মহাপরিচালকের রোষানলে পড়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছে ড. মোঃ ওমর আলীর মতো ভারী প্রোফাইলের বিজ্ঞানী
নিজস্ব প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এবং ১৯৯৬ সালের বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে ‘জনতার মঞ্চ’র সংগঠক, বর্তমানে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ ওমর আলী তাঁর কাঙ্খিত পদোন্নতি না পেয়ে আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পদোন্নতি বঞ্চিত বিজ্ঞানীর অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)তে দ্বিতীয় গ্রেডে (পরিচালক) এর ৪টি পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শুন্য হয়ে আছে। কিন্তু পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী প্রোফাইল কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন না গাজিপুরস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর মহাপরিচালক ড. দেবাশিষ সরকার। এতে পদোন্নতি প্রার্থী বিজ্ঞানীরা চরম হতাশায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এই ৪টি পদে পদোন্নতি না দেওয়ায় নিচের গ্রেডের অনেক বিজ্ঞানীদেরও পদোন্নতি আটকে গেছে। শুন্য হওয়া এই দ্বিতীয় গ্রেডের (পরিচালক) ৪টি পদে পদোন্নতি হলে ধারাবাহিক ভাবে ৪জন সিএসও, ৪জন পিসএসও এবং ৪জন এসএসও পদেও বিজ্ঞানীরা পদোন্নতি পাবে। সেই সাথে ৪জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগ পাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত রোষানলের কারণে সেটা হচ্ছেনা। পদোন্নতির এই প্রস্তাব প্রেরণ না করায় ১৬জন বিজ্ঞানী আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পাশাপাশি ৪জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাও নিয়োগ বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালের ১১ জুলাই কৃষিবিদ ড. মো. ওমর আলী অবসরে যাবেন। ড. দেবাশিষ সরকার ষড়যন্ত্র করে ড. ওমর আলীর অবসরে যাওয়ার পর তার নিজের পছন্দের বিজ্ঞানীদের জন্য পদোন্নতির প্রস্তাব কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন যাতে ড. মো. ওমর আলীর কোনো পদোন্নতির সুযোগই না থাকে। অথচ ড. মো. ওমর আলী আওয়ামীলীগের একজন দক্ষ সংগঠক এবং বিভিন্ন সময় নানা পদে অবস্থান করেছেন। পদোন্নতির জন্য ড. দেবাশিষ সরকার যেসব বিজ্ঞানীদের নাম প্রস্তাব করবেন বলে জানা গেছে তারা কেউই আওয়ামীলীগ সরকারকে সমর্থন করেনা এবং তারা বিজ্ঞানী বিবেচনায় ড. ওমর আলীর সমকক্ষও নন।
ড. ওমরের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে তিনি এমনটি করছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি যাদের পদোন্নতি দেয়ার পায়তারা করছেন তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চুক্তি করেছেন বলেও বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে।
কৃষিবিদ ড. মো. ওমর আলী বিনা চাষে মসুর ডাল উৎপাদনের উপর গবেষণা করে ২০১১ সালে কৃষিতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ডাল গবেষণা উপ—কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর এ মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পেশাগত কারণে তিনি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, চীন, জার্মান, ডেনমার্ক, সুইডেন, মরক্কো, ভারত, থাইল্যান্ড, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং নেপালসহ অনেক দেশ ভ্রমন করেন। তিনি ডাল ফসলের উন্নত জাত আবিস্কারের বিশেষ সফলতা অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ ১৪২৪ (প্রদানকাল ১৪২৮) প্রাপ্ত হন এবং বাংলাদেশে মসুর ডাল গবেষণায় সাফল্যের জন্য ২০০৪ সালে ইকার্ডা (ICARDA), সিরিয়া কর্তৃক পুরস্কৃত হন। তিনি মুগের উন্নত জাত বারি মুগ—৬, বারি মুগ—৭, বারি মুগ—৮ সহ মোট ৭৪টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তাঁর এসমস্ত প্রযুক্তি দেশ—বিদেশে বেশ সমাদৃত ও সম্প্রসারিত। ২০২৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গকন্যা— আমাদের আছেন একজন শেখ হাসিনা’ তাঁর লিখা সর্বশেষ গ্রন্থ। ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ তাঁর ৪র্থ কাব্যগ্রন্থও সারাদেশে ব্যাপক সমাদৃত। এছাড়া দেশী/বিদেশী জার্নাল, বইসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত পেপারের সংখ্যা ৪৬২টি। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভূক্ত গীতিকার। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ৭০০ এর বেশি। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের দক্ষ সংগঠক ছিলেন ও তৎকালীন বঙ্গবন্ধু কৃষি পরিষদ পাবনার সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ সময়ব্যাপী। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ কৃষিতত্ত্ব সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমন ভারী প্রোফাইলের একজন বিজ্ঞানীকে ষড়যন্ত্র করে তাঁর হক প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা কোনভাবেই উচিৎ হচ্ছেনা বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীগন। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।
ড. দেবাশিষ সরকারের সাথে বারবার তার অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।