৭৫ বছর পর আমদানি ও রপ্তানির নতুন আইন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি ১৯৫০ সালের। তবে এটি আর থাকছে না। বহু আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ৭৫ বছর পর যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটির নাম ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪’।
নতুন আইনে পণ্যের সঙ্গে সেবা খাত যুক্ত করা হচ্ছে। তবে বিদ্যমান আইনের মতো এবার ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি আর রাখা হচ্ছে না।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নতুন এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণের ১৯৫০ সালের আইন আছে। পুরনো আইনগুলো পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী করার নির্দেশনা আছে। এ জন্য নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘আগের আইনে নতুন করে কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে।
আগে শুধু পণ্যের কথা বলা ছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেবা কার্যক্রমকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এ আইনের আওতায় সেবা যুক্ত করা হয়েছে। কমোডিটির (পণ্য) পাশাপাশি সার্ভিস (সেবা) যুক্ত করা হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। এ সম্পর্কিত আদেশ ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে পারবে। আমদানি ও রপ্তানি নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সভায় ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ এবং ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনগুলো গত সরকারের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও তা সংসদে বিল আকারে পাস হয়নি। ফলে এখন নতুন করে আইনগুলো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন হচ্ছে।
বছরে ১৫ হাজার টাকা আয় হলে বিধবা ভাতা পাওয়া যাবে
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পাওয়ার বিদ্যমান শর্ত কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ ধরনের নারীদের মধ্যে যাঁদের বছরে আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে, তাঁরা এই ভাতার সুযোগ পাবেন। এত দিন ১২ হাজার টাকার নিচে হলে এই ভাতা পাওয়া যেত।
গতকাল ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিধবা ভাতার আওতায় বর্তমানে সারা দেশে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারীকে মাসে ৫৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ভাতার টাকা মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে জিটুজি (সরকার থেকে সরাসরি ব্যক্তি) পদ্ধতিতে দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর অনলাইনে আবেদন ও বাছাইয়ের বিষয়টিও প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে।
ঈদের ছুটি তিন দিনই থাকছে
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানানো হয়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকবে। এর মানে আগের ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের ছুটি তিন দিন থাকবে।
মন্ত্রিসভার একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ৯ এপ্রিল এক দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এবার ঈদের ছুটি আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনই থাকছে। যদিও বাস্তবে সরকারি চাকরিজীবীরা ছুটি ভোগ করবেন আরো বেশি। কারণ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এর পরদিন রবিবার পহেলা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, পাঁচ দিন টানা ছুটির সুযোগ থাকছেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কার্যত ছুটি থাকবে।
গত রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৯ এপ্রিল এক দিন ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এদিকে পবিত্র শবেকদরের পরদিন ৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি। এর আগে ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
মন্ত্রিপরিষদচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এ বছরের রমজান ৩০ দিন ধরা হয়েছে। ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকছে। তবে কেউ চাইলে ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, এবার রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদুল ফিতর হবে ১১ এপ্রিল। ১১ এপ্রিলকে ঈদুল ফিতরের দিন ঠিক করে ছুটির তালিকা আগেই করেছে সরকার। সে হিসাবে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি। পরদিন ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। এর পরের দিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের ছুটি। এভাবে টানা পাঁচ দিন ছুটি থাকবে। এর আগেও ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি রয়েছে। শবেকদরের ছুটির পর ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিন অফিস খোলা। ১১ এপ্রিল ঈদ হলে বাড়ি যেতে মাত্র এক দিন (১০ এপ্রিল) সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়ে এখন ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আগের সরকারের তিন আইন মন্ত্রিসভায়
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।