দেরিতে সবজি উৎপাদনের সুফল ভোক্তার পকেটে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চার দফা বন্যায় কৃষি আবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বছর। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যের বাজারে। বিশেষত কয়েক মাস চড়া দামে সবজি খেতে হয়েছে ভোক্তাকে। তবে বন্যার কারণে দেরিতে সবজির আবাদে বাজারে এর দামে প্রভাব পড়েছে। এতে উৎপাদক পর্যায়ে ক্ষতি হলেও প্রকারান্তরে এখন সেই বন্যার সুফলই পাচ্ছেন ভোক্তারা।

বাজারে সবজির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এমনকি ১০ ধরনের সবজির দাম গত বছরেরও নিচে নেমে গেছে। শীত মৌসুমের এসব সবজি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে গত বছরের চেয়ে তিন থেকে ১০ টাকা কমে।

কৃষিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্যার কারণে দেরিতে একসঙ্গে উৎপাদন, শহরের মানুষ গ্রামে গিয়ে কৃষিতে শ্রম দেওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেয়ে অধিক জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। তাতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দামও অনেকটা কমে গেছে।

দেশের বড় পাইকারি সবজির আড়ত কারওয়ান বাজারের যমুনা ভাণ্ডারের মালিক মো. দীপু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সবজির দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। চলতি মাসের শুরুর দিকে শিমের দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি। অথচ গত বছর এই সময় আমরা শিম বিক্রি করেছি ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আবার মানিকগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পেঁপে, গাজর, আলু যে হারে আসছে, তাতে দাম আরো কমতে পারে।’

কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আবাদ বেশি হয়েছে। গ্রামের মানুষ সরকার, এনজিওসহ নানা দিক থেকে অর্থ, বীজ, সারসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা পেয়ে কোনো জমি পতিত রাখেনি। ফলে উৎপাদনও বেশি হয়েছে।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি। ওই সময় আলুর গড় দাম ছিল ২০ টাকা কেজি। গতকাল শুক্রবারের বাজারদর অনুসারে, ঢাকায় আলুর গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে তিন টাকা কম। গত বছর এই সময়ে ঢাকার বাজারে বেগুনের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। বর্তমানে গড় দাম ২৫ টাকা কেজি। কেজিতে তিন টাকা কমে কেনা যাচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, টমেটোর গড় দাম ২৫ টাকা কেজি। গত বছর এই সময় তা ছিল ২৮ টাকা কেজি। গত বছর এ সময় ফুলকপি ছিল ২৪ টাকা পিস। এখন গড়ে প্রতিপিস ফুলকপির দাম ১৫ টাকা। বাঁধাকপি ছিল ১৯ টাকা, এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। গত বছর এ সময় পেঁপে কিনতে হয়েছে গড়ে ২৪ টাকা কেজি। এখন তা নেমেছে ২২ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা মুলা বিক্রি করতে পেরেছেন ১৫ টাকা কেজি, এ বছর ১৩ টাকারও কম। শসা বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩০ টাকা কেজি। গত বছর ছিল ৩৫ টাকা কেজি।

সবজি না হলেও ভোক্তারা কাঁচা মরিচকে সবজি হিসেবেই কেনেন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বন্যার মাসগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম উঠেছিল প্রায় ৩০০ টাকা কেজি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এখন অবশ্য ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বাজারে মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা অর্থাৎ গড়ে সাড়ে ২২ টাকা কেজি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে গড়ে ২৬ টাকা কেজি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সবজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর বন্যা শেষে অনেক উঁচু জমিতে আগাম সবজি চাষ শুরু হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে নিচু জমিতে চাষ শুরু হয়। এবার আর আগাম সবজি চাষ করা যায়নি। চার দফা বন্যা শেষে কিছুটা দেরিতে সব জমিতে একসঙ্গে চাষ শুরু হয়। ফলে এবার মৌসুমের আগে সবজির দাম খুব বেশি ছিল। আর এখন সব সবজি একসঙ্গে আসায় দামও অনেকটা নেমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ১০ থেকে ১২ শতাংশ সবজি বেশি আসবে বলে ধারণা করা যায়।’

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোজাম্মেল হকের মতে, এবার আলুর উৎপাদন কমপক্ষে ১০ লাখ টন বেড়ে এক কোটি টন ছাড়াতে পারে। তাঁদের হিসাবে গত বছর ৯০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছিল।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ ফসলের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট ৯ লাখ হেক্টর জমিতে এক কোটি ৮৮৪ লাখ টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ সালের জন্য ৯ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৯৭ লাখ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে সবজিসহ ১৪ ধরনের কৃষি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে এগুলোর উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো—পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, মসুর ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, টমেটো, কাঁচা পেঁপে, ঢেঁড়স, শিম, বেগুন, কাঁচা মরিচ ও লাউ। উদ্দেশ্য, কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিতেও সুপারিশ করা হয়েছে এসংক্রান্ত নীতিমালার খসড়ায়।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.