জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব নিকাশ
হীরেন পণ্ডিত : নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময় অনুযায়ী ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে দেশের মানুষ অবশ্যই তাদের অর্জন-অপ্রাপ্তির তুলনা করতে বসবে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশ কী পেল? আমরা দেখি কেমন কেটেছে গত ১৫ বছর। বাংলাদেশ বৈশ্বিক এসডিজি অর্জনের র্যাঙ্কিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, মাত্র সাত বছরে ১২০তম স্থান থেকে ১০১তম স্থানে উঠে
এসেছে।
গ্লোবাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী ২০২২ সালে ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০১তম স্থানে রয়েছে, ২০১৯ সালে এই অবস্থান ছিলো ১১৬ নাম্বারে। বাংলাদেশ গত পনের বছর ধরে দারিদ্র্যদূরীকরণে গুরুত্ব প্রদানসহ একটি আশাব্যঞ্জক ৬.৭% গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রথম তিনটি এসডিজি যেমন দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সম্পর্কিত এবং বাংলাদেশ তিনটিতেই ভালো অগ্রগতি করেছে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে। তিনটি এসডিজির অধীনে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে চারটি ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ছয়টি ট্র্যাকে রয়েছে এবং পাঁচটিতে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
২০৩০ এজেন্ডা অর্জনের মাধ্যমে কাউকে পিছনে না রেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের অঙ্গীকার এগিয়ে চলছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ এখন নতুন কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছেন। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে ২০৪১ সাল একটি সাশ্রয়ী, টেকসই,
বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।
এদেশের কোটি কোটি মানুষকে এক সময় দুঃখ, দুর্দশা ও দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এই অবহেলিত ও আজন্ম লালিত স্বপ্নের দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে শাসক শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এদেশের মানুষের কাছে তিনি একজন আপোষহীন, নির্ভীক, সাহসী ও সহানুভূতিশীল নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাংলার সাধারণ মানুষ তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন পথ চলা শুরু করে। তখনই বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের কাছে বাংলার অপার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এখানে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। চাইলে এখানে সোনা ফলানো সম্ভব।
বাংলার অধ্যবসায়ী ও উদ্যোগী মানুষ চেষ্টা করলে মেধা ও শ্রমের যথাযথ ব্যবহার করে সোনার দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথ পাড়ি দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছে। এদেশের অনেক মেহনতি ও সংগ্রামী মানুষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে, নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সোনার বাংলা গড়ার অপার সম্ভাবনাকে কাজে
লাগিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সব পরিকল্পনা তিনি ধীরে ধীরে সাজিয়ে নেন। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি, সব কিছুর অপূর্ব মেলবন্ধনে নতুন নতুন পরিকল্পনা, ভাবনা ছিল তাঁর মনে। যার বাস্তবায়নও শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশে।
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর উন্নয়ন আবার থমকে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার বিষয়ে সে সময় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে। কিন্তু সেই দেশেরই এমন কোনো অর্থনৈতিক বা সামাজিক সূচক নেই যা অগ্রগতি করেনি, এমনকি সবচেয়ে বড় সমালোচকরাও এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য। বিশ্ব যা ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ তা করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার গতিশীল, উদ্যমী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে আমূল বদলে দিয়েছে। দেশ টেকসই উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থায় চলে গেছে। প্রতিদিন প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তরের নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। পূর্বে অবহেলিত সেক্টর বা ব্যবসায় একটি নবজাগরণ ঘটেছে। অপার সম্ভাবনার দৃশ্যপট এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে এবং আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলার কারণে
দীর্ঘদিন ধরে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে। উন্নয়নের পথিকৃৎ ও উন্নত বাংলাদেশের নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই
প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সেসব সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
দেশ খাদ্য উৎপাদনে পর্যাপ্ততা অর্জন করেছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে এবং শিশুমৃত্যু কমিয়েছে। বাংলাদেশের গল্পটি হল কিভাবে দেশটি সমস্ত সম্ভাবনাকে পরাজিত করেছে এবং শক্তিশালী পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিলিয়ন ডলার নিজস্ব-অর্থায়ন করেছে এবং সেতুটি চালু করেছে গত বছর ২৩ জুন। মেট্রোরেল চালু করেছে ২০২২ এর
ডিসেম্বওে বিষয়গুলো অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। গল্পটি এর মেগা- স্ট্রাকচারের ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিও এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
