নোবিপ্রবির হলগুলোতে খাবারের দামে বৈষম্যতা; শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
রহমত উল্যাহ, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আবাসিক হলগুলোতে খাবারের দামে বৈষম্য দেখা দিয়েছে। হলভেদে একই আইটেমের খাবার ভিন্ন দামে বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলে ও মেয়েদের মিলিয়ে সর্বমোট পাঁচটি হলের প্রত্যেকটিতে ভিন্ন দামের সাজানো তালিকায় সকাল,দুপুর ও রাতের খাবার বিক্রি করছেন দায়িত্বরত ডাইনিং ম্যানেজাররা। অপরদিকে সাপ্তাহিক ও মাসিক স্পেশাল খাবারের আয়োজন “হল ফিস্টে ” দামের তালিকায়ও বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
ভিন্ন হলের খাবারের দামগুলোর মধ্যে মালেক উকিল হলে মাছের মূল্য ৪৫ টাকা যেখানে বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু ও খাদিজা হলে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, পোল্ট্রি মুরগি মালেক উকিল হলে ৫০ টাকা, যেখানে বঙ্গবন্ধু হলে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, অপরদিকে বঙ্গমাতা ও খাদিজা হলে একই জিনিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।ডিম ও সবজির দাম বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু, খাদিজা হলে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও মালেক উকিল হলে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। অন্যদিকে সালাম হলে মালেক হলের চেয়ে ৫ টাকা কম হলেও আশানুরূপ বিক্রি না থাকায় মাঝে মধ্যে খাবার বিক্রি বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু খাবারের দামেই নয় খাবারের মানেও রয়েছে ভিন্নতা। এক হলের খাবারের মান পাশের পাশের হলের তুলনায় খারাপ হওয়ায় অনেকেই অন্য হল থেকে পার্সেল সংগ্রহ করে থাকেন।এর ফলে সময় অপচয় সহ নানান বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে সালাম হলের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খাবারগুলোতে মানের তুলনায় দাম অত্যন্ত বেশি। চড়া মূল্যে খাবার কিনে খাওয়ায় মাস শেষে আমাদের টানাপোড়েনে পড়তে হয়। অথচ মেয়েদের হলগুলোতে খাবারের দাম তুলনামূলক কম। প্রশাসন থেকে সঠিকভাবে তদারকি এবং ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি ।’
মালেক হলের আরেক শিক্ষার্থী নইমুল হাসান বলেন,‘আমাদের হলের তুলনায় বাইরের টঙ দোকানে খাবারের দাম কম হওয়ায় সেগুলো দিকে ঝুঁকে পড়ছে সবাই। অথচ বাইরে দোকানে অল্প দামে বিক্রি করতে পারলে আমাদের হলে কেনো বেশি দামে খেতে হচ্ছে?
এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বিবি খাদিজা হলের দায়িত্বে থাকা ডাইনিং ম্যানেজার মো: জাহাঙ্গীর মিয়া জানান,আমাদের হলের কর্মচারী সংখ্যা তুলনামূলক কম লাগে কারণ বিকল্প হিসেবে আমি তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়াও আমাদের হলে নাস্তার আইটেম বেশি থাকায় ওদিকে খাবার আইটেমে লস হলেও এটা দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারি। এছাড়াও আমাকে হল ভাড়া সীমিত দিতে হয় এবং বিদ্যুৎ বিল মওকুফ হওয়ায় অন্য হলের চেয়ে কম মূল্য বিক্রি করতে পারছি।’
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক স্পীকার আবদুল মালেক উকিল হল ও ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের দায়িত্বে থাকা ডাইনিং ম্যানেজার মো: ইয়াসিন মিয়া বলেন,‘আমাদের হলের কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের মজুরি বাবদ বড় অংকের টাকা চলে যায়, এছাড়াও আমাদের মুরগির পিস তুলনামূলক বড় বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি হল ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল মিলিয়ে আয়ের অনুপাতে ব্যয়ের খাত বেশি হওয়ায় দামের পার্থক্য হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
সালাম হলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এখানে বিক্রি অনেক কম হয় এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নিজেরা রান্না করার কারণে অভ্যন্তরের পরিবেশ নোংরা থাকায় খাবার বিক্রিতে ঝামেলা পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।’
খাবার দামের বৈষম্যের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, হলগুলোতে খাবার দামে বৈষম্য রয়েছে যে এটা আগে জানা ছিল না। আমরা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, ছাত্র হলে খাবার দাম ছাত্রী হলের চেয়ে বেশি হবে কেন। মালেক হলের বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে হল প্রশাসনকে বলব। এছাড়া হল গুলোর দামের সার্বিক বিষয়ে খোজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন উপাচার্য।