কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন ভুটানের রাজার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ধরলা সেতুর পূর্বপ্রান্তে মাধবরাম এলাকায় ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান গতকাল পরিদর্শন করেন দেশটির রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক -ফোকাস বাংলা
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক গতকাল বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজার মধ্যকার ২০২৩ সালের ৬ মে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে ভুটান সরকার থেকে আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্বাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ভুটান সরকারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। এ ছাড়া ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় এ জেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
ভুটানের রাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনকালে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী এমএ আরাফাত, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভুটানের মহামহিম রাজার বাংলাদেশ সফরকালে জিটুজি ভিত্তিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ভুটান সরকারের মধ্যে গত ২৫ মার্চ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৭ মার্চ ভুটানের রাজা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। ওই আলোচনায় উভয় পক্ষ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেন।
‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য প্রস্তাবিত কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে ভুটানের রাজা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলসংলগ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা ও গোর্ট কানেক্টিভিটি নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে রাজা তার সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি সব সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হলে রাজা পুনরায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
রাজা এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানীয় ও আঞ্চলিক চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও জানান, ভুটান থেকে এ বিষয়ে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বিনিয়োগের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে শিগগিরই বাংলাদেশে আসবে।
ভুটানের রাজার আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার মাধবরাম মৌজা, বাফারাম মৌজা, সড়া মৌজা ও কল্যাণ মৌজার ২১৯.৬৬ একর জমিতে বাংলাদেশ সরকার ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেজা হতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভুটানের রাজা ওয়াংচুক ১৪ সদস্যের সফরসঙ্গী নিয়ে এদিন সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতন করেন। পরে সড়কপথে দুপুর পৌনে ১২টায় কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ শেষে দুপুর দেড়টায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। রাজার আগমনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাসহ সব প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করে স্থানীয় প্রশাসন। তার কুড়িগ্রাম সফরের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুল আরিফ বলেন, ভুটানের অর্থনীতি যেহেতু কৃষিভিত্তিক, তাই আশা করছিÑ এখানে কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে উঠবে। অর্থাৎ সবুজ অর্থনীতিতে তারা বিনিয়োগ বাড়াবে। এর আগে গত ১০ মার্চ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত এইচ ই রিনচেন কুইন্টসি’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
এর আগে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। পিটিএর আওতায় ভুটানের বাজারে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য শতভাগ শুল্ক মুক্তভাবে রপ্তানির সুযোগ পাবে। একইভাবে বাংলাদেশের বাজারে ভুটানের ৩৪টি পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে।
ধরলা নদী ও সোনাহাট সড়কের পাশে হওয়ায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে সুবিধা মিলবে সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথের। সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৯৭ কিলোমিটার হওয়ায় সড়কপথের এবং চিলমারী নৌবন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা পাবে দেশটি। উল্লেখ্য, ভুটানের রাজা ওয়াংচুক সস্ত্রীক গত ২৫ মার্চ চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন।
ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপ্রতিমন্ত্রী : বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে ভুটানের রাজা ওয়াংচুককে বিদায় জানান। এ সময় তিনি ভারত হয়ে ভুটানের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।