উৎক্ষেপণ এবং দ্বিতীয়টির কাজ চলছে। বাংলাদেশের গল্পটি লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী অভিবাসন নিয়ে যারা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগে, পারমাণবিক শক্তির যুগে, মহাকাশ প্রযুক্তির যুগে নিয়ে গেছেন। তার স্থির এবং বাস্তববাদী নেতৃত্বে, দেশ সফলভাবে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা মোকাবেলা করেছে এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী তরুণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। এটি তার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করে, আন্তর্জাতিক চুক্তি পালন করে এবং সকল মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চললে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উনয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং নাগরিকদের সুবিধার্থে কাজ করছে। সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কাজের পদ্ধতি, শিল্প, বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক মানুষদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সমস্ত নাগরিক পরিষেবা এবং জীবিকার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়ে উঠেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতিসংঘের ই-গভর্নেন্স ডেভেলপমেন্ট সূচকে শীর্ষ ৫০টি দেশের মধ্যে থাকার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান রেট প্রোগ্রামে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তরুণরা ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কিছু বড় অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৫তম। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত বর্ধনশীল দেশ। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ২০৩৬ সালে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কথা শোনা যায়। মূলত
এই দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান সরকার।
অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত বছর জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং
দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে। গত অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বববৃহৎ পায়রা সেতু। গত
বছর নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায়, ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ চালু হয়েছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এখন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ এর জন্য কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।
রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমানো গেছে, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সকল প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি উর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমাদের প্রতিটি ইঞ্চি জমি পতিত না রেখে কাজে লাগাতে হবে। সংকট আসবে।
সংকটে ভয় পেলে চলবে না। সবার সহায়তায় করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান বৈশি^ক মন্দাও বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করবে। মহাকাশেও বাংলাদেশ তার অবস্থান শক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দু’টিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবেলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী নিগৃহীত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের
সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারেরই অবদান।
২০১৮ সালে করোনা মহামারি কথা কেউ ভাবেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো কোনও যুদ্ধ হবে, সেটিও কারও ভাবনায় ছিল না। বিশেষ করে করোনা মহামারি, যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্থবিরতা, বিদেশীদের অভ্যন্তীরণ বিষয়ে নাক গলানো অহেতুক পরামর্শ দেওয়া,
বিদেশীদের নালিশ জানানো, অপপ্রচার, গুজব, সরকারের উন্নয়ন কোন কোন সুশীল সমাজের চোখে না পড়া, সবকিছুই নিয়েই রাজনীতি ও
অপরাজনীতি করা, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, দক্ষ যুব শক্তি তৈরি করা, বৈদেশিক বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক শ্রমবাজারের জন্য নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করা ও রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হচ্ছে ।
শিল্পে নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দু’টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং দু’টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার ঘটনাও সরকারের জন্য স্বস্তির ঘটনা। তবে দফায় দফায় তেল ও ছয় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। অগ্রাধিকারের বিষয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের বিষয়টি বেশ ইতিবাচক।
তবে এবার নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ সজাগ দৃষ্টি নিয়ে আছে। নির্বাচনে অনিয়মের আলামত দেখলে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাঁয়তারা করছে। আর তা হবে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই বিপর্যয়কর। অথচ আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কিছু অনিয়ম, দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারের অভিযোগ সেসব অর্জনকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা আমরা মাথা নত করবো
না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না’। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে
আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে। তবে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিত হবে ভবিষ্যতে তাঁরা বাংলাদেশকে কিভাবে এগিয়ে নিতে চান, কোথায় দেখতে চান।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো