইএফটি সংক্রান্ত কাজ করতে আসা শিক্ষকদের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এবিষয়ে বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় চন্দ্র শর্মা জানান, মাত্র একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে অফিসের সকল কাজকর্ম করতে হচ্ছে। অফিস সহায়কও নাই। আবার উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো: ইদ্রিস আলী সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ পদে অন্য কেউ যোগদান করতে পারছেনা। ফলে কর্মরত শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রস্তুত, শিক্ষকদের চলমান চাকুরী স্থায়ীকরণের কাজ, উচ্চতর স্কেলের কাজ, ইএফটি সংক্রান্ত কাজসহ যাবতীয় কাজ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

সংযুক্তিতে থাকা উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো: ইদ্রিস আলী জানান, ৭/৮ ধরে সংযুক্তিতে তিনি গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজ করছেন। কর্তৃপক্ষ সংযুক্তি বাতিল করলে অবশ্যই তিনি নিজ কর্মস্থলে যোগদান করবেন। দূর্গাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু তাহের ভুঞা জানান, তার উপজেলায় প্রায় ৭শতাধিক শিক্ষক কর্মরত। অফিসে একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার কর্মরত। একজন উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক (ইউডি), ২জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন হিসাব সহায়ক ও একজন অফিস সহায়ক পদ থাকলেও সব পদই রয়েছে শুন্য। অফিসে কোন কর্মচারী না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন পরিদর্শন ও দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃস্টি হচ্ছে। অফিস থেকে কোথাও বের হলে তালা ঝুলিয়ে বের হতে হয়। সারা রাত জেগে অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে হয়। তারপরও শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণের কাজ, উচ্চতর স্কেলের কাজ, ইএফটি সংক্রান্ত কাজ করতে না পারায় শিক্ষকদের মধ্যেও চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, জেলার অধিকাংশ উপজেলা অফিসগুলোতে লোকবল সংকট রয়েছে। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বারহাট্টা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক ২০১২সালের ১৭সেপ্টেম্বর প্রাশিঅ/সা:প্র:/৭এ-৬৩/২০১১/১১৫৬/১০ নং স্বারকে গাজীপুর জেলাধীন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে সংযুক্তিতে কর্মরত আছে। সংযুক্তি আদেশ বাতিল করতে ৭সেপ্টম্বর জেপ্রাশিঅ/নেত্র/২০২০/১২১২ নং স্বারকে মহাপরিচালক বরাবর লিখিত পত্র প্রেরণ করেছি। তাছাড়াও সরকারি কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকবল সংকটের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.