শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের কমিটির ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে আসন্ন ১৩৬তম আবির্ভাব বর্ষ স্মরণ মহোৎসব সামনে রেখে যখন পাবনার হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে সময়ে গঠনকৃত নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নানা সময়ে নানা কূকর্ম ও অপকর্ম এবং অনিয়মের অভিযোগে অব্যাহতিপ্রাপ্ত একটি ষড়যন্ত্রকারী একটি গোষ্ঠী আশ্রমটিকে অচল করে দিতে নানা ষড়যন্ত্রে যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, ঠিক সে সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতাদের ভুল তথ্য সরবরাহ করে নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল বলে ঠাকুর অনুসারী শতশত ভক্তবৃন্দের অভিযোগ।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই আশ্রম পরিচালনা ও আধিপত্য বিস্তারে দুটি গ্রুপ দানা বেধে উঠে। গ্রুপিং শুধু পাবনার এই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নয়, সারাদেশের সকল শাখা উপশাখায় এই বিভেদ আষ্ঠেপিষ্টে জড়িয়ে গেছে। নানা চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে এবং কোভিড-১৯ ধাক্কা সামলিয়ে আশ্রম অনুসারীরা যখন এই সৎসঙ্গকে চাঙ্গা করে পরিচালিত করতে শুরু করেছে সে সময়ে ষড়যন্তকারী গোষ্ঠি একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে এই আশ্রম পরিচালনার নির্বাহী কমিটির কতিপয় কর্মকর্তারা নারী কেলেংকারীসহ বিভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই গ্রুপটিই একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিতকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পাবনা পৌর সভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, আওয়ামীলীগ নেতা কামিল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভুল তথ্য দিয় বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আহবায়ক কমিটি গঠনের জোর তদবির চালায়। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ উপরোক্ত ব্যক্তিরা ১১ মার্চ সোমবার দুপুরে বিরোধ নিরশনে পাবনার হিমাইতপুরস্থ সৎসঙ্গ আশ্রম লাইব্রেরী মিলনায়তনে এক জরুরী বৈঠকে বসেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোপীনাথ কুন্ডু বলেন, গত ১৭ জুন ২০২৩ ইং তারিখে সারাদেশের শাখা উপশাখার ২৫১ জনের শীষ্য পরিষদের সদস্যদের নিয়ে ৩৭ সদস্যের ৫ বছর মেয়াদী একটি বৈধ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিতরা বিভিন্ন সময়ে আশ্রমের সকল কাজকর্ম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক ভাবে পরিচালনায় ব্যাহত করে আসছে। ইতোমধ্যে আমরা ৩টি মহোৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করেছি। আসন্ন মহোৎসব ভন্ডুল করতে চক্রটি উঠে পড়ে লেগেছে।
এমপি মহোদয়ের সাথে মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ বলেন, কমিটির কোন ত্রুুটি থাকলে সেটা ধরিয়ে দেয়া, কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি করা কোন গঠনমূলক কাজ নয়। এতেকরে সাংবিধানিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মহোৎসব পেড়িয়ে গেলে নতুন করে কমিটি গঠন নিয়ে আলেচনা করা যেতে পারে।
সহ-সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র মজুমদার পলাশ বলেন, বেশ কিছু শাখা গ্রুপিংয়ের শিকার। তারাই ঠাকুরের দেখানো পথের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ঠাকুর ও তার কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করে তুলছেন। এগুলোর নিরশন হওয়া জরুরী। কয়েকটি জেলার কতিপয় ব্যক্তি কমিটির বিরোধীতা করছে। এছাড়া দেশের বাদবাকি জেলাগুলোর ভক্তবৃন্দ কমিটির বিরুদ্ধে কোন আপত্তি জানাননি।
উপস্থিত একাধিক ঠাকুর ভক্ত ও অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাপস রায় ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহাকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে হয়েছে। এমনই ভাবে কমিটিতে যারাই বিতর্কিত কর্মকান্ড ও অনিয়ম-অস্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছেন তাদেরকে কমিটি থেকে সড়ে যেতে হয়েছে। এভাবেই অভিযুক্তরা একত্র হয়ে একের পর এক আশ্রম বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ভক্ত জানান, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা কমিটি ভাঙ্গার যে চাপ দিচ্ছেন, তাতে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে, আহবায়ক কমিটি বাননোর কোনো বিকল্প নাই। বিতর্কিত, দূর্নীতিবাজ ও অস্বচ্ছ লোকজনকে আহবায়ক বা মূল কমিটিতে না আনার জোর দাবী জানায় ভক্তরা।
পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোশাররফ হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য হলেন জাতীয় সংসদের আইন প্রণেতাদের একজন। তাই তিনি যা বলবেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আইন হিসেবে মানতে হবে, করতে হবে। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার কারও নেই।
পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন বলেন, উভয়গ্রুপের দ্বন্দ্বে ঠাকুরের এই আশ্রম দিনদিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমান কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ অনুযোগের কারণেই আমাদের এই বসা। যেহেতু কমিটি নিয়েই বিরোধ সেহেতু এই কমিটি বাতিল করে নতুন আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে পরবর্তীতে উভয়পক্ষ মিলে নতুন একটি কমিটি আসবে।
চট্টগ্রাম সৎসঙ্গের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শংকর সেন গুপ্ত বলেন, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ সভাপতিতে কমিটিতে রাখা হলেও সভাপতি জানতেন না। ইচ্ছে মাফিক পছন্দের মানুষদের দিয়ে এই মনগড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানিনা। আমাদের দাবী, কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে দক্ষ লোকজন দিয়ে কমিটি গঠন করা হোক।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, আশ্রম কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কার্যক্রম চলুক। ঠাকুরের উদ্দেশ্য সফল হোক। দ্বন্দ্ব নিরশনের জন্য উভয়পক্ষের কারণে আমাকে আসতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় উভয়পক্ষের লোকজনের কথাবার্তা শুনে আমার মনে হয়েছে, এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একটি আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হোক।