অন্ধকারে আলো জ্বালাতে আমাদের আছেন শেখ হাসিনা
হীরেন পণ্ডিত : এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যে ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন, সমসাময়িক ইতিহাসে কাউকে খুব একটা এভাবে দেখা যায় না। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে পারে বঙ্গবন্ধুর রক্তের একজন উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যকা-ের পর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য তখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো।
এটা প্রয়োজন ছিলো আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। সবাই জনতেন শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ইডেন গার্লস কলেজের ভিপি ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন। তাই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রবাস জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকেই বানানো হলো দলের সভাপতি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর এদেশের মানুষের জন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণ। শুভ জন্মদিন, দীর্ঘজীবী হোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস।
স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল, সেই অন্ধকার তাড়াতে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনিই প্রথম। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট- সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রুতির বাতাস বইতে দেখা যায় তার দেশে ফেরার দিন ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল চালু করা,
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বেড়েছে। এ সরকারের মেয়াদকালে গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই দৃঢ়ভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এ দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনিই ছিলেন অগ্রভাগে। দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বেদনাও তিনিই সবচেয়ে গভীরভাবে অনুভব করেন। দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দিকেও রয়েছে তাঁর দৃষ্টি। প্রতিকূলতার মাঝেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এক সময় চাঙা হয়ে ওঠেন; নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯৬
সালে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসাবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে অনেক সর্বদা লড়াই করেছেন। তিনি বারবার মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসাবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেই সুযোগ এসেছিল বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ, এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্ববিখ্যাত নেতা হিসাবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সর্বদা সকল প্রকার শোষণ, বঞ্চনা, অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য কাজ করে। এই দলটি ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভাগ্য উন্নতি হয়। এই দলের ভিত্তি থেকে ৭৪ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের সাক্ষ্য দেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এখন আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল এবং দঢ় নেতৃত্বে বিশ্ব অবাক করে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি
উন্নত দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২,৭৬৫।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষদেশগুলির মধ্যে একটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ টি মাইলফলক দিয়েছেন প্রথমটি হল ডিজিটাল বাংলাদেশ যা ইতিমধ্যে একটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।
বৈশ্বিক সংকটকালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং দেশকে খুব ভালোভাবে পরিচালনা করছেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে ও আংশিক উদ্বোধন হবে আগামী মাসে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। মহাকাশেও বাংলাদেশ তার অবস্থান ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দু’টিই উন্নয়নের মাইলফলক। ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে দেশের জনগণকে কোভিডের টিকা দেয়া হয়েছে এবং সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবেলা করে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বিশ্বে ৫ম স্থান অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
চল্লিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি অনন্য অর্জন এই ৪০ বছর তিনি শুধুমাত্র যে আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন তা নয়, তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং দলের একজন নেতাকর্মীও মনে করেন না যে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে। এটি একজন রাজনৈতিক নেতার অসাধারণ প্রাপ্তি। আর সে কারণেই তারা মনে করে যে শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই। আওয়ামী লীগ সভাপতির সাফল্যের একটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রূপ দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে।
আত্মমর্যাদা এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু। শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটা আত্মসম্মান মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে আপত্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ
করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন গত বছর উদ্বোধন করা হয় ২৫ জুন। শুধু পদ্মা সেতু নয়, মেট্রোরেল চালু হয় গত ডিসেম্বরে, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন এখন বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদার এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে যেটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশে যখন সঙ্কট তীব্র হয়, যখন সবকিছু আবর্তিত হয় অনিশ্চয়তায়, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনাই আমাদের শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ান। একজন ব্যক্তি অদম্য সংকল্প এবং কঠোর নিষ্ঠার সাথে ভয়ের কালো মেঘকে সরিয়ে দেন, দেশের মানুষ আশার আলো দেখে। যখনই মনে হয় যে সবকিছু শেষ হয়ে আসছে, তখন আমরা খারাপ সময়টির মুখোমুখি হই, তবেই একজন ত্রাণকর্তাই দক্ষতার সাথে খারাপ দুঃস্বপ্নটি সরিয়ে ফেলেন তিনিই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা ও একজন অভিভাবক। তিনি সাহসিকতার সাথেই কোভিড-১৯ মহামারি
মোকাবেলা করছেন, এখনও, এখন এটি বিশ্বের সেরা উদাহরণ এবং বিশ্ব নেতারা বিশ্বব্যাপী সংকট পরিচালনার জন্য তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। দারিদ্র্যের হার হ্রাস ৪০ থেকে ১৮ তে নেমেছে। সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর
হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন। ১৪,৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে, বিনামূল্যে ৩১ প্রকার ঔষধ প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নানাভাবে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। এই উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের
