স্মার্ট দেশ গড়তে প্রযুক্তিতে জোর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, উন্নয়নে দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামোসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতসহ বেশির ভাগ কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স, ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি উদ্যোগ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট পোস্টাল সার্ভিস, স্মার্ট জুডিশিয়ারি, স্মার্ট বর্ডারস, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, পুলিশ মডার্নাইজেশন, ইনক্লুসিভ ফিন্যানশিয়াল ইকোসিস্টেম, ফিনটেক অ্যাকসেলারেটর, উদীয়মান প্রযুক্তিবিষয়ক সেন্টার অব এক্সিলেন্স (সিওই) বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
গঠিত হয়েছে তিন কমিটি
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত ২৮ নভেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের উপকমিটি গঠন করেছে সরকার। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’ গঠন করা হয়। এসব কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সব মন্ত্রণালয়, বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ
স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে বছরে অন্তত একটি করে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সহায়ক প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে যে অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে, সেখানেও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোকে শর্তারোপ করা হবে। আইসিটি মাস্টারপ্ল্যানে মোট ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন স্মার্ট কানেক্টিভিটি
এ বিষয়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ভালো। সমস্যা হলো এটার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে তারা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে এটি কার্যকর করা কঠিন হবে। মোবাইল অপারেটররা বেপরোয়াভাবে ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করছে। যেমন—কোনো প্যাকেজে এক জিবি নেটের দাম ১০০ টাকা, কোনো প্যাকেজে ১৫ টাকা।
আমি চেষ্টা করেছিলাম মোবাইলের ডাটার দাম নির্ধারণ করার জন্য। মন্ত্রী পর্যায়ে চেষ্টা করে কোনো কাজ হয়নি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সবই আছে। ইউনিয়ন থেকে ইন্টারনেট সংযোগ শুধু গ্রামে পৌঁছাতে হবে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এই সরকারের প্রথম কর্তব্য হলো প্রতিটি গ্রামে ও বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া, কানেক্টিভিটি নিশ্চিত না হলে সরকার যে সেবা দেবে সেটা সব মানুষের কাছে পৌঁছাবে না। আবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে মোবাইলের ফোরজি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্ভব হবে না। মোবাইল নেটওয়ার্ককে ফাইভজি করতে হবে অথবা ফাইবার অপটিক চালু করতে হবে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইবার অপটিক যেটাই হোক, হাইস্প্রিড ইন্টারনেট দরকার। এর সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।
নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করেছে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর সরকার প্রথম স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয়। ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের জন্য ১০০ কোটি টাকা
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে চলতি বছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বছরের বাজেটের শিরোনাম—‘উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’, ‘আর উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’—এই স্লোগানে নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিডারশিপ বিষয়ে, সাইবার সিকিউরিটি, ইমার্জিং টেকনোলজিসহ যুগোপযোগী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্মার্ট সরকার গঠনে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিককে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করবে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট সরকারের গুরুত্বও বিবেচনায় আনতে হবে। সরকারের অধীনে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানই স্মার্ট সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। খাদ্য উৎপাদন, বাসস্থান, শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা, ভূমি ক্রয়-বিক্রয়সহ সব সেবাই সরকারের মাধ্যমে জনগণকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে হবে। যদিও বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেবা ডিজিটাল সিস্টেমে জনগণ গ্রহণ করছে, কিন্তু উন্নত দেশের তুলনায় তা অনেকটা কম।
এরই মধ্যে এটুআইসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটুআই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’, ‘স্মার্ট সিটি’ ও ‘স্মার্ট অফিস’ কনসেপ্টের পাইলটিং শুরু করেছে। যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই পরিচালনা করছে ‘সিভিল সার্ভিস ২০৪১ : ডিজিটাল লিডারশিপ জার্নি’। একটি সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘জাতীয় ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতাবিষয়ক মহাপরিকল্পনা’র খসড়া প্রণয়নে ব্লেন্ডেড শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এটুআই। এটুআইয়ের সহযোগিতায় বিচারিকব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ, যা আগামীর স্মার্ট বিচারিকব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনমি গড়ে তুলতে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্প ডেস্ক চালু, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ‘সাথী’ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, দেশের সব পরিষেবা বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজীকরণে সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ‘একপে’তে আটটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্ত করা হয়েছে।
স্মার্ট গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক ওয়ানস্টপ সেবাকেন্দ্র এবং প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে পিপিএস ও আরএমএস সফটওয়্যার এবং অনলাইন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট (আরএমএস) সিস্টেম চালু করা হয়েছে।