বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেয়া যাবে না
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্যাংকবহির্ভূত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বর্ণের মাধ্যমে লেনদেন এবং বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ দিতে পারবে না। শুধু তাই নয়, এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীর আদেশের মাধ্যমে কিংবা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য চেক, ড্রাফট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে কোনো আমানত গ্রহণ করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত মেয়াদি আমানত গ্রহণ করতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বা গ্রুপকে ১০ লাখ টাকার অধিক জামানতবিহীন ঋণ প্রদান এবং কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বা গ্রুপকে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ৩০ শতাংশের অধিক ঋণও দেয়া যাবে না। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩’-এর চূড়ান্ত খসড়ায় এসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, লাইসেন্সের কোনো শর্ত ভঙ্গ, লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান, লাইসেন্স প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না-পারা, আমানতকারীদের স্বার্থহানি ও দায় পরিশোধে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স বাতিল ও প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আইন লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিপরীতে তিন লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ, ২০ লাখ, ২৫ লাখ, ৫০ লাখ ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে ‘পাবলিক লিমিটেড’ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, ব্যবস্থাপনা বৈশিষ্ট্য, মূলধন কাঠামোর পর্যাপ্ততা ও উপার্জনের সম্ভাব্যতা, সঙ্ঘ-স্মারকে উল্লিখিত উদ্দেশ্য এবং জনস্বার্থের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমষ্টিগতভাবে তার পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি নিজস্ব অধিকারে রাখতে পারবে না।
এছাড়া পুঁজিবাজারেও সমষ্টিগতভাবে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। পাশাপাশি স্বেচ্ছা খেলাপিদের চিহ্নিত করা, তাদেরকে ঋণ না-দেয়া ও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর, নতুন শাখা বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান খোলা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট পরিচালকের সংখ্যা হবে ১৫ জন। স্বতন্ত্র পরিচালকরা সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত থাকবেন না, তারা শুধু প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নিজস্ব মতামত দেবেন। কোনো ব্যক্তি বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি বা দেউলিয়া হলে, নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে, কোনো ধরনর ফৌজদারি অপরাধ বা জাল-জালিয়াতি বা আর্থিক অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাতিলকৃত কিংবা অবসায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
জানা গেছে, আইন অনুযায়ী, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাংকের ‘উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারক’ (পরিশোধিত মূলধনের ৫ ভাগের অধিক শেয়ার ধারণ) হতে পারবে না। অন্যদিকে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ব্যক্তি ও পরিবার একক বা যৌথ নামে সর্বমোট ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না এবং একই সাথে নামে-বেনামে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের ‘উল্লেখযোগ্য শেয়ার’ ধারণ করতে পারবেন না। শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা কোম্পানি বা পরিবারকে ঘোষণা দিতে হবে এবং ঘোষণাপত্রে কোনো মিথ্যা তথ্য দেয়া হলে সব শেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো পরিবার কিংবা গ্রুপের ৫ শতাংশের অধিক শেয়ার থাকলে ওই পরিবার বা গ্রুপের দু’জন পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন। আর ২ শতাংশ থেকে অনধিক ৫ শতাংশ শেয়ার থাকলে পরিচালনা পর্ষদে একজন সদস্য থাকতে পারবেন। পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। একজন পরিচালক টানা তিন মেয়াদ পর্যন্ত পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে পরবর্তীতে আবারো পরিচালক হতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ৩৩টি। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ১৯৯৩ সালে প্রণীত ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন’ এবং ১৯৯৪ সালে প্রণীত ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রবিধানমালা’-এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের পথ চলায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব বিবেচনায় আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে বিদ্যমান ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩’ বাতিল করে নতুন এ আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।