সুজানগরে টমেটো চাষ করে সচ্ছলতা ফিরেছে কৃষকের পরিবারে

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার  সুজানগর উপজেলার চরাঞ্চল একসময় জমি অনাবাদি পরে ছিল। সেসব জমিতে এখন শীতকালীন টমেটো (রসালো সবজি) চাষ করে হাজারো কৃষকের ভাগ্য খুলে গেছে। একসময় সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও এখন চর অঞ্চলের কৃষকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। অর্থনৈতিকভাবে হয়েছেন স্বাবলম্বী। দিন এনে দিন খাওয়ার প্রচলন আর নেই এই অঞ্চলের ঘরে ঘরে। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাগরকান্দী ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরে রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, মাঠের পর মাঠ শুধু চর আর চর। ওই সব চরাঞ্চলের জমিতে ধান-পাট তেমন ভালো ফলন হয় না। বলতে গেলে কৃষকদের বেশির ভাগ সময় ওই সব জমিতে ধান-পাট আবাদ করে লোকসান গুনতে হয়। এসব জমিতে ধান, পাট, গম, মাষকলাই আবাদ করে লোকসানে পড়লেও শীতকালীন টমেটো চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। চলতি বছর ৩৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।

এ বছর ছয় শতাধিক কৃষক চরাঞ্চলের জমিতে মিন্টু সুপার, মানিক, রতন, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ৭, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি জাতের টমেটো চাষ করেন। এ ছাড়া রয়েছে নাবি শীত মৌসুমি জাত। অনুকূল আবহাওয়া আর সঠিক সময়ে সার-বিষ প্রয়োগ করায় অধিকাংশ জমিতেই টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।

টমেটোর বিজ রোপণ করে, চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং ২০ থেকে ২৮ দিন ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি করে টমেটো ধরে, প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ৩০০ মণ ফল সংগ্রহ করা যায়। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাক লাভ করেন কৃষক। এসব জাতের টমেটো হাটবাজারেও বেশ কদর বেড়েছে। যার প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এসব টমেটো জেলায় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকার বড় বড় বাজারে বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে এসে প্রতিদিন ভোরে প্রাইকারি দরে কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেন।

খলিলপুর গ্রামের টমেটোচাষি আবদুল সরদার বলেন, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। হাটবাজারে টমেটোর দামও বেশ ভালো। বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। এই টমেটো চাষ করে অনেক ভালো দিন পার করছি। কারণ একসময় এখানে নদী ছিল, মরুভূমির মতো মাঠের পর মাঠ বনে ঢাকা ছিল এই চরাঞ্চল। হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে ছিল। সেসব জমি নিজেরা অনেক কষ্ট করে আবাদের উপযুক্ত করি।

টমেটো তোলার কাজে আসা খলিলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রোখশানা আক্তার বলে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন টমেটো তোলার কাজ করি। গড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়।

মোরালিপুর গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে সার, বীজ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। এতে উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ করি বিঘাপ্রতি। যে কারণে অন্য ফসল আবাদ করা ছেড়ে দিয়ে টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছি।

কাদোয়া এলাকার ভ্যানচালক ইয়াদ আলী শিকদার বলেন, আমরা খেটে খাই, দিন এনে দিন খাই, এই চরাঞ্চলের জমি থেকে কৃষিপণ্য ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে ব্যবসায়ীর আড়তে পৌঁছে দেই। টমেটোর ভ্যান নিয়ে এই রাস্তায় চলতে অনেক কষ্ট হয়। গাড়ি উল্টে পড়ে যায়। সরকার যদি এখান দিয়ে একটা পাকা রাস্তা করে দেয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালোই হয়।
টমেটোচাষির মুখে হাসি

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ময়নুল হক সরকার বলেন, চরাঞ্চলের জমিতে টমেটো চাষ করে ওই অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বেশি টমেটো আবাদ করতে পারে, সে জন্য প্রশিক্ষণসহ উন্নত মানের বীজ, সার-কিটনাশক, কৃষি প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সামনে আরও বেশি সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরও বলেন, খলিলপুর বাজার থেকে চরাঞ্চলের মাঝ দিয়ে যাতায়াত করা সড়কের বেহাল দশা। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রতিনিধি ও এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক করে দেওয়া হবে। যাতে এই অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ফসল সহজেই বাজারজাত করতে পারে।

সূত্র : ঢাকা পোষ্ট

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.