বিএসটিআইয়ের মান সনদের আওতায় আরও ৪৩ পণ্য
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ভোক্তা সাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে নতুন ৪৩টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মান সনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। পণ্যগুলোর মধ্যে পটেটো চিপস, স্বর্ণ, বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত দুধ, কৃত্রিম স্বাদযুক্ত পানীয়, লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, ক্লিনার্স, ইট, জুতা, টায়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় ৩১ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এসব পণ্য বিএসটিআইয়ের মান সনদ লোগো ছাড়া বিক্রি, বিতরণ এবং বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির তারিখের দুই মাস পর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বিএসটিআই।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি রোধ এবং ভোক্তাদের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করতে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। পণ্যগুলো এখন বিএসটিআইয়ের তত্ত্বাবধানে আসবে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, নতুন ৪৩টি পণ্যসহ বিএসটিআইয়ের মান সনদের আওতায় এসেছে ২২৭ পণ্য। ৪৩ পণ্যের অন্যগুলোর মধ্যে মিশ্রিত দুধ, ভেজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত গুঁড়োদুধ, অতি উচ্চ তাপমাত্রার (ইউএইচটি) দুধ ও ইউএইচটি সমজাতীয় দুধ, স্বাদযুক্ত দুধ, কৃত্রিম স্বাদযুক্ত পানীয়, আইস ললি, সিনথেটিক ভিনেগার, মেহেদি (গুঁড়ো এবং পেস্ট), সিনথেটিক রঙের পেস্ট, ঘরের ব্যবহার্য ডিশওয়াশিং লিকুইড, ফ্লোর লিকুইড ডিটারজেন্টস, লিকুইড টয়লেট ক্লিনার, ডিসপোজেবল রেজার বেস্নডস, নেইলপলিশ, কটন শেয়ার পাওয়ার লুম, কটন লুঙ্গি ক্লথ হ্যান্ডলুম, তাঁতের সুতির লুঙ্গি, অ্যালকোহল মিশ্রিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কংক্রিটের প্যাভিং বস্নক, পস্নাস্টিকের পাইপিং সিস্টেম পলিথিন (পিই-জেনারেল পাইপস এবং ফিটিং), এসি ইলেকট্রনিক ভেন্টিলেটিং ফ্যান ও রেগুলেটরস, কাচের টেবিলওয়্যার, ভাসমান কাচের টায়ার ও রিমস, সেকেন্ডারি ব্যাটারি, পাওয়ার ট্রান্সফর্মার, ফটোভোলটাইক ডিভাইস ও ফটোভোলটাইজ সিস্টেমের জন্য ব্যাটারি চার্জ কন্ট্রোলার।
বিএসটিআই পণ্যের মান সনদ প্রদানের আগে প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছে কি না, তা যাচাই করার জন্য বছরব্যাপী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অভিযান পরিচালনা করে। এতে খোলা বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ভেজাল পণ্য বাজারজাত করে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান টাকার পাহাড় গড়ার হীন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ শিশু খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে তাতে নতুন লেবেল লাগিয়ে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ভোক্তা সাধারণকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নজরদারি, জরিমানা আদায় এবং অতিরিক্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে কোনো পণ্য, সেবা বা প্রক্রিয়ার মান নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো, পণ্যসামগ্রীর মান প্রণয়ন, প্রণীত মানের ভিত্তিতে পণ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা, বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যগুলো পরীক্ষার পর সনদ দেওয়া ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্টিফিকেট দেওয়া। এছাড়া ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রচলন, বাস্তবায়নসহ ওজন ও পরিমাপের সঠিকতা তদারক করে বিএসটিআই। অন্যদিকে মানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব করে সংস্থাটি।
বিএসটিআই যেমন আইএসও মান অনুসরণ করে, তেমনি কোডেক্স নীতিমালাও অনুসরণ করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) ও জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশনের (এফএও) দেওয়া নীতিমালা হলো কোডেক্স। এটি হলো মূলত খাদ্যপণ্য সংশ্লিষ্ট। কোডেক্স হলো এমন একটি নীতিমালা, যা জানায় কোন পণ্যের মান কী ধরনের হওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা মেনে চলা হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ মানও (দেশি মান) নির্ধারণ করে থাকে বিএসটিআই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মান প্রণয়ন কমিটি নামে বিএসটিআইয়ের একটি পৃথক কমিটি আছে। যদি পণ্যের গায়ে লেখা থাকে ‘বিডিএস আইএসও’, তবে বুঝতে হবে আইএসও প্রণীত মানকে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি মান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যদি লেখা থাকে ‘বিডিএস সিএসি’, তবে বুঝতে হবে ডবিস্নউএইচও ও এফএও প্রণীত আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। আর দেশি মানের ক্ষেত্রে লেখা থাকবে শুধু ‘বিডিএস’।
জানতে চাইলে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, মান নিয়ন্ত্রণের মূল কাজটিই হলো ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হন, প্রবঞ্চিত না হন এবং সঠিক জিনিসটি কিনতে পারেন। প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রকৃত সংখ্যা তো অনেক। বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দেখা যায়, বিএসটিআই থেকে মান ঠিক করে নিলেও উৎপাদনের সময় তা ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না। তাই নজরদারি আরও কঠোর করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের এক পরিচালক জানান, বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত যেসব পণ্যের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পরবর্তী নজরদারি ব্যবস্থা চালু আছে। বাজার ও কারখানাভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থাও চালু আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমও চলে। সেক্ষেত্রে কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া থেকে শুরু করে লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ক্যাব প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান আরও বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না, তার সঠিক বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকেও শক্তিশালী করতে হবে। ভোক্তাদের সার্বিক উপকারের দিকে নজর দিতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সক্ষমতাও বাড়ানো প্রয়োজন।