অ্যান্টিভেনম তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপ আতঙ্ক ছড়ালেও নেই পর্যাপ্ত প্রতিষেধক। তবে আশার আলো দেখাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টার। সেখানে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাসেলস ভাইপারের বিষ-প্রতিষেধক তথা অ্যান্টিভেনম তৈরি হচ্ছে। সারাদেশ থেকে ৫০টি রাসেল ভাইপার সংগ্রহ করে প্রতিষেধক তৈরি করতে গবেষণা করছেন একদল গবেষক। ইতোমধ্যে গবেষণার ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গবেষণাটি সফল হলে বাংলাদেশ শতভাগ শক্তিশালী অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে সক্ষম হবে প্রত্যাশা তাদের।

চলতি বছরের শেষের দিকে গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফল প্রস্তুত হবে জানিয়েছেন ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক ও গবেষক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। অ্যান্টিভেনম তৈরি দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আমরা মূলত রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করে আলাদা অ্যান্টিবডি তৈরিতে গবেষণা

শুরু করেছি। চলমান গবেষণাটি সফলতারও দ্বারপ্রান্তে। শতভাগ কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারলে সেখান থেকে অ্যান্টিভেনম প্রস্তুত সম্ভব হবে। চলতি বছরের মধ্যে রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হবে ভেনম রিসার্চ সেন্টার।

গবেষণার প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পর্কে আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, মুরগি ও ছাগলের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভেনম দিয়ে তার শরীরে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে চাচ্ছি আমরা। সেই অ্যান্টিবডি আলাদা করে সাপগুলোর বিরুদ্ধে কতটুকু কার্যকর, তা দেখা হচ্ছে। ফল বুঝতে এবং প্রাণীর শরীরে একটি ভেনম কতটুকু কার্যকর হতে পারে, তা ল্যাবরেটরির ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করা হবে। গবেষণাটি সফল হলে বর্তমানে আমাদের দেশে যে অ্যান্টিভেনম আছে, তার চেয়ে শতভাগ শক্তিশালী অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে সম্ভব হবে বাংলাদেশ।

বিশ্বের প্রতিটি দেশে সাপের নিজস্ব অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে সাপের অ্যান্টিভেনম আমদানিনির্ভর; যার পুরোটা আসে ভারত থেকে। এই প্রেক্ষাপটে দেশেই অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ শুরু করতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা। ২০১৮ সালের মার্চে প্রকল্প শুরু হয়। এতে যুক্ত আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগ, মেডিসিন টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্স মেন্টর ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং জার্মানির গ্যাটে ইউনিভার্সিটি। ছয় বছর আগে মাত্র ৫টি সাপ নিয়ে রিসার্চ সেন্টারটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ১১ প্রজাতির ৩৫০টি সাপ রয়েছে এ ভেনম রিসার্চ সেন্টারে।

রাসেলস ভাইপারের বংশবৃদ্ধি জুন থেকে আগস্টে : বাংলাদেশে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত যে আবহাওয়া, তা রাসেলস ভাইপারের বংশবৃদ্ধির উপযোগী বলে জানিয়েছেন ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ইঁদুর চন্দ্রবোড়া সাপের প্রধান খাদ্য। আর ইঁদুর বাড়ায় সাপ পর্যাপ্ত খাদ্য পায় এবং বংশবিস্তারে যথাযথ পরিবেশ পায়। তবে চন্দ্রবোড়া শিকার করে যেসব প্রাণী- প্যাঁচা, বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, বনবিড়াল, মেছো বিড়াল, সারস ও শঙ্খিনী সাপ এগুলো আমাদের প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে। ফলে চন্দ্রবোড়ার বিস্তার সহজ হয়েছে।

৫০টি রাসেলস ভাইপার নিয়ে গবেষণা : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, বছরে বাংলাদেশে চার লাখের বেশি মানুষকে সাপে কাটে; ৭ হাজার মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে প্রায় শতাধিক মানুষ রাসেলস ভাইপারের দংশনে মারা গেছেন। তাই ২০২৩ সাল থেকে ভেনম রিসার্চ সেন্টারে বিষধর সাপটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন একদল গবেষক। সারাদেশ থেকে ৫০টি রাসেলস ভাইপার সংগ্রহ করেন তারা। গতকাল সরেজমিনে রিসার্চ সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত আদর-যতেœ লালন পালন করা হচ্ছে এসব রাসেলস ভাইপারকে। পর্দা টাঙিয়ে বাক্সের ভেতর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার ও শারীরিক যত্ন নিচ্ছেন গবেষকরা। খাবার হিসেবে বেশিরভাগ সময় দেওয়া হচ্ছে ইঁদুর।

২৭ জেলায় রাসেলস ভাইপারের সন্ধান : সাপটির বিচরণস্থল ছিল বাংলাদেশের বরেন্দ্রভূমি অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চল। তবে তা এখন বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টার বলেছে, এখন ২৭টি জেলায় এই সাপের দেখা মিলেছে। এরমধ্যে পদ্মা নদী ও তার শাখা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলোতে চন্দ্রবোড়ার বিস্তার সবচেয়ে বেশি। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলাসহ অন সেন্টারগুলোতে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসায় যথেষ্ট অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে। দ্রুত চিকিৎসা নিলে সাপে কাটা রোগী ৯০ শতাংশ সুস্থ হয়ে থাকে।

সরাসরি বাচ্চা দেয় রাসেলস ভাইপার : বিভিন্ন প্রজাতির সাপের মতো রাসেলস ভাইপার সাপটি বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে ডিম পাড়ে না। সরাসরি বাচ্চা দেয়। এর ফলে প্রজননহার বেশি থাকে এবং সরাসরি বাচ্চা প্রসব করায় বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, একটি স্ত্রী রাসেলস ভাইপার থেকে একবারে ৩০ থেকে ৩৫টি বাচ্চা হয়। তবে সব বাচ্চা বেঁচে থাকে এমন নয়। সব বাচ্চা বেঁচে থাকলে মানুষের চেয়ে সাপই বেশি থাকত।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.