গুলিস্তানের একসময়ের ‘পরিত্যক্ত স্থান’ এখন ব্যস্ত বিনোদনকেন্দ্র
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গুলিস্তান এবং রাষ্ট্রপতির বাসভবনের মধ্যেখানে ফাঁকা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা দীর্ঘদিন ‘পরিত্যক্ত‘ অবস্থায় পড়ে ছিল। কিছুদিন আগেও ছিল ভবঘুরেদের আড্ডাস্থল। জায়গাটিতে মানুষ মলমূত্রও ত্যাগ করতো। ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হওয়া সেই জায়গাটিতে গড়ে উঠেছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান পাক। ভেতরটা সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলনায়। পুকুরসহ এই পার্কে এখন প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে কিছুটা সময় কাটাতে দর্শনার্থীদের বেশ সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের আনন্দ আর কোলাহলে মুখরিত পার্কটি। পার্কের ভেতরে কেউ ভিড় করছে পুকুরে প্যাডেল বোট চালাতে ও কেউ আবার ভিড় করছেন বিভিন্ন রাইড ও খেলনার দোকানের সামনে। অনেকে আবার বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটছেন পার্কের ভেতরে। আর তাতেই গমগম করছে পুরো পার্ক। আছে খাবারের দোকানও।
পার্ক পরিচালনাকারীরা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক পার্কটির উন্নয়ন কাজ করার পর এটি এখন দর্শনার্থীদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শুক্রবারের কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করে এ পার্কে।
তারা বলছেন, আশেপাশের ওয়ারী, নারিন্দা, টিকাটুলিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু কিশোর ও অভিভাবকরা ছুটে আসেন একটু অবসর সময় কাটাতে। পার্কে চারপাশেই প্রবেশ পথ আছে। প্রতি দর্শনার্থীকে পার্কে ঢুকতে প্রবেশ ফি দিতে হয় ১০ টাকা করে। গুলিস্তানের এ পার্কটিতে রয়েছে শিশুদের জন্য প্যাডেল বোট, পানির বল, নাগরদোলা, টয় ট্রেন, ভূতের বাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের রাইড। এসব রাইডের জন্য দিতে হয় ৩০-৫০ টাকা করে।
পার্কে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে শিশু মো. সাবিত। কেমন লাগছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘পার্কে এসে ঘুরলাম। পুকুরে নেমে বোট চালাইছি। খুব ভালো লেগেছে।’ তার মা সাবিনা বেগম বলেন, ‘ওয়ারী থেকে বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। মূলত বিকালে তাদের একটু খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই আসা। সে এখানে আসার পর বেশ খুশি। আগে এখানে আসার মতো পরিবেশ ছিল না। এখন অনেকে আসে, তাই আসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটা জিনিস ভালো যে নারী ও শিশুরা এখানে টয়লেট ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া ভেতরের পরিবেশটাও ভালো হয়েছে।’
এ পার্কে ঘুরতে আসা আদুরী ইসলাম, ‘পার্কে খুব ভালো লাগে। বাবার সঙ্গে নাগরদোলায় চড়েছি। খুব মজা লাগছে।’ এ পার্কটি রাইড পরিচালনাকারী চান মিয়া বলেন, ‘বেলা ২টা থেকে রাইড চালু করছে। অনেক বাচ্চারা রাইডে ওঠে। পানির উপরে বোতল আকারের দুইটা বল আছে। একটার ভেতর চারজন করে উঠে ওরা গড়াগড়ি খেলে আর বল পানির মধ্যে ঘুরতে থাকে। আমি ১০ মিনিটের জন্য বাচ্চাদের পানির বলে উঠাই, ৫০ টাকা নেই।’
টিকাটুলি থেকে ছেলে হাসিব ও দোলাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি অভিযোগ করেন পার্কের ভেতরে রাইডগুলো ব্যবহার করতে বেশি খরচ করতে হয়। তিনি বলেন, ‘ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আসতে মজাই লাগে কারণ অনেক শিশু এখানে আসে। কিন্তু পার্কে ঢুকতে লাগে ১০ টাকা, চার জনের ৪০ টাকা। আবার প্রতিটি রাইড ব্যবহার করতে নেয় ৩০-৫০ টাকা। আমাদের মতো পরিবারের শিশুদের জন্যে এটা অনেক বেশি। একটু খেলাধুলা করতেই ২০০-৩০০ টাকা চলে যায়।’ তিনি রাইড ব্যবহারের মূল্য কমানোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) মো. খায়রুল বাকের বলেন, ‘এ পার্কে একসময় ভবঘুরেরা থাকতো। মানুষ প্রস্রাব করতো। এখানে যাতে মানুষ আসতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা এটির উন্নয়ন কাজ করেছি। মানুষকে আমরা সর্বাধিক সুবিধা দিয়ে পার্কমুখী করার চেষ্টা করেছি।’
তিনি জানান, উন্নয়ন কাজের মধ্যে পার্কটির একটি ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার, হাঁটার রাস্তা নির্মাণ, ফুলের গাছ রোপণ, পুকুরের পাড় বাঁধাইসহ সৌন্দর্যবর্ধন ও সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে।