নিউইয়র্কে নজরুল একাডেমীর ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশের জতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কর্মকান্ড প্রবাসে তুলে ধরার পাশাপাশি তা প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গঠিত নজরুল একাডেমী ইউএসএ’র উদ্যোগে সংগঠনের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নজরুল জয়ন্তী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে শনিবার (১৪ অক্টোবর) জ্যামাইকার মেরি লুইস একাডেমীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও প্রতিকুল পরিবেশের কারণে অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য সাজানো অনুষ্ঠানমালা বিঘ্নিত হলেও মূল অনুষ্ঠান পরিচিত হয় মিলনায়তনে। ফলে সন্ধ্যায় জমে উঠে অনুষ্ঠানমালা। বিপুল সংখ্যক নজরুল প্রেমী বৃষ্টি-বাদলা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন অষ্ট্রেলিয়া থেকে আগত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ড. নিরুপমা রহমান। খবর ইউএনএ’র।
‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ শীর্ষক শনিবারের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো স্মৃতিচারণ, আলোচনা, গান, নাচ প্রভৃতি। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন নজরুল গবেষক ড. গুলশানারা কাজী, কাজী বেলাল, ড. উইংস্টন ল্যাংলী ও ড. মেকডোর্মেট রিচেল।
বিশিষ্ট ব্যাংকার মোহাম্মদ মালেকের সঞ্চালনায় নজরুল একাডেমী ইউএসএ প্রতিষ্ঠার ১০ বছর উপলক্ষ্যে ‘ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক তাসের খান মাহমুদ, কবি-লেখক এবিএম সালেউদ্দিন ও আজিজুল হক। এরা সবাই নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ছিলেন। আলোচনায় বক্তারা নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িতদের স্মরণ করে বলেন, আমাদের দায়িত্ব এখন ‘নজরুল একাডেমী নামক সংগঠনকে এখন প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করা।
আলোচনায় বক্তারা কবি নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি শুধু বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কবি নন, তার কবিতা-গান সর্বযুগের সকল মানুষের জন্য। তাঁর গান-কবিতা যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায় তেমনী, ভালোবাসায় প্রিয়ার খোঁপায় ফুল পড়িয়ে দেয়। বক্তারা কবি নজরুলকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এজন্য নজরুল একাডেমী সহ নজরুল প্রেমী সকলকে যার যার অবস্থান থেকে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে নৃত্তায়ন র্শীষক নাচে অংশ নেন বাংলাদেশ একাডেমী অব পারফর্মিং আর্টস (বাফা) শিল্পীরা। ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ শীর্ষক কবিতা আবৃতিতে অংশ নেন নাহরীন ইসলাম। এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করেন কবীর কিরন ও রুমানা মাহাজাবীন।
নজরুল একাডেমী পরিবেশীত নতুন প্রজন্মের গান ‘আজকের প্রজন্ম’-তে অংশ নেন সৌভিত রয় চৌধুরী, রিতুজা ব্যানার্জী, শ্রীজিতা হিয়া, ঋতিকা ব্যানার্জী, প্রিয় প্রিয়াংকা, জেরিন মাইশা। এছাড়াও ‘উষার দুয়ারে হানি আঘাত’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানে একাডেমীর শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেন ডা. নার্গিস রহমান, হাফিজা বেগম, শিলিন আহমেদ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, রুমা আলম, রুমা চৌধুরী, ফারহানা তুলি, ডানা ইসলাম, শাহ আলম দুলাল। পরিচালনায় ছিলেন একাডেমীর সঙ্গীত শিক্ষক শিল্পী লিমন চৌধুরী। সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন ডানা ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্বের তবলায় ছিলেন তপন মোদক, কী বোর্ডে মাসুদ, মন্দিরায় শহীদ উদ্দিন আর অক্টোপ্যাডে রাকেশ ব্যানাজী। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে তিনজনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এরা হলেন ডা. নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ ও ইঞ্জিনিয়ার আকাশ রহমান।
সবশেষে ছিলো ‘কথা ও সুরে’ শীর্ষক ড. নিরূপমা রহমানের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে অতিথি শিল্পী একাধিক নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। অনুষ্ঠানে শিল্পীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম দুলাল এবং সবশেষে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন একাডেমীর সভাপতি কিউ জামান।