রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করা প্রজ্ঞাপনকে নিন্দা জানিয়ে রাঙ্গামাটির সাবেক সাংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেছেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। পঞ্চদশ সংশোধনিতে সংবিধানের (২৩) ক ধারায় রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্বা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়িক অনন্য বৈশিষ্ট্য পরিমাণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা করিবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র আদিবাসী শব্দটি যাতে ব্যবহার করা না হয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া কোন সংবিধানে নেই। উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্বা ও সম্প্রদায় হিসেবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিকাশের কথা সংবিধানে সামান্য জায়গা দেয়া হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং বাংলাদেশের যেসমস্ত ক্ষুদ্র জাতিসত্বার মধ্যে জাতিগত সংখ্যালঘুদের। তাঁদের বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপরও চালাকি করে উপজাতি শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আদিবাসীরা যাতে তাঁদের পরিচয় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও ভবিষ্যৎ বংশধররা ভূলে যায়। সেজন্য এখন উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে জোর করে বসিয়ে দেয়া বিধিবিধানে কোথাও নেই। ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী জাতির অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষপত্রে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। এই অধিকারের ফলে তাঁরা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ণয় করতে পারে এবং স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে। এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসীদের জোর করে নিজস্ব ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করা, নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রবর্তন, উন্নয়নের অগ্রাধিকার ও কর্মকৌশল নির্ধারণ।
তিনি আরও বলেন, আদিবাসীদের নাগরিকত্ব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, অধিকারের সমতা মর্যাদা, নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও প্রবীণদের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি রয়েছে। তবে রাষ্ট্র চায় যে, এই উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিফলন আমাদের অযৌক্তিক। আদিবাসীদের ভূমি উচ্ছেদ করে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ, কিন্তু সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়নি। এতে আদিবাসী জনগণ মাঠে নেমে প্রতিবাদ করেছে। রাষ্ট্র তাঁর শক্তির জোরে উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
“ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা” এই প্রতিপাদ্যে আনন্দের সাথে উৎসবমূখর পরিবেশে, ক্ষোভ প্রতিবাদ ও নানা দাবির মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে পালিত হয়েছে এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসটি। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার উদ্যোগে দিবসটি আয়োজন করে। এ উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৯টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা। এ সময় পরিবেশিত হয় উদ্বোধনী মনোজ্ঞ ডিসপ্লে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি (অবঃ উপ-সচিব) প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান। এছাড়াও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রাঙ্গামাটি শাখার সভাপতি দীপন কুমার ঘোষ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এ্যাড ভবতোষ দেওয়ান প্রমূখ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবি ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। এ সময় বক্তারা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মৌলিক অধিকারসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি) পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবী জানান।
আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালিটি রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এতে নিজস্ব পোশাকে হাজার হাজার জনতার ঢল নামে। ব্যানার, ফেষ্টুন, প্লেকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদমূখর স্লোগানের জয়জোয়ারে আদিবাসী নারী-পুরুষেরা অংশগ্রহণে মূখরিত হয়ে ওঠে রাঙ্গামাটির রাজপথ।