সামনে তুলে ধরতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট
সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য
স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। এই চার দশকে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য লড়াই করেছেন। সংগ্রামের এই গতিপথ ছিল
প্রতিকূল। শেখ হাসিনা, যিনি অলৌকিকভাবে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।
আমরা আমাদের অর্থনীতি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে একবার নজর দিতে পারি। ২০০৮-০৯ সালে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০-এ এটি বেড়ে দাঁডিয়েছে ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ সালে রফতানি আয় ছিল ১৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮-১৯ সালে, এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে আজ ৪৪.০৩ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭.৯ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০২০ সালে, দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১০.৫
শতাংশে নেমে এসেছে।
বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা, গোল্ডম্যান শ্যাক্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএ, পিডব্লিউসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ডায়মন্ড, ইমার্জিং টাইগারসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হচ্ছে। এর কারণেই ধারাবাহিকভাবে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রিজার্ভ, রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়, রপ্তানি, মাথাপিছু আয়, আয়, সামাজিক
নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির অন্যান্য প্রধান সূচকে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে চমক। তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতা-উত্তর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা মাত্র ৫০১ কোটি টাকার এডিপির আকার চলতি অর্থবছরে ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। তখন মাথাপিছু আয় ১২৯ টাকা এখন ২৭৬৫ ডলার ছাড়িয়েছে। যে সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে ছিল, এখন তা ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার পর বছরে, মাত্র ৩৪৮.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি পাঁচ দশকের মধ্যে ১১১ গুণ বেড়েছে ৩.৮৫ বিলিয়ন হয়েছে। প্রবাসী আয়, যা ৫০ বছর আগে নামমাত্র ছিল, তা বছরে ২৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের ধানের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী এবং মাছ, মাংস, ডিম এবং শাকসব্জিতে স্বাবলম্বী। অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলে মাছ উৎপাদনের বৃদ্ধির হারের তুলনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে রয়েছে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুবিধা শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক
বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক এবং আইটি গ্রাম নির্মিত হয়েছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা, চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বাংলাদেশকে আমূল বদলে যাচ্ছে টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এদেশ। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত, আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলায়, অযত্নে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ, দপ্তর, মন্ত্রণালয়গুলো সময়ে সময়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন খাতের বিকাশ ঘটে চলেছে।
সম্ভানাময় নতুন নতুন খাতগুলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই অক্ষম, দুর্বল, মেধাহীন নয়। তারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। বিভিন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ যারা এর আগে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, আর অসহায়ত্বের বেড়াজালে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল, তারা এখন নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস, পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা, জনপদের চিত্র। সম্ভাবনার উজ্জ্বল চমক দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৩৫তম স্থানে উঠে এসেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডে পর ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তারা। শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, স্বামী নিগৃহীত নারীদের সহযোগিতা, অটিজম, প্রধানমন্ত্রীর সরকারের প্রধান উদ্যোগসমূহ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন
করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসাবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারের ২৭ লাখ মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাই করে দিয়েছেন। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তাঁর সরকারেরই অবদান। আমাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ দেশের মানুষের কাণ্ডারী শেষ ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল।
আওয়ামী লীগ যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এটাই আওয়ামী লীগ এবং এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা। আওয়ামী লীগের ইতিহাস যেমন সংগ্রামের ইতিহাস, আবার সেই সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগই পারে একটি দেশকে উন্নত করতে বা এগিয়ে নিয়ে যেতে, যেভাবে এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যত অশুভ শক্তি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক, না কেন বাঙালি এগিয়ে যাবে অগ্রযাত্রার পথে
কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জন্য যে কোন দেশেই ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যাতে থেমে না যায় সেজন্য দেশবাসীর সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করাও অত্যন্ত জরুরি। একটি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আগামী সংসদ নির্বাচন যদি যে কোন মূল্যে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ. নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের দিকে। শক্ত হাতে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করাও জরুরি। তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা
করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এ দেশ আমাদের। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জনগণের সমর্থনের কারণে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবেই এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।
আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা আমরা মাথা নত করবো না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না’। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে।
বিশ্বনেত্রীর হাত ধরেই এই দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে অল্প সময়েই। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। সন্তানের থেকে বেশি মমতায় ভালোবেসেছেন দেশকে। পিতার অসমাপ্ত কাজ যে সমাপ্ত করতে হবে। